প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈষম্য আর কতকাল

  © ফাইল ফটো

একটা স্কুলের প্রাণ সেই স্কুলের শিক্ষার্থী। আর সেই শিক্ষার্থীদের দেশ গড়ার কারিগর সেই স্কুলের শিক্ষক বিশেষ করে সহকারী শিক্ষক। কিন্তু পরিতাপের সাথে বলতে হয় সবচেয়ে বৈষম্যর শিকার হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের। অল্প কিছুদিন চাকরি করার সুবিধার্থে অনেক সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের সাথে মেলামেশা করা সুযোগ হয়েছে। তাদের সাথে আন্তরিকভাবে চলাফেরা করার চেষ্টা করেছি। তারা যে পরিশ্রম করে সেই অনুপাতে তারা যোগ্য সম্মানটুকু পায় না।

তাই আমার জানামতে অনেক মেধাবী শিক্ষকেরা এই পেশায় আনন্দ খুঁজে পায় না । যার কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের সেই শিক্ষকদের কাছ থেকে উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়।  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ১২ তম গ্রেডে বেতন পান আর সহকারী শিক্ষকগণ ১৫ তম গ্রেডে বেতন পান।

আমি মনে করি, প্রধান শিক্ষকদের আরো উপরে নেওয়া যায়। এতে তাদের মর্যাদা আরো বাড়বে। অন্য দিকে সহকারী শিক্ষকদের ১১ তম গ্রেডে আনলে বৈষম্য কিছুট দূর হবে বলে আশা করি। সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে অনেক দিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে, কিন্তু তাদের আন্দোলন হালে পানি পায়নি। যৌক্তিক আন্দোলনে সরকারের উচ্চমহল সুদৃষ্টি দিলে বেতন বৈষম্য দূর করা কঠিন কাজ নয়। তাই সরকারের আশু পদক্ষেপ আশা করছি যাতে সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলন বাদ দিয়ে শ্রেণী কক্ষে ফিরে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর কাজে মনযোগ দিতে পারে।

বর্তমানে এইচএসসি পাস নার্সদের ৯ম গ্রেডে বেতন দেওয়া হয়। এটি অবশ্যই সরকার প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু স্নাতক পাস সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৫তম। এটা কেমন বৈষম্য? দেশ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের সাথে সাথে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। একজন সহকারী শিক্ষক যে বেতন পান তা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টের। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। তাই অন্য কোনো কাজ করে উপার্জন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বেতন বৃদ্ধি করা অতীব জরুরী। বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি মর্যাদাও কিছূটা বৃদ্ধি পাবে মনে হয়।

অন্যদিকে কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা এইচএসসি পাস করে বেতন পান ১০ম গ্রেডে। এতে কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো কষ্ট। কষ্ট একটাই। যারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে ছোট ছোট শিশুদের মানুষ করছেন তাদের বেলায় বেতন বৈষম্য কেন? বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নন-ক্যাডার এ নিয়োগ দিলেই তারা ১০ম গ্রেডে বেতন পায়। একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা বেতন পান ১২ তম গ্রেডে। একই পরীক্ষা দিয়েও কেন তাদের ১০ গ্রেড এ বেতন দেওয়া হয় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেরা শুধু নামে দ্বিতীয় শ্রেণী কিন্তু তার কোন উপকারিতা প্রধান শিক্ষকেরা পায় কি না আমার জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো এমন বৈষম্য হতো না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে বেতন বৈষম্য দূর করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু উচ্চমহলের একটু সুদৃষ্টি দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণে সকল স্তরে বৈষম্য দূর করা জরুরী। গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন যতদ্রুত সম্ভব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করে শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেতন-বৈষম্য দূর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে আসুন।

লেখক: প্রধান শিক্ষক (৩৬ তম বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ প্রাপ্ত)
১০১ নং পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ সদর।


সর্বশেষ সংবাদ