বিএসএমএমইউতে চাকরি পেয়েছেন উপাচার্যের ১১ স্বজন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদের ছেলে তানভীরের স্ত্রী ফারহানা খানম একজন চিকিৎসক। তিনি গত ১ জানুয়ারি বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগে চাকরি পেয়েছেন। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, উপাচার্যের এ রকম অন্তত ১১ জন আত্মীয় চাকরি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১ জনের মধ্যে ৭ জন নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক শারফুদ্দিন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর। বাকি চারজনের দুজন নিয়োগ পান অধ্যাপক শারফুদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য থাকার সময়। আর দুজন যখন নিয়োগ পান তখন তিনি আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিএসএমএমইউ শাখার সভাপতি ছিলেন।

বিএসএমএমইউর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানান, উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিনের স্ত্রী নাফিজা আহমেদের ভাইয়ের ছেলে সাব্বির হোসেন ২০২২ সালের এপ্রিলে শাখা কর্মকর্তা (সেকশন অফিসার) হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিচালকের (পরিদর্শন) কার্যালয়ে চাকরি পান। তার (উপাচার্যের স্ত্রী) আরও দুজন স্বজন সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে ও ল্যাবরেটরি মেডিসিনের কম্পিউটার বিভাগে চাকরি পেয়েছেন।

আরও পড়ুন: মেয়াদ শেষ করাই একমাত্র সফলতা, হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ

উপাচার্যের আত্মীয় শারমিন আখতারকে ২০২২ সালে আগস্টে চাকরি দেওয়া হয়েছে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগে। এর আগে অধ্যাপক শারফুদ্দিনের ভাগনে এস এম বাহালুল পিয়াস আহমেদ ২০১৭ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন ডেসপাস শাখায়, যখন তিনি (অধ্যাপক শারফুদ্দিন) বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য ছিলেন।

একই সময়ে একই শাখায় চাকরি পান তার (উপাচার্য) আরেক আত্মীয় মো. মিজানুর রহমান। উপাচার্যের এই আমলে তার ভাগনে বাহালুলের চাচাতো বোন ফারজানা ববি চাকরি পেয়েছেন বিএসএমএমইউর লাইব্রেরিতে।

উপাচার্যের বড় ছেলে তাজবির আহমেদ বিএসএমএমইউর চক্ষু বিভাগে পরামর্শক হিসেবে চাকরি পান ২০১৩ সালে, যেটি অধ্যাপক শারফুদ্দিনের নিজের বিভাগ। তার এক ভাগনে লিয়াকত হোসেন ফকির ২০১৩ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএলএসএস পদে নিয়োগ পান। সেই সময় অধ্যাপক শারফুদ্দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলেন।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কাণ্ড

উপাচার্যের স্বজনদের নিয়োগের বিষয়ে অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, সংখ্যাটি এমন হওয়ার কথা নয়। নিয়োগের এই তালিকায় উপাচার্যের স্ত্রীর স্বজনও রয়েছেন কয়েকজন। উপাচার্য বলেন, তিনি দুজনের কথা জানেন। সবাই যোগ্যতাবলে চাকরি পেয়েছেন বলে দাবি তার।

অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ২০২১ সালের ২৯ মার্চ বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি প্রতিষ্ঠানটির চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার নিয়োগের আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তখনও এ নিয়োগ নিয়ে ছিলো বিস্তর অভিযোগ। 

পরে শারফুদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পেয়েই ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার মেয়াদের শেষ দিনে তড়িঘড়ি করে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির ৫৫৪ জন কর্মচারীদের নিয়োগ ও নিয়মিতকরণ বাতিলের আদেশ দেন। এ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে ৩৬ জন শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া রিভিউ করা হবে বলে সিন্ডিকেটে সিন্ধান্ত হয়।


সর্বশেষ সংবাদ