উচ্চশিক্ষাকে বাঁচাবে কে?

  © টিডিসি ফটো

কিছুদিন আগে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরে শিক্ষক নিয়োগের বিশাল এক সার্কুলার হয়। সমাজকর্ম বিভাগে তিনজন প্রভাষক নিবে। আমি নগদ ৬০০ টাকা ব্যাংকড্রাফট করে আবেদন করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই ভাইভার জন্য ডাকবে। সিদ্ধান্ত নিলাম ভাইভা দিতে যাবোনা।

কারণ, ভিসি ‘মহোদয়’ সার্কুলারের আগেই তিনজনকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। এটাকে বলে এডহকে নিয়োগ--বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে অনার্স বা মাস্টার্স-এর রেসাল্ট না হলেও চলে, একটা ডিগ্রি কোন ভাবেই পাশ থাকলেই হয়, থীসিস বা ডিপার্ট্মেন্টে পজিশন কোনটিরই দরকার নেই। পরবর্তীতে সার্কুলার হলে কোন যোগ্যতা ছাড়া, নিয়োগের শর্ত পূরণ না করেও বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ কমিটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপারিশ করবে।

সমাজকর্ম বিভাগে যাদেরকে সার্কুলার ছাড়া নিয়োগ দিয়েছে তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাদের রেজাল্টের বিষয়ে বলতে চাইনা। ইকোনমিক্সসহ আরো কয়েকটি বিভাগে যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থী।

পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের রঙের রাজনীতি কাদের স্বার্থে?

গত এক দশক থেকে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এডহকে নিয়োগ দেয়া হয়না। এডহকে নিয়োগ দেয়ার এই নিয়মকে পুনরুজ্জীবিত করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাবেক ভিসি ‘আল্লামা’ ওয়াহেদুজ্জামান ‘মুজাদ্দেদিয়া’ সাহেব। তারই একান্ত মুরীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ‘মহোদয়’।

পৃথিবীর একটা দেশ দেখান যেখানে এভাবে সার্কুলার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া যায়। বিসিএস ক্যাডার হতে কত পরিশ্রম করতে হয় তা যারা বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। কিন্তু এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এদেশের উচ্চশিক্ষাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে সেটা একবার ভাবুন।

পড়ুন: জার্মানিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ৩৪ শতাংশ

আমার এই স্ট্যাটাস পড়ে কেউ যদি আমার জন্য কষ্ট অনুভব করেন তাহলে আমি তার জন্য সহানুভূতি প্রদর্শন করলাম। আমি আমার কথা বলিনি, আমি এদেশের উচ্চশিক্ষার কথা বলেছি, উচ্চশিক্ষাকে বাঁচানোর কথা বলেছি। আমি নিজেকে একজন একাডেমিশিয়ান ভাবি--সেটা শিক্ষক হলেও, না হলেও। আমি চাকরি চাইতে আসিনি, আমি আজীবন এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবো-- সেটা এদেশের জন্য, এদেশের উচ্চশিক্ষাকে দূর্নীতিবাজদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য, এদেশের শিক্ষক সম্প্রদায়ের সম্মান রক্ষার জন্য।

(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া)

লেখক: ফ্রিল্যান্স কলামিস্ট


সর্বশেষ সংবাদ