পার্কের জন্য রান্নাঘর গুড়িয়ে দিল ডিএনসিসি, এতিমদের আহাজারি (ভিডিও)

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জামিয়া বাইতুল আমান (মিনার মসজিদ) মাদ্রাসার রান্নার ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। শিশু পার্কের জায়গা উদ্ধার করা জন্য রোববার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ওই রান্নাঘরে মাদ্রাসার প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর খাবার রান্না করা হতো। উচ্ছেদ চলাকালীন চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় ছিল না এতিম শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, মিনার মসজিদের মাদ্রাসাটি ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠার হয়েছে। এরপর থেকে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের খাবার রান্না করার জন্য এই স্থানে রান্না ঘরটি নির্মাণ করা হয়। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) পার্শের শিশু পার্কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আর রোববার পার্কের ভিতরে থাকা মাদ্রাসার রান্না ঘরটি ভেঙে দেয় ডিএনসিসি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে রান্না ঘরটি ভেঙে দেয়ার জন্য উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেয় ডিএনসিসির নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার। তখন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এবং একপর্যায়ে রান্না ঘরটি মাটির সঙ্গে মিশে দেয়া হয়। এইদৃশ্য দেখে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের চোখের পানি আর থামে না। ভারি হয়ে আসে চারপাশের পরিবেশ। দীর্ঘদিনের স্মৃতি বিজড়িত রান্নাঘরটি নিমিষে হারিয়ে গেল।

শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি অনেক জায়গা বেদখল হয়ে পড়ে রয়েছে। কিন্তু এতিম শিক্ষার্থীদের রান্নার ঘরটি কেন দখল করতে হলো আমরা জানি না। তাদের মা-বাবা নেই। এখানে পড়াশোনা করে এবং মাদ্রাসায় থাকে। তাদের জন্য এখানে রান্না করা হয়। এসময় কান্না জড়িত কন্ঠে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, নতুন আরেকটি রান্না ঘর নির্মাণ না করে কেন এটি ভেঙে দেয়া হলো? এখন আমরা কোথায় খাব? এছাড়া কত জায়গা এমনি পড় রয়েছে সেদিকে নজর নাই। শিশু পার্কের জন্য আমাদের রান্নার ঘরটি ভেঙে দিতে হলো। অথচ এখানে শত শত শিক্ষার্থীদের খাবার রান্না করা হয়। তাহলে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কই?

ডিএনসিসির ৩২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান বলেন, শিশু পার্কে ছোট-বড় সবাই আসে। সেজন্য সরকার এটি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আর মাদ্রাসার রান্না ঘরটি পার্কের ভিতরে পড়েছে। এটি সরকারি জায়গা। আইনগত ভাবে এটি পার্কের ভিতর থাকতে পারে না। ইচ্ছা করলে মসজিদের বাউন্ডেরির ভিতরেও নেয়া যায়। তবে তারা সেই উদ্যোগ আগে নেয়নি।

ডিএনসিসির নির্বাহী মেজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার জানান, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এই জায়গা চেয়ে কোন আবেদন করেনি। এছাড়া গত ছয়মাস ধরে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সঙ্গে ডিএনিসিসির একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাদের নতুন করে রান্নাঘর তৈরি করে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তারা মানেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা এটি ভেঙে দিয়েছি।

 


সর্বশেষ সংবাদ