নানান সংকটের একটাই সমাধান

  © ফাইল ফটো

চারদিকে নানান সংকট আর সমস্যা। প্রতিদিনই গণমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যস্ত নানান কিছুর সমাধান খুঁজতে। কেউ কোনো সমাধান দিলেও অনেকেরই পছন্দ হয় না। কেউ আবরার হত্যার বিচার চাইলে, অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ‘সনি হত্যার সময় কই ছিলেন’ বলে। আবার কেউ সনি হত্যার কথা বললে উল্টো দিকের লোক ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, ‘শিবের গীত’ বলে।

কেউ বলছেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেন। কেউ বলছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে আত্মঘাতী। কেউ বলছেন, আগে বড়দের রাজনীতি ঠিক করেন। কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীই ভরসা। আবার কেউ লিখছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে অসহায়, সেখানে সমাধান সম্ভব না’। কেউ বলছেন, পুরো সমাজটাই পঁচে গেছে।

সবাই পাগলের মতো উত্তরণ চাচ্ছেন। সমাধান হাতরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু নিজের জায়গায় কেউ ছাড় দিচ্ছেন না। আসলে ছাড় দেবার সাহস পাচ্ছেন না। অন্যরা ছাড় দেবে না, পিছিয়ে যেতে হবে, এই ভয়ে সবাই স্রোতেই থাকছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে সমাধানটা কি? আমিই বা এত বক বক করছি কেন? কারণ সমাধানটা খুব চেনা। এই রাস্তায় হাঁটার সিদ্ধান্তও খুব পুরাতন। কিন্তু কেন যেন সেই রাস্তায় আমরা হাঁটছি খুব ধীরে। তাই সমাধান এর পথে যাবার বদলে প্যাঁচ-ঘোচে পড়ে তাল হারাচ্ছি।

বলছি, সেটা কি.... তার আগে-

ভাবেন তো, এই যে বুয়েটে আবরার হত্যা হল, এতে কার লাভ? যে ছেলেগুলো মারল, ওদের? এখন তো আর লাভ নেই। একটা লাভ ছিল; ওরা যদি বিচারের মুখোমুখি না হতো, ওরা ত্রাসের নাম হয়ে দাঁড়াতো। এবং ওরা এটা হতে চেয়েওছিল, কারণ ওরা জেনেছিল, এই বদনাম ওদের একদিন বড় পরিচয় হয়ে দাঁড়াবে।

কারণ ছাত্ররাজনীতির বাংলাদেশি ট্রেন্ড হল, ডমিনেট করা এবং ত্রাস তৈরি করা, নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। এই নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে হলের নিয়ন্ত্রণ, সিট নিয়ন্ত্রণ।

আচ্ছা যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২ কোটি হতো, ছাত্র রাজনীতিতে এই সিট বাণিজ্য কি চলতো?

আমরা ক্রমগত হটছি উল্টা পথে। আমরা বাচ্চাদের ভাল মানুষ বানাচ্ছি না, গবেষক বানানো তো দূরের কথা। তাই ভারতের অভিজিৎ জেল খেটে আজ নোবেলবিজয়ী, আর ফেসবুক ট্রলে নোবেল নেই বলে, আমরা বঞ্চিত।

আমাদের সন্তানদের আমরা বানাচ্ছি জব মার্কেটের শক্ত ক্যান্ডিডেট হিসেবে। তাঁর ছোট বেলার দৌড় প্রতিযোগিতার সার্টিফিকেটও বাবা-মা জমাচ্ছেন পড়ে যদি কাজে লাগে এই সুপ্ত বাসনায়। প্রতিটা জায়গায় আমরা বাচ্চাকে রেসে নামিয়ে দিচ্ছি। ভাল স্কুল, ভাল কলেজ, ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে, ভাল সাবজেক্ট, ভাল সিজিপিএ, ভাল চাকরি। এই করে করে আমাদের বাচ্চারা দানব হচ্ছে। আমাদের বাচ্চারা অমানুষ বা যান্ত্রিক মানুষ বা ঊন-মানুষ হয়ে যাচ্ছে। আর আমরা সমাজ সংসারের আর সরকার রাষ্ট্রের দোষ দিচ্ছি প্রতিদিন।

আবার এই দৌড় থেকে বাবা-মা সন্তানকে বাহিরে রাখার সাহসও পাচ্ছে না, পাছে এই মার্কেটে বাচ্চাটা আনফিট হয়ে যায়। তাহলে উপায়? আচ্ছা যদি বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২ কোটি হত, জব মার্কেট এর অবস্থা কি হতো? এই ইঁদুর দৌড় কি থাকতো এতটা?

যদি জনসংখ্যা ২ কোটি হতো, লিবিয়া উপকূলে কি বাংলাদেশি শ্রমিকের লাশ পাওয়া যেত? কিংবা মালয়েশিয়াতে আমাদের হাজারো শ্রমিকদের এরকম পলাতক জীবন থাকতো? সৌদি আরবে প্রতিদিন ধর্ষিত হতে আমাদের নারীরা যেত?

যদি বাংলাদেশে জনসংখ্যা ২ কোটি হতো, তাহলে রানা প্লজায় ১০০০+ শ্রমিক এক দিনে মারা যেত না। যদি জনসংখ্যা ২ কোটি হতো এত সহজে পেট্রোল বোমা তৈরির লোক পাওয়া যেত না। যদি জনসংখ্যা ২ কোটি হতো, টাকার অভাবে অগুনতি শিশু মাদ্রাসায় পড়তে বাধ্য হতো না। ঝড়ে পড়া শিশুর দায়িত্ব অনায়াসে রাষ্ট্র নিতে পারতো। যদি জনসংখ্যা দুই কোটি হতো, অনায়াসে আমি বলতে পারি, এই যানজট, হকার ভরা ফুটপাথ, লোকাল বাসের ঘিঞ্জি দাঁড়ানো থাকতো না। থাকতো না পুলিশের ঘুষের উৎপাত, জনসভার নামে রাস্তা দখল। পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানির জন্য বেকার ছেলে মিলতো না।

হ্যাঁ জন সংখ্যা ২ কোটি হলে আমরা অনায়াসে একটা শান্তির জীবনে চলে আসতাম। এখন কথা হচ্ছে, আমরা কি জনসংখ্যা কমাতে কজ করছি না? করছি, এতই ধীর সে পদক্ষেপ যে এখনো জনসংখ্যা বাড়ছেই প্রতিদিন। গ্রামে গ্রামে ক্লিনিক, সচেতনতা, হেন তেন সবই তো হচ্ছে, তাহলে? তাহলে এখন একটাই উপায়, যে কঠোর হতে হবে।। কেমন কঠোর, বলছি।

বাংলাদেশের এখন সময় হয়েছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন আইন করার।
* যে আইনের মেয়াদ হবে আপাতত ১০০ বছর।
* যে আইন কার্যকর হবে পাস হবার অন্তত ২০/২৫ বছর পর থেকে পরবর্তী ১০০ বছর।
* যে আইন বলবে, একটির বেশি সন্তান রাষ্ট্র অনুৎসাহিত করছে।
* যে আইন বলবে, যাদের সন্তান একটি, তাঁরা রাষ্ট্রীয় সব জায়গায় সুবিধা পাবে, অগ্রাধিকার পাবে।
* যে আইন বলবে বাবা-মার একটিই মাত্র সন্তান হলে সেই সন্তান, ভাল স্কুলে ভর্তি থেকে ভাল চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবে।
* যে আইন বলবে, দুটি সন্তানের ক্ষেত্রে সন্তানরা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবে না।
* যে আইন বলবে, দুটির বেশি সন্তান নিলে, সেই পরিবার শিশুকে রাষ্ট্রের কোনো স্কুলে ভর্তি করাতে পারবে না।
* যে আইন বলবে, যদি প্রথম সন্তান জমজ হয়, বা প্রথমবারেই একসাথে একাধিক সন্তান হয়, এবং এর পরে আর সন্তান বাবা-মা না নেন, তাহলে সেই সন্তানেরা একটি সন্তানের পরিবারের মতো বিশেষ সুবিধা পাবে।

এই আইন করা হবে একশ বছরের জন্য, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। আবার এই আইন কার্যকর করতে হবে পাশ করার ২০/২৫ বছর পর, থেকে যেন আগেই বেশি সন্তান নেয়া পরিবার খাবি না খায়।

এরকম আইন কার্যকর হলে, পরবর্তী ৫০ বছরেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। কারণ বাবা-মা দুইজন মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রাখবে সংখ্যায় একজনকে।

দুইজন মারা গেলে থাকবে, তাঁদের এক সন্তান, সে বিয়ে করবে অন্য দুইজনের একক সন্তানকে। অর্থাৎ চারজন বাবা-মায়ের মিলে দুই সন্তানের বিয়ে। তাঁদের একটি বাচ্চা৷ সব মিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেল ৩ জনকে। সেই চার বাবা-মা এর মৃত্যুর পর জনসংখ্যা রিপ্লেস হল, তিনজনে। এভাবেই কমতে থাকবে। ১০০ বছর পর সেটা ৪/৫ কোটিতে নেমে আসবে।

বিশাল জনসংখ্যা কি আদৌ সম্পদ:

আমাদের দেশের বিশাল জনসংখ্যাকে জায়েজ করতে পড়ানো হয়, ম্যানপাওয়ার এর সুবিধা তত্ত্ব। যাতে বলা হয়, আমাদের যুবকরা আমাদের সম্পদ। আসলেই কি তাই? এই যুবকেরা কেমন সম্পদ যারা বাজারে ভাল চাকরির জন্য, অমানবিক শিক্ষা কাঠামোতে পড়ে অসম্পূর্ণ মানুষ হচ্ছে। যারা বিদেশে গিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। যারা মাদক আর মাস্তানিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। যাদের বেকারত্ব পুঁজি করে হারামী রাজনীতির পসার বাড়ে। তাই রাষ্ট্রের উচিত এই ভুল কনসেপ্ট বাড়তে না দেয়া।

লেখক: সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ