দাদার প্রতি শুভেচ্ছাই যথেষ্ঠ, প্রত্যাশায় লাভ নেই

  © টিডিসি ফটো

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সভাপতির পদটা আইসিসি সভাপতির চেয়েও কখনো কখনো শক্তিশালী। ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এর তুলনা খুঁজতে পারেন; জাতিসংঘ মহাসচিবের চেয়ে কার্যত যার ক্ষমতা বেশি।

এটা আমাদের জন্য বিরাট আনন্দের একটা ব্যাপার যে, আমাদের একজন প্রতিবেশী এবং চেনাজানা মানুষ সেই বিশাল ক্ষমতাধর পদটাতে বসতে যাচ্ছে। এই উপলক্ষে বাংলাদেশীদের কিছুটা আনন্দ বা প্রত্যাশা তৈরি হওয়াতে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু আসলেই কী এসব প্রত্যাশার ভিত্তি আছে? কিছুটা তো আছেই।

একজন সভাপতি চাইলে বাংলাদেশের সাথে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক আমূল বদলে ফেলতে পারেন, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সৌরভেরই পূর্বসুরী জগমোহন ডালমিয়া। ভারতীয় ক্রিকেট মহলের অনেক আপত্তি স্বত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সাথে অভাবনীয় এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। অনেকে আশা করছেন, সৌরভও বুঝি এরকম কিছু করবেন।

এই আশার পেছনে যুক্তি আছে, কিন্তু বাস্তবতা নেই।

বাংলাদেশের যারা সৌরভের প্রতি প্রত্যাশা নিয়ে বসে আছেন, তারা সৌরভকেও চেনেন না; এবার তার সভাপতি হওয়ার পেছনের গল্পও জানেন না।

সৌরভ ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত স্বার্থমুখী একজন মানুষ। বাংলাদেশের প্রতি তার বিন্দুমাত্র বাড়তি মায়া কোনোকালে ছিলো না; এখনও হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি কোনোক্রমেই ডালমিয়ার মতো মানুষ নন।

দ্বিতীয়ত সৌরভ একজন হামিদ কারজাই হবেন। এবার তাকে পুতুল প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট রাজনীতির দুই অংশ। ভারতীয় ক্রিকেটে শক্তিশালী দুটি অংশ পরষ্পরের মুখোমুখি লড়াইয়ে লিপ্ত ছিলো: এন শ্রীনিবাসন বাহিনী বনাম অনুরাগ ঠাকুর বাহিনী। পারলে তারা পরষ্পরের বিপক্ষে তলোয়ার নিয়ে লড়াই করতো। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, ভারতীয় বোর্ডকে এখন চলতে হচ্ছে আদালতের নির্দেশে। সেখানে এই দুই বাহিনীর কারো পাত্তা নেই।

দুই বাহিনীর দুই সেনাপতিসহ প্রধাণ সৈন্যরা কেউ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্বাচনই করতে পারেননি। এ অবস্থায় তারা যুদ্ধ জারি রাখলে একটা ভয় ছিলো, আদালতের নমনীয়তা আছে এরকম তৃতীয় পক্ষ, মানে শশাঙ্ক মনোহর সমর্থিত গোষ্ঠী ক্ষমতায় চলে আসতে পারতো।

এই অবস্থায় হাত মেলালো ঠাকুর ও শ্রীনিবাসন গোষ্ঠী। দিনভর তারা মিটিং করে বাটোয়ারা করে নিলো বোর্ডের সবগুলো পদ। গোলমাল লাগলো প্রেসিডেন্ট নিয়ে। তখন অচলাবস্থা কাটাতে দুই পক্ষেরই কথা শুনবে এমন একজন নবীশকে বেছে নিলো তারা। আর সেই লোকটি হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি; দাদা।

এই সৌরভের পক্ষে আর যাই হোক দাদাগিরি বা লং অফ দিয়ে ছক্কা এই বোর্ডে মারা সম্ভব হবে না। সৌরভ ঘটনাচক্রে কাল থেকে বাংলাদেশপ্রেমী হয়ে গেলেও ঠাকুর ও শ্রীনিবাসন দুই গোষ্ঠীই না চাইলে একটাও বাড়তি সিরিজ আয়োজনের ক্ষমতা তার থাকবে না।

অতএব এই দাদার প্রতি শুভেচ্ছা জানানোই যথেষ্ঠ। প্রত্যাশা জানিয়ে লাভ নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখক।  ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

 


সর্বশেষ সংবাদ