বিসিএস শুধু স্বপ্ন নয়, সাধনাও বটে

সোহেল রানা
সোহেল রানা  © টিডিসি ফটো

সদ্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। অচেনা শহর, অচেনা পরিবেশ।বিভিন্ন জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা, কোচিং এর সময়ের অসুস্থতা আমাকে ক্লান্ত করে ফেলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রোমাঞ্চকর জাগতে পা রাখা, নতুন বন্ধু-বান্ধব পাবার পর কেন জানি আমি স্থির হতে পারছিলাম না। হতে পারে উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা মেটাতে না পেরে নিজের মাঝে এক ধরণের মানসিক অবসাদ তৈরি হয়েছিল। সুন্দর জায়গাতে থেকেও নিজের স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই সপ্তাহ খানেক ক্লাস করার পরই বাড়ির পথ ধরেছিলাম এই ভেবে যে মা-বাবার কাছে গেলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে।

বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্টান্ডে এসেছি । বরিশাল এক্সপ্রেস নামে রাজবাড়ী গামী একটা বাসে উঠেছি। হঠাৎ করেই ২৫/২৬ বছর বয়সী দুই নারীর বাসে আগমন। আমি একটু আগেই এসেছিলাম। বাসে ছাত্রী সাধারণও বেশি নেই। সিটে বসে তাঁদের দিকে একটু কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছি। দেখি দুজনের চোখেই জল। একজন আরেকজন কে বিদায় জানাতে এসেছে। এমন ভাবে এক সময় কান্না জুরে দিল যেন সদ্য তাদের আপন কেউ মারা গিয়েছে। সময়ের স্রোতে তাদের কান্না কিছুটা থামলো। বাসে যাত্রী সংখ্যাও বাড়তে লাগলো। আলিঙ্গন শেষে দেখি এক আপুর সীট আমার পাশের সিটেই পড়েছে। বাস ছাড়বে ছাড়বে এমন সময় অন্য আপু বাস থেকে নেমে গিয়ে ফলমূল-জুস কিনে তাকে দিয়ে গেলেন। নামার সময় আবারো দুজনের চোখে জল।

আমি সাধারণ যাত্রাপথে কারো সাথে তেমন কথা বার্তা বলি না। সেদিন নিজের মৌনতা ভেঙ্গে আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপু, ‘আপনারা কি দুই বোন? আপনাদের কেউ কি মারা গেছে?’ তখন তিনি বললেন, আমরা আপন দুই বোন নই। যাকে দেখলে তিনি আমার রুমমেট। তবে শুধু রুমমেটেই নয়, আমার আপন বোনের থেকেও অনেক বড় কিছু। আমরা দুই জন ঢাকা ইডেন কলেজে পড়তাম। আমি ইসলামের ইতিহাসে অনার্স মাস্টার্স করেছি । দুইজন একই হোস্টেলের একই রুমে থাকতাম। এক সাথে পড়ালেখা করতাম। তখন আমার কৌতূহলটা আরো বেড়ে গেলো। আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে আপনারা বরিশালে কেন?

তখন আপু তাঁর গল্প বলতে শুরু করলেন। বললেন ওই আপু শিক্ষা ক্যাডারে বরিশাল বিএম কলেজে যোগ দিয়েছে তিনমাস হলো। এই তিনমাস তিনিও হোস্টেল ছেড়ে ওই আপুর সাথে রয়েছেন। বরিশাল শহরের একটা বাসায় দুজনে থাকেন। নিজেরা রান্না-বান্না করে খান। দিনে আপু তাঁর ডিউটিতে যান, আর উনি সারাদিন পড়ালেখা করেন। বিসিএসের প্রস্তুতি নেন। নিজের ইংরেজিতে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্যই তিনি এই আপুর সাথে বরিশাল চলে এসেছেন। বললেন ৩৭ তম বিসিএসে তিনি প্রিলিতে টিকেছিলেন, কিন্তু ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে রিটেনে আর টেকা হয়নি।

বলছিলেন কিভাবে মাসের পর পর মাস বিসিএসের জন্য কষ্ট করে পড়ালেখা করছেন। রাত নেই, দিন নেই চোখে ঘুম নেই পড়ালেখা করেই চলেছেন। এইযে তিনি বরিশালে আছেন তিনমাস কখনো মা-বাবাকেও বলেননি তিনি শুধু পড়ালেখার জন্য হোস্টেল ছেড়ে বরিশাল চলে এসেছেন। তিনি আশাবাদী একদিন তিনিও সফল হবেন। বলতেছিলেন তিনি পুলিশ ক্যাডার হতে চান। নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত করতে চান। আপুর গল্প শুনতে শুনতে চলে এসেছি গন্তব্য। আপু বাড়ি ছিল বালিয়াকান্দী উপজেলার নাড়ুয়া ইউনিয়নে। আমার বাড়ি আশের উপজেলায়। আপু বিদায় নিয়ে আপুর পথ ধরলো। আমিও আমার পথ ধরলাম। সেদিন অনেক কথাবার্তার ভীরে শুধু নামটাই জানা হয়নি।

সেদিনই বুঝেছিলাম আসলে বিসিএস শুধু স্বপ্ন নয়, বিসিএস একটা সাধনা। এমনি ভাবেই হয়তো প্রত্যেক বিসিএস ক্যাডারদের সফলতার গল্পের পিছনে লুকিয়ে আছে হাজারো গল্প। আছে নিদারুণ পরিশ্রমের কাহিনী।


সর্বশেষ সংবাদ