রমজান মাস: সৃষ্টিকর্তা থেকে ক্ষমার এক অপূর্ব সুযোগ

  © টিডিসি ফটো

রমজান মাস মুসলিম জাতির জন্য আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘ ১১ মাস পরপর এ মহিমাময় মাস আসে মুসলিমের দ্বারে দ্বারে রহমত, বরকত, মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমার সওগাত নিয়ে। এ মহিমাময় মাস মুসলিমের জন্য তার সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে ক্ষমা পাবার এক অপূর্ব সুযোগ এনে দেয়।

রমজান শব্দটি আরবি শব্দ ‘রমদুন’ থেকে আগত। যার অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া, পুড়িয়ে দেয়া বা নিঃশেষ করে দেয়া। বস্তুত: রমযান একজন মুসলিমের জীবনের সকল পাপ-পঙ্কিলতা ও অপবিত্রতা দূর করে তাকে খাঁটি মুত্তাকীতে পরিণত করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য রমজানের রোযাকে ফরয করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার।’

রমজান মাস আসে মুসলিম জাতির জন্য ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ নিয়ে। এ মহিমাময় মাসের সকল কাজ যেমন তারাবীহ, সাহরী, ইফতার, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতসহ সবগুলো আমলই গুনাহ মাফের মাধ্যম। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রোযা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে তারাবীহ নামায আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’

রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘যখন কোন ব্যক্তি রমজানের প্রথম রোজা রাখে, তখন তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এভাবে রমজান মাসের শেষদিন পর্যন্ত চলতে থাকে। তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা সকালের নামায থেকে শুরু করে তাদের পর্দার অন্তরালে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্ষমার জন্য দোয়া করতে থাকে।’ (কানযুল উম্মাহ, কিতাবুস সাওম)

রমজান মাসের সঠিক ইবাদতের মাধ্যমে মু’মিন ব্যক্তি এমনভাবে পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে, যেমন সে ছিল তার মায়ের প্রসবের সময় গুনাহমুক্ত।

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ঈমান ও ইখলাসের সাথে সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইবাদত করে, সে নিজ গুনাহ থেকে এভাবে পবিত্র হয়ে যায়, যেভাবে সেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম লাভ করেছিল।’ (সুনানে নাসাঈ, কিতাবুস সাওম)

হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে বান্দাহ আল্লাহর পথে একদিন রোযা রাখে, আল্লাহ তার চেহারা থেকে আগুনকে দূরে সরিয়ে রাখেন।’ (সহীহ মুসলিম)

রমজান মাসে গুনাহ মাফের বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, অথচ গুনাহ হতে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মত হতভাগা আর কেউ নেই।’

রমজান মাস ক্ষমা লাভের সত্যিই এক অপূর্ব সুযোগ। কেননা এ মাসের নফল নামাজ ও অন্যান্য মাসের ফরজের সমান, দান-সদকা, কুরআন তেলাওয়াত, তাসবীহ, তাহলীলসহ সব আমলগুলোর সওয়াব ৭-৭০০ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

রমজান মাসের আমলগুলো যদি নিরেট আল্লাহর জন্যই হয়, তাহলে আল্লাহ রোজাদারদেরকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দিবেন কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন, ‘আর তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা আশ শুয়ারা: ১৫)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে রমজান মাসের আমলগুলো সঠিকভাবে আদায় করে গুনাহ মুক্ত হওয়ার তাওফিক দিন, আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক: মো. মাহমুদুল হাসান
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
১০ম ব্যাচ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ