‘ইত্যাদি’ ব্রিটিশ উপনিবেশিকতার বিবর্তিত অধ্যায়

হানিফ সংকেত
হানিফ সংকেত  © ফাইল ফটো

তৎকালীন ভারতবর্ষে পাশ্চাত্যের আধিপত্য ও উপনিবেশিকতা পাকাপোক্ত করার জন্য ব্রিটিশরা দাতব্য বা মিশনারি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সুপরিকল্পিত অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। উদ্দেশ্য- একটি সাদা চামড়ার পাশ্চাত্যের ব্রিটিশরা কত দয়ালু ও মহান সেটা প্রমাণ করা! বিপরীতে ভারতীয়রা কত কাঙ্গাল ও করুণা ভিক্ষা চাইতে ভালবাসে! যা প্রকারান্তরে ভারতের উপর ব্রিটিশদের আধিপত্য, শোষণ, নির্যাতনে সহায়ক শক্তি হিসাবে ভূমিকা রেখেছে এবং এখনও ভারতবর্ষে সেই উপনিবেশিকতার প্রভাব বজায় আছে। সেই প্রচারে ভূমিকা রেখেছে হানিফ সংকেত ও তার ইত্যাদি।

অথচ সমগ্র বাংলাদেশে অগণিত চিকিৎসক বিনামূল্যে বা কম মূল্যে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা করে। এমনকি অব্যবস্থাপনার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসককে জরুরি, বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা লাগাতার ডিউটি করতে হয়। তাদের বিষয়ে কোন প্রচার নাই। চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিজ্ঞান। রোগীর রোগ সনাক্ত না করে চিকিৎসা করতে হলে দাতব্য/ চ্যারিটি চিকিৎসালয়ের নামে এ প্রতারণা সম্ভব। অন্যথায় পরিপূর্ণ চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

অবকাঠামো, জনবল, প্রযুক্তি, উপকরণ ও ওষুধপত্র সরবরাহের আয়োজন বিশাল বাজেটের বিষয়। হয়- এ চিকিৎসা ব্যয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আসতে হবে নতুবা রোগীদের ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে অথবা ধনাঢ্য কোন ব্যক্তির অর্থের যোগান থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়াত চিকিৎসক ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত চিকিৎসক দাতব্যর নামে কি চিকিৎসা দিয়েছিল এবং এখন কি দাতব্য চিকিৎসা দেবে এবং রোগীর কতটুকু উপকারে আসবে?

ডা. বিধানীয় ধারায় রোগী চেম্বারে প্রবেশের সাথে সাথে তার রোগ সনাক্ত হয়ে যেত- এ ধরণের প্রতারণার সময় এখন নয়। প্রযুক্তির যুগে রোগীরা যতটুকুই বোঝে সে বিষয়ে চিকিৎসকের সাথে তথ্যের আদান প্রদান হয়। অন্যথায়, চিকিৎসা ও চিকিৎসকের উপর আস্থা হারায়। এ ধরণের দাতব্য চিকিৎসা- পাশ্চাত্যের সাদা চামড়াওয়ালাদের অযাচিত করুণা, আধিপত্য ও উপনিবেশিকতার নিষ্ঠুর নির্লজ্জ রূপ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যয় সম্পর্কে যারা ধারণা রাখে তারা শুনে অবাক হবে– একটি, দুটি দাতব্য চিকিৎসালয় ঐ অঞ্চলের জনসংখ্যার চিকিৎসার ভার বইবে কি করে? হানিফ সংকেত ও তার ইত্যাদি কি বুঝে সাদা চামড়াওয়ালাদের দাতব্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ? এ যেন- নীরব উপনিবেশিকতার আরেক রূপ!

হানিফ সংকেত ও তার ইত্যাদির প্রচারে যারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তাদের দু’শ বছরের উপনিবেশিকতার ইতিহাস স্মরণে রাখা উচিত। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও দাতব্যের অপকৌশলের আড়ালে আমাদের মনোজগতে ব্রিটিশ শাসন মেনে নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করেছিল। হানিফ সংকেতের ইত্যাদির প্রচার সে অপকৌশলের বিবর্তিত অধ্যায়। (সংগৃহীত)


সর্বশেষ সংবাদ