অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ থাকে?

শরিফুল ইসলাম
শরিফুল ইসলাম  © ফাইল ফটো

শনিবার সকাল থেকে হলে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। শুক্রবার রাত থেকেই হলে খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সব প্রবেশদ্বার ও যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককে ১৪৪ ধারা জারি ও পুলিশ সুপারকে ক্যাম্পাসে পৃুলিশ মোতায়নের অনুরোধ করেছে।

এসব ‘বন্ধ’ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো অন্ধ সাঁজতে চেয়েছে কিন্ত প্রলয় বন্ধ করতে পারেনি। আন্দোলন চলছে।

আজ সকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে। কিন্তু এ অহিংস আন্দোলনেও সহিংস হামলা চালানো হয়। ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের উপরও হামলা চালানো হয়। এসব ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

প্রশ্ন হলো, এমন বর্বরতার শেষ কোথায়? ভুলে যাবেন না, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ থাকেনা।

আজ সকালে মোবাইলের এলার্মে না, ঘুম থেকে জেগেছিলাম মোবাইলে আমার এক শিক্ষার্থীর আর্তনাদের শব্দ শুনে। ফোনে সে জানায়, সকালে ক্যাম্পাসে তার বন্ধুদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। তাদের কেউ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, কেউ আত্মরক্ষার্থে পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে, কেউ বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছে। স্থানীয় মিডিয়াগুলোকেও ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ওদের পাশে এখন কথা বলার কেউ নেই! ভীষণ বিভীষিকাময় অবস্থা! বশেমুরবিপ্রবি ‘তে কী হচ্ছে এসব!

এসব বর্ণনা করতে গিয়ে আমার ওই শিক্ষার্থীর কন্ঠভারী হয়ে আসছিলো। কান্না থামানোর চেষ্টা করে সে বললো, “স্যার, আমার বন্ধুরা ফোন করে সকলের সহযোগিতা চাইছে। বন্ধুরা কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘আমরা এখানে পড়তে এসেছি, মরতে আসি নাই।’ তাদেরকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। কাউকে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকেই রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। ওদেরকে বাঁচান”

এসময় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ইনবক্সে হামলার প্রমাণস্বরুপ ছবি পাঠিয়েছে। এসব মর্মান্তিক ছবি দেখে নিজেকে সামলানো অনেক কঠিন! যে কেউ দেখলে বেদনায় বুক ভারী হয়ে ওঠবে! গণমাধ্যমের খবরে জানলাম, হামলার সময় শিক্ষার্থীদের কান্না দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি স্বয়ং বশেমুরবিপ্রবির সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির! তিনি ব্যথিত চিত্তে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

যাই হোক! ভিসি পদত্যাগ করবেন না। কারণ, তিনি শিক্ষার্থীদের ১৪ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন (মনে নেয়নি)! শিক্ষার্থীরা বলছে, এসব দাবি মানা হয়েছে আন্দোলন থামানোর জন্যে। পূর্বে এমন প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি মানেননি। তাই এ আন্দোলন। এখন শুধুই এক দফা এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ! শিক্ষার্থীরা মনে করে, ভিসির পদত্যাগ ছাড়া এসব দাবির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ভিসির পদত্যাগের যৌক্তিকতা নিয়ে আর কিছু বলার নাই! ১৪ দফা ভালোভাবে দেখুন। ওই দাবিগুলোই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তিনি বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও শহীদ মিনার নির্মাণে গড়িমসি করেছেন, হলে অতিরিক্ত সিট ভাড়া নিয়েছেন, স্বাধীন মত প্রকাশে বাঁধা দিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি!

তারপরেও একজন ভিসি কী করে এখনো স্বপদে বহাল থাকেন! লজ্জা থাকলে, ন্যুনতম নৈতিকতা-বিবেকবোধ থাকলে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সাথে সাথেই তিনি পদত্যাগ করতেন। উল্টো তিনি হামলা-মামলার পথ বেছে নিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ‘বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’! জাতির জনকের পূণ্যভুমিতে বেহায়া ভিসি যে কলঙ্কের ছাপ রেখে চলেছেন, তা মোছার কি কেউ নেই!

লেখক: শিক্ষক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ