বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিল হচ্ছে

শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থী  © ফাইল ছবি

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হলে জাতীয় মেধাক্রমে ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার বাধ্যবাধকতা দিয়েছিল স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে ভর্তির সেই শর্ত শিথিল করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অধিদপ্তর বলছে, আসন খালি থাকা সাপেক্ষে ভর্তি পরীক্ষায় পাসকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো যাবে।

জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মোট আসন রয়েছে ৬ হাজার ১২৮টি। এর মধ্যে দুই হাজার আসন বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি আসনগুলোতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধাতালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পাবেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অমেধাবীদের ভর্তির সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এটি বন্ধ করতে এবার বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে হলে মেধাক্রম ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এমন নিয়মে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আপত্তি জানায়।

বিপিএমসি বলছে, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাক্রম ৩৪ হাজারের মধ্যে থাকার শর্ত ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত। এতে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চায় না। এর ফলে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিএমসি’র দাবি করা বিষয়টি বাস্তব সম্মত হওয়ায় ভর্তির শর্ত শিথিল করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ৪ অথবা ৫ জুন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হোক এটি আমরা চাই না। সেজন্য আমরা ভর্তির শর্ত শিথিলের বিষয়ে ভাবছি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর যদি আমরা দেখি ৩৪ হাজার মেধাক্রমের মধ্যে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না তখন আমরা ভর্তি পরীক্ষায় পাসকৃতদের ভর্তির সুযোগ দেব।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা)  ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জানানো যাবে।

শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ও বিপিএমসিএ’র নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলছেন, আমরা চাই মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হোক। আমরা শুরু থেকেই সকল অনিয়মের বিপক্ষে ছিলাম; দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করবে তাদের সাথে বিপিএমসিএ থাকবে না।

বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি অটোমেশন পদ্ধতিতে

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। অনিয়ম ও অর্থের বিনিময়ে অমেধাবীদের ভর্তির সুযোগ বন্ধে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০। পূর্বে ৪০ নম্বর পেলেই বেসরকারি মেডিকেল ভর্তির যোগ্য বলে বিবেচনা করা হত। তবে এবার সেই পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে কেবল ৪০ পেলেই হবে না, মেধাক্রমে থাকতে হবে ৩৪ হাজারের মধ্যে। 

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আপনাদের (সাংবাদিক) অভিযোগ ছিল টাকার বিনিময়ে কম নম্বরধারীরা প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়। সেই অভিযোগ এবার থাকবে না। ভর্তি হবে অটোমেশন প্রক্রিয়ায়।

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১২ মার্চ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেলে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি রয়েছে। আর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন ৬ হাজার ১৬৮ জন।


সর্বশেষ সংবাদ