সবচেয়ে বেশি বিপদে কিন্ডারগার্টেন ও ইবতেদায়ি শিক্ষকরা

করোনা সংকটে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিন্ডারগার্টেন ও ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন-জীবিকার অনিশ্চিয়তা। এই কঠিন সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে তাঁরা। কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের ফান্ড থেকে মার্চ মাসের বেতন দিলেও এপ্রিল মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস অনেকটাই অনিশ্চিত। এই সময়ে বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনও বন্ধ হওয়ায় সংকট আরো বেড়েছে।

প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক বেতনের বাইরে বেসরকারি শিক্ষকদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল প্রাইভেট-টিউশন। কিন্তু করোনার প্রভাবে সেই প্রাইভেটও বন্ধ। আর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ব্যাপারে খুব বেশি সাড়া দিচ্ছেন না অভিভাবকরা। এমনকি সরকারের কাছে বেসরকারি শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন প্রণোদনার আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তেমন ভূমিকা নেই। কেউ যদি আমাদের কাছে আবেদন করেন তাহলে নিয়মানুযায়ী আমরা সেগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছয় লাখ শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান ভাড়াবাড়িতে চলে। আর শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর এসব প্রতিষ্ঠান শতভাগ নির্ভরশীল। টিউশন ফির টাকায়ই বাড়িভাড়া, নানা ধরনের বিল ও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানরা পড়ালেখা করায় তাঁরা স্কুল বন্ধের সময়ে কেউ বেতন দিতে পারছেন না, আবার কেউ দিতেও চাচ্ছেন না। ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন এসব স্কুলের শিক্ষকরা। এরই মধ্যে কিন্ডারগার্টেনের দুটি সংগঠন পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে প্রণোদনাও চেয়েছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ারা ভূঞা বলেন, ‘অভিভাবকরা টিউশন ফি দিচ্ছেন না, তাই আমরাও শিক্ষকদের বেতন, বাড়িভাড়া দিতে পারছি না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা চেয়েছি। সরকার আমাদের সহায়তা না করলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকবে না।’

এদিকে করোনার মধ্যে করুণ অবস্থায় জীবন যাপন করছেন ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে চার হাজার ৩১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২১ হাজার শিক্ষক থাকলেও বাস্তবে মাদরাসার সংখ্যা অনেক বেশি। এর মধ্যে মাত্র এক হাজার ৫১৯টি মাদরাসার প্রধান শিক্ষকদের ২৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষকদের ২৩০০ টাকা ভাতা দেয় সরকার। তবে চলতি অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ও বরাদ্দ থাকলেও কাজ শেষ করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ সভাপতি এস এম জয়নাল আবেদিন জিহাদী বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের মাদরাসা এমপিওভুক্তির বরাদ্দ থাকলেও তা আটকে আছে। করোনার মধ্যে আমাদের শিক্ষকরা চরম কষ্টে জীবন যাপন করছেন। আর কত দিন বেতন ছাড়া চাকরি করব আমরা? চলতি অর্থবছরের মধ্যেই ইবতেদায়ি মাদরাসা এমপিওভুক্তি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।’

করোনা প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


সর্বশেষ সংবাদ