সমাজের শৃঙ্খল ভেঙ্গে দাও: এটাই বেহায়াপনার পাসওয়ার্ড

রহমাতুল্লাহ রফিক
রহমাতুল্লাহ রফিক

Break social taboo বাক্যটির বাংলা অর্থ দাঁড়ায়- ‘সমাজের শৃঙ্খল ভেঙ্গে দাও।’ এই ধরনের কিছু আকর্ষণীয়-মুখরোচক স্লোগান জ্বলজ্বল করতে দেখতে পাবেন তথাকথিত কিছু সংস্থার ব্যানারে। কিংবা বিজ্ঞাপনের আদলে রঙ্গিন টিভির ঝকঝকে পর্দায়।

এদের একমাত্র কাজ হচ্ছে- সদ্য কৈশরে পা'দেওয়া আমাদের লজ্জাশীল বোনদের টেনে-হেঁচড়ে বেহায়াপনার কদর্যতায় নিক্ষেপ করা। ‘তোমার পিরিয়ডের কথা চিৎকার করে জানিয়ে দাও সবাইকে। শেয়ার কর বাবার সাথে; গল্প কর ভাইয়ের সাথে। আর নয় লজ্জা, আর নয় গোপনীয়তা; ভেঙ্গে দাও সমাজের অলঙ্ঘিত শৃঙ্খল।’ বাহ্! কত সুন্দর উদ্দীপক বাণীসমূহ। করতালি দিতে ইচ্ছে করছে।

কিন্তু আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে কিঞ্চিৎ কৌতুহল বিরাজমান; পিরিয়ডের কথা কেন বাপ-ভাইদের সাথে শেয়ার করতে হবে! কেন স্যানিটারি প্যাড রাস্তার মানুষদের দেখিয়ে দেখিয়ে আনতে হবে!

এখন যদি উক্ত সংস্থার মোটিভেশন থেকে ছেলেরা মোটিভেট হয়ে নিজেদের স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা মা-বোন'দের সাথে শেয়ার করা শুরু করে দেয়। তাহলে ব্যাপারটা কেমন বিদঘুটে লাগবে একটু চিন্তা করুন তো?

আমি বলছি না যৌন শিক্ষার দরকার নেই। একটা মেয়ে তার মা-বোন, দাদী-নানীদের নিকট নিজের প্রাকৃতিক বিষয়াদি ব্যক্ত করার মাধ্যমে আরো ভালোভাবে প্রয়োজনীয় শিক্ষা রপ্ত করতে পারে। কারন, তাদেরও অনুরূপ অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়েই চলতে হয়েছে। কিন্তু বক্তাদের ভাবখানা এমন যে, স্যানিটারি প্যাডের মধ্যেই যেন নারীর স্বাধীনতা লুকিয়ে আছে। প্যাড প্রদর্শন না করলে বুঝি নারীরা লাঞ্ছিত আর পদদলিত'ই রয়ে যাবে। আমি নিশ্চিত বলতে পারি "এটা রং নাম্বার।"

একজন বিবাহিত পুরুষও কনডম ক্রয়ের সময় গোপনীয়তা রক্ষা করে। এমন নয় যে, কনডম প্রদর্শন না করলে তার পুরুষত্ব লোপ পেয়ে যাবে। আর এই গোপনীয়তার মাঝেই রয়েছে এক অপরূপ সৌন্দর্য।

পৃথিবীর কতক বিধান রয়েছে, যা সৃষ্টিলগ্ন থেকেই খানিকটা রাখঢাক বজায় রেখে চলে আসছে। আশা করি পরিমানের তারতম্য হলেও মহাপ্রলয়োবধি এ ধারা অক্ষুণ্ণ থাকবে।যৌনসংক্রান্ত বিষয়গুলি ঠিক অনুরূপই। চার-দেয়ালের মধ্যকার প্রথা যখন খোলা ময়দানে পালিত হবে, তখন মানুষ আর চতুষ্পদ প্রাণীর মাঝে কোন পার্থক্য থাকবেনা।

সুতরাং যে বিষয় যতটুকু প্রকাশ করা শ্রেয়, স্থানভেদে ততটুকুই কাম্য। বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি কোনটিই ফলপ্রসূ নয়। তবে বৈদেশিক প্রোপাগান্ডার শিকার হয়ে, এনজিও সংস্থা কিংবা প্রচার মিডিয়া যদি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ভেঙ্গে দিতে চায়। যেমনটা আমরা তথাকথিত সভ্যসমাজ ইউরোপ-অামেরিকা প্রভৃতি দেশসমূহে দেখতে পাই। তাহলে এদের সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি নিরপেক্ষভাবে এর প্রতিকারে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।