শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে কী করতে পারি?

  © টিডিসি ফটো

ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি মাদ্রাসার শিক্ষকদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণ অত্যাধিক হারে বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আবাসিক মাদ্রাসাগুলোতে এই ঘৃণ্য কাজটি একেরপর এক ঘটেই চলেছে। সম্প্রতি একজন মাদ্রাসার হুজুর কর্তৃক ১২ শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি জনমনে খুব হতাশার জন্ম দিয়েছে। সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, এসব শিক্ষকদের ভিতরে এতো ইসলামের জ্ঞান থাকার পরেও কেন তারা নিজেকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারছে না। এগুলো দেখে আমার মনে হচ্ছে, ধর্ষক কোন প্রতিষ্ঠান বা ধর্ম ভেদে হয় না কারণ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ধর্ষকের সংখ্যা কম নয়। ধর্ষকের একটাই পরিচয় সে ধর্ষক, সে পাপিষ্ঠ, সে বিকৃতমস্তিষ্কের অধিকারী।

শুধু ধর্ষণই নয়, আাবাসিক মাদ্রাসাগুলোতে বেড়ে গিয়ে বলাৎকার বা সমকামিতার মত জঘন্য কাজ। আমরা প্রায়ই জানতে পারি মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রকে বলাৎকার করা হয়েছে। এ ধরণের ঘৃণ্য ঘটনা জেনে মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রতি আমাদের ঘৃণার উদ্রেক হয়। কতিপয় কুলাঙ্গারের কারণে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও হুজুরদের প্রতি আমাদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।

বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোর প্রতি মানুষের এই নেতিবাচক ধারণা চরম ঘৃণ্য পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই সরকার ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নেওয়া উচিত কার্যকরী পদক্ষেপ। সকল শিক্ষানুরাগী এবং মাদ্রাসার পরিচালকবৃন্দ, স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনারা আবাসিক স্কুল/ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, হেফজখানা, মক্তব, এতিমখানা, কেজি স্কুল/ মাদ্রাসা এমনকি মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লিখিত বিষয়ে বিশেষ কঠোরতা প্রদর্শন করুন। বিশেষভাবে মহিলা মাদ্রাসা / হেফজখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপকতর পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করুন।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে জোরালো ভাবে বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ রইলো:

১.সিসিটিভি স্থাপন ছাড়া কোনভাবেই আবাসিক কিংবা অনাবাসিক প্রতিষ্ঠান চালাবেন না। সিসিটিভি স্থাপন এখন অনেক অল্প খরচেই করা সম্ভব।
২. প্রতিষ্ঠানে বসে কেউ কম্পিউটার, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইলে অশ্লিল ছবি, ভিডিও ক্লিপ দেখে কিনা পর্যবেক্ষণ করুন।
৩. কাউকে ছাত্রীদের ছবি/ ভিডিও শেয়ারিং বা এডিটিং করতে দেখা মাত্র কঠোর ভাবে বিষয়টা হ্যান্ডেল করুন।
৪. ছাত্র/ শিক্ষক সবার জন্য খেলাধুলা/ সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করুন।
৫. কোনক্রমেই বিবাহিত ছাত্র/ শিক্ষক পরিবার ছাড়া যেন দিনের পর দিন মাদ্রাসাতে না থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় শেষে তাদেরকে বাধ্যতামূলক বাড়িতে ঘুরে আসার ব্যবস্থা করুন।
৬. ছাত্রীদের পড়ানো কিংবা তদারকির দায়িত্বে ব্যাচেলর কিংবা পরিবার ছাড়া থাকেন এমন বিবাহিত কাউকে দিবেন না। প্রয়োজনে তদারকির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের অতীত চরিত্র সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করুন ও আবাসিক ছাত্রীদের তদারকি করুন।
৭. সম্ভব হলে মহিলা শিক্ষকদের দ্বারা মাদ্রাসার ছাত্রী শাখা আলাদা ভবনে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।
৮. মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার মনিটর সবার দৃষ্টিগোচরে আসে এমন স্থানে রাখুন।
৯. উল্লিখিত বিষয়টি সকল ছাত্র/ ছাত্রীদের সামনে ওপেন আলোচনা করুন। এতে ভিক্টিম এই বিষয় টা নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে।
১০. নিয়মিত কাউন্সেলিং করুন। শিক্ষার্থী প্রতিবাদী করে তুলুন। কোন প্রকার যৌন হয়রানির শিকার হলে তারা যেন সাথে সাথে প্রতিবাদ করে, সেটি ভালভাবে কাউন্সিলিং করুন।

সর্বপরি, উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরও প্রয়োজনীয় বিষয় খুবই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করুন। যে মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির জন্য, সেটি করতে গিয়ে যাতে সমাজে ফিতনা- ফ্যাসাদ সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ গুরুত্বের সাথে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য সকল মাদ্রাসার শিক্ষকবৃন্দ, পরিচালনা কমিটি, নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ করছি।


সর্বশেষ সংবাদ