রমজানেই কেন বেশি ইবাদাত করতে হবে?

  © টিডিসি ফটো

মানুষকে সৃজন করে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার এই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে জানিয়ে দিলেন, ‘আমি জিন এবং মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছি আমার ইবাদত করার জন্য।’ [সূরা যারিয়াত: ৫৬] এছাড়া হাদীসে এসেছে, এ মাসের সুন্নত বা নফল ইবাদত বাকি অন্য মাস গুলোর ফরজের সমান এবং এ মাসের একটি ফরজ ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরজের সমান মর্যাদা রাখে।

অর্থাৎ মানুষের পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য হল সে তার প্রতিপালকের ইবাদাত বা বন্দনা করবে। এই ইবাদত দু’রকমের। একটি আবশ্যকীয় পালনীয় বা ফরয, অপরটি অতিরিক্ত বা নফল। আবশ্যকীয় পালনীয় ইবাদতের পাশাপাশি আমরা যে অতিরিক্তি কাজ বা ইবাদত করি সেটাই নফল ইবাদত।

ঈমানী জিন্দেগীতে সারাবছর নফল ইবাদতের গুরুত্ব রয়েছে। তবে রমজান মাসে এর গুরুত্ব আলাদা। কেননা রমজান মাসে একটি নফল আদায়ে অন্য মাসের একটি ফরযের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ফরয ইবাদত ছাড়া সুন্নত বা নফল ইবাদত করবে, তাকে এর বিনিময়ে অন্যান্য সময়ের ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে কোন ফরয আদায় করবে সে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরয ইবাদতের সমান সওয়াব লাভ করবে।’ [বায়হাকী]

রমজান মাসে নফল ইবাদত বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ বোনাস। রমজানের সমাপ্তিতে এই বোনাসেরও সমাপ্তি ঘটে। আবার, নফল ইবাদত ফরজের পরিপূরক। যেমন রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার বান্দাদের কাছ থেকে সর্বপ্রথম ফরজ নামাজের হিসাব নিবেন। যদি ফরজ নামাজ পরিপূর্ণ ও ঠিক থাকে তাহলে সে সফলকাম হবে এবং মুক্তি পাবে। আর যদি ফরজ নামাজে কোন ঘাটতি দেখা যায় তখন ফেরেস্তাদের বলা হবে, দেখো তো আমার বান্দার কোন নফল নামাজ আছে কি না? তার যদি নফল নামাজ থেকে থাকে তবে তা দিয়ে আমার বান্দার ফরজের ঘাটতি পূরণ কর। অতঃপর অন্যান্য আমল গুলো এভাবে গ্রহণ করা হবে।’ [তিরমিযী]

‘নফল ইবাদত করলে ফরজের সমান সওয়াব’ এই সুযোগটা রমজান মাসের জন্য খাস বা নির্দিষ্ট। এটা আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ একটি উপহার। অল্প ইবাদতে অধিক সওয়াব লাভের সুবর্ণ সুযোগ। তাছাড়া, নফল ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, (আল্লাহ বলেন) ‘নফল ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আমার এতো নিকটবর্তী হয় যে, আমি তাকে ভালোবাসতে শুরু করি। আমি যখন ভালোবাসি তখন আমি তার শোনার কান হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে শোনে, আমি তার হাত হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে কাজ করে, আমি তার পা হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে চলাচল করে।’

যদি আমার কাছে বান্দা কোনকিছু চায় আমি তখনই তাকে তা দান করি। যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে আশ্রয় দিয়ে থাকি।’ [বোখারি]

রমজানে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আমরা কিছু নফল ইবাদত করতে পারি যেমন, দান-সাদকা, এসব বিপদাপদ থেকে মানুষকে দূর করে। রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়তে পারি। রাসূল (সা.) বলেছেন, ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট নামায হল রাতের তাহাজ্জুদ নামায। [মুসলিম] এছাড়া নিয়ম করে এশরাক, চাশত, আওয়াবিনের নামাজ আদায় করা যেতে পারে। নফল হজ্জ্ব-ওমরা আদায় করতে পারি।

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে। এটা অন্যতম শ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত। সময় থাকলে আরো কিছু নফল আদায় করা যেতে পারে। আগের সময়ের কোন ফরজ নামাজ বাকি থাকলে তা খুঁজে খুঁজে আদায় করা যেতে পারে। এছাড়া সালাতুস শোকর, জাওয়াল, তাহিয়াতুল অজু, সফর, মাতার, নাউম সাকরাতুল মউত, দুখুলুল মাসজিদ ইত্যাদির নামাজ।

তবে নফল ইবাদত আদায়ে কিছু বিষয়ে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন, ইবাদতের নামে লোক দেখানো, আমলের অহংকার করা, অন্যকে কষ্ট দিয়ে বা অন্যের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে ইবাদত করা, নিজের পরিবারের ব্যাপারে বেখায়াল থাকা ইত্যাদি।

পরিশেষে বলব, মহান আল্লাহ আমাদের ফরজের পাশাপাশি নফলের গুরুত্ব অনুধাবন করে অধিক পরিমাণ নফল ইবাদত করার তৌফিক দান করুন৷

লেখক: নুরুল হাসান মুরাদ
শিক্ষার্থী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
দশম ব্যাচ, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ


সর্বশেষ সংবাদ