চড়ের প্রতিশোধ নিতে ছাত্রকে হত্যা করলেন মাদ্রাসা শিক্ষক

আহনাফ হোসেন আদিল
আহনাফ হোসেন আদিল  © সংগৃহীত

গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের তিন বছর বয়সী ছেলে আহনাফ হোসেন আদিলকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। জানা গেছে, বাবার চড়-থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে ওই ছাত্রকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে আটক করেছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার (০১ জানুয়ারি) রাতে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মরাশবাগ এলাকায় মরাশ বাগে জান্নাত নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।

আটকরা হলেন, মাদ্রাসার শিক্ষক হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মো. জুনায়েদ আহমেদ (৩০) ও মসজিদের মোয়াজ্জিন একই এলাকার মো. খাইরুল ইসলাম (২২)।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটির মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দশালিয়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

নিহত আহনাফ হোসেন আদিল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার দশালিয়া গ্রামের মুফতি জুবায়ের আহম্মেদ শাহিনের একমাত্র ছেলে। আদিলের বাবা কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মরাশ বাগে জান্নাত নুরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার অধ্যক্ষ এবং একই মাদ্রাসার মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে পাঁচ বছর ধরে কর্মরত আছেন।

নিহতের বাবা মুফতি জুবায়ের আহম্মেদ শাহিন বলেন, ৩১ ডিসেম্বর মোয়াজ্জিন মো. খাইরুল ইসলামের একটি মোবাইল ফোন চুরি যায়। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হিসেবে চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে দায়িত্ব দেয়। এ ব্যাপারে মাদ্রাসার ছাত্রদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু পরে জানা যায় ওই মোবাইল মাদ্রাসারই শিক্ষক মো. জুনায়েদ আহমেদ চুরি করেছে। বিষয়টা নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং চড়-থাপ্পড় দিই।

তিনি বলেন, এ ঘটনার একদিন পর বুধবার বিকালে আমার ছেলে মাদ্রাসা মাঠে খেলতে যায়। এর পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে মসজিদের মাইকে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়। তারপরও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

বাবা জুবায়ের আহম্মেদ শাহিন জানান, এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে মাদ্রাসার বিভিন্ন কক্ষে খোঁজাখুঁজি শুরু করা হয়। কিন্তু শিক্ষক মো. জুনায়েদ আহমেদ কক্ষের চাবি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় জোরপূর্বক চাবি আদায় করে কক্ষে প্রবেশ করি। এ সময় তার কক্ষের ওয়াল কেবিনের একটি ড্রয়ার থেকে আদিলের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। উপস্থিত সবার সামনে জুনায়েদ এবং খাইরুল খুনের বিষয়টি স্বীকার করে।

মাদ্রাসা কমিটির সহায়তায় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ শিশুটির লাশ উদ্ধার ও ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসা শিক্ষক জুনায়েদ ও মাদ্রাসার মসজিদের মোয়াজ্জিন খাইরুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

নিহত শিশুর বাবা অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার শিক্ষক মো. জুনায়েদ আহমেদ তার ছেলেক গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। তাকে সহযোগিতা করে মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. খাইরুল ইসলাম। প্রায় ২৩ বছর আগে মাদ্রাটি ওই এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। মাদ্রাসায় এতিমসহ ৫৪ জন ছাত্র রয়েছে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি একেএম মিজানুল হক জানান, শিশু আদিল হত্যার ঘটনায় দুজনকে আসামি করে নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন। ওই দুইজন থানায় আটক আছে।


সর্বশেষ সংবাদ