‘ভিসি পদের মোড়কে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিনিধি’

  © টিডিসি ফটো

আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি সেসকল সংস্থার প্রতি যারা কিনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিং করে থাকে। এই নিন্দা জানিয়ে নিন্দিত করার যে চেষ্টা আমাদের চলমান তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো সুকৌশলে র‍্যাংকিং থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়ার জন্যে যোগ্যতার মানদণ্ড হিসেবে রাজনীতি, তেলবাজি, মারামারি এবং বিশেষ করে বিতর্কিত ভিসির সংখ্যাকে এড়িয়ে চলা।

অথচ ‘বিতর্কিত ভিসি’ বিষয়টি আমলে নিলে নিশ্চিন্তে র‍্যাংকিংয়ে চ্যাম্পিয়ন হবে বাংলাদেশের বিশ্বদ্যিালয়গুলো যা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

সম্প্রতি আবরার হত্যাকান্ডের পরে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা চলছে। তবে আমার কাছে মনে হয় ছাত্র রাজনীতি বিষয়টি বাদ দিয়ে আপাতত আলোচনা হওয়া উচিত ‘শিক্ষক রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করা কেন হবেনা তা নিয়ে।

বাংলাদেশে যখন যে দলই ক্ষমতায় এসেছেন সে দলই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ভিসি পদ’ মোড়কে নিয়োগ পেয়েছে দলীয় পরিচয়ে রাজনৈতিক প্রতিনিধি। লাল-নীল-সাদা যে নামেই মোড়ক দেওয়া হোক না কেনো তা যে নির্দিষ্ট রাজনৈতিকদলেরই অন্য একটা প্রতিচ্ছবি তা তো সবারই জানা।

মাঝে মাঝেই প্রশ্ন জাগে যেহেতু বিষয়টা সবাই জানে বুঝে তাহলে এত লুকোচুরি না করে আওয়ামী শিক্ষক লীগ, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক দল এই নামগুলো খোলাখুলি ভাবে ব্যবহার করলেই তো হয়।

এই শিক্ষক রাজনীতির কারণেই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর প্রতি আলাদা আলাদা মনোভাব দেখা গিয়েছে বহুবার। যা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আরো বেশি পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে ঢাবি, রাবি, জাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বারবার হামলা হলেও সেই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়গণ ছিলেন চুপচাপ। বরং উনারা উনাদের বিভিন্ন তত্ত্ব যেমন বাশিতত্ত্ব, সমুচাতত্ত্ব, অভিভাবকতত্ত্ব নিয়েই বেশি সরগরম ছিলেন।

সম্প্রতি ঢাবিতে নতুন ভিসি নিয়োগ নিয়ে আমরা দেখেছি ঢাবির বর্তমান ভিসিকে নিয়ে কারচুপিরও অভিযোগ এসেছে যা অত্যন্ত লজ্জার। সরকারকে খুশি করতে শিক্ষার্থীদের জঙ্গি বলাও বাদ দেননি তিনি। এমন নোংরা রাজনীতি যদি ঢাবিতে হয় তাহলে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি হয় তা সহজেই অনুমেয়।

এছাড়াও কেউ বিদেশ ভ্রমণে বছর পার করেছেন, কেউ উন্নয়নের টাকা পকেটে ভরেছেন, কেউ শিক্ষার্থীদের বাশি উপাধি দিয়েছেন আবার কেউবা ফেসবুক পোস্টের জের ধরে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটিয়েছেন। অথচ ওনাদের ব্যস্ত থাকার কথা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি, সর্বোপরি পড়ালেখার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা নিয়ে।

এছাড়াও যারা সম্ভাব্য ‘হবু ভিসির’ তালিকায় আছেন তারাও ব্যস্ত আছেন রাজনৈতিক লবিং বৃদ্ধিতে। সম্প্রতি আমরা দেখেছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের পদত্যাগের আন্দোলন করা হয়। অবাক করার ব্যাপার হলো ওনারা কেউই রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ না হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন। অথচ এই বিষয়গুলো নিয়ে কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতিরই কথা বলারই কথা। সবার দ্বারস্থ হওয়ার কথা ছিলো রাষ্ট্রপতি বরাবর।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ও স্ক্রিপ্ট একই ছিলো। তখনও দেখা গিয়েছিলো শিবির-ছাত্রদল বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তান্ডব চালিয়েছিল আর ভিসিগণ চোখ বন্ধ করে তাতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধ কোন পদক্ষেপ না নিয়ে। সব আমলেই সাময়িক বহিষ্কার নামক প্রহসনের মাধ্যমে অন্যায়কারীদের বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন নিয়োগের সময় রাজনৈতিক যোগ্যতা, সরকারের প্রতি কতটা অনুগত এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পরে সরকারি ছাত্রসংগঠনকে কতটুকু সাপোর্ট দিবেন তার উপর ভিত্তি করেই নিয়োগ দেওয়া হয়। আমি অনেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি। তারা কেউই বলতে পারেনি আসলে শিক্ষক রাজনীতি কতটুকু দরকারি আমাদের জন্যে।

এভাবে চলতে থাকলে একসময় হয়তো সত্যিই সত্যিই আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হবে যে। আমরা ছাত্রসমাজ কি আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংয়ে শিক্ষার পরিবেশের উন্নয়নে আন্দোলন করবো নাকি সহজ পথটা বেছে নিবো। আর সেই সহজ পথ হলো বিতর্কিত ভিসির সংখ্যাকে মানদণ্ড ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাংকিং করার দাবিতে আন্দোলন করা।

লেখক: আহবায়ক, বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ