স্কুল পর্যায়ে যৌনশিক্ষা বন্ধ চান উলামারা

সভাপতি আব্দুল মুমিন ও মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী
সভাপতি আব্দুল মুমিন ও মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী

স্কুল পর্যায়ে শ্রেণীকক্ষে এক সাথে ছেলে-মেয়েদের যৌন শিক্ষা দানের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। একইসঙ্গে অবিলম্বে এটা বন্ধের দাবি জানিয়েছে দলের সভাপতি আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়েখে ইমামবাড়ি ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। শনিবার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।

দেশের সাড়ে তিনশ’ স্কুলে কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে এক কক্ষে একসঙ্গে বসিয়ে এই যৌনশিক্ষা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের‌‌‌ ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু’ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় এই শ্রেণীকক্ষটি তৈরি হয়েছে। কক্ষটির নাম দেয়া হয়েছে ‌‘কিশোর কিশোরী কর্নার’। আর এখানে তারা পড়ছে ‘জেমস’ নামে একটি কোর্স যেটির পূর্ণরূপ দাঁড়ায় ‘জেন্ডার ইকুয়িটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস’।

শনিবার বিকালে মাওলানা কাসেমীর গণমাধ্যম কর্মকর্তা মাওলানা মুনির আহমদ স্বাক্ষরিত দলটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতিবিরোধী কুশিক্ষার মাধ্যমে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পশ্চিমাদের মতো লজ্জাহীন করে পশুতে পরিণত হওয়ার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একারণে অবিলম্বে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের সুকুমারবৃত্তি ও চরিত্র বিধ্বংসী স্কুল পর্যায়ের যৌনশিক্ষা বন্ধের দাবি জানিয়েছে দলটি। অন্যথায় গণমানুষকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

যৌথ বিবৃতিতে আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়েখে ইমামবাড়ি ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরও বলেছেন,‘‘পুঁজিবাদ ও করপোরেট লুটেরারা তাদের শোষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ যাতে সচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে না পারে, সেজন্য শিক্ষা থেকে নৈতিকতার পাঠ উচ্ছেদ এবং পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা চায়, দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে নীতি-নৈতিকতাকে উপেক্ষা করে আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদী চিন্তায় গড়ে ওঠুক। এতে করে এই মানুষরা পুঁজিবাদের কামলা খাটবে এবং মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পণ্য উৎপাদন করে অল্প মূল্যের বিনিময়ে পুঁজিবাদের গোলা ভরবে। এতে যৎসামান্য অর্থ পাবে, সেটা দিয়ে ভোগবাদিতা চরিতার্থ করতে উচ্চ মূল্যের করপোরেট পণ্য ক্রয় করে পুঁজিবাদের হাতে আবার সেই টাকা ফেরত দেবে। এ পর্যায়ে সাধারণ মানুষের অবস্থান পুঁজিবাদ ও করপোরেট ‘গুণ্ডা’দের প্রডাক্টশন টুলস্ ও ভোক্তা ছাড়া আর কিছুই নয়।’’

জমিয়ত নেতারা বলেন, ‘‘পুঁজিবাদ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণ সহজ করতে একই কৌশলের পাঠ স্বৈরশাসকদেরকেও দিয়ে থাকে। তারা জনবিচ্ছিন্ন শাসকদেরকে বোঝায়, সাধারণ মানুষকে তোমার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে দেওয়া যাবে না। আর সে জন্য শিক্ষা থেকে ধর্ম এবং নীতি-নৈতিকতার পাঠ মুছে দিয়ে ভোগবাদী চিন্তার একদল দক্ষ শ্রমিক তৈরি করো। সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে দিতে বিয়ে ব্যবস্থা কঠিন করে তুলে অবাধ যৌনাচার ও ভোগবাদিতা যত্রতত্র ছড়িয়ে দাও। দেখবে, প্রতিটা মানুষই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে ভোগবাদী ও আত্মকেন্দ্রিক চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকবে। এরপর নিশ্চিন্তে শাসন ও শোষণ চালাও। আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা, করপোরেট মিডিয়ার ভোগবাদিতা ছড়ানো এবং বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের নামে বিয়ে ব্যবস্থাকে কঠিন করে তোলার প্রতি নজর দিলে সবকিছু দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

বিবৃতিতে জমিয়ত সভাপতি ও মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে স্কুল পর্যায় থেকে আমাদের ধর্ম, সমাজ ও সংস্কৃতি বিরোধী যৌন শিক্ষা বন্ধ করতে হবে। কারণ, যৌনবিষয়ক এই শিক্ষা কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কৌতুহলী করে তুলবে এবং অবাধ যৌন মিলনে তাদের মনে ইন্ধন যোগাবে। আর এতে করে আমাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
জমিয়ত নেতৃদ্বয় বলেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের যৌনবিষয়ক শিক্ষা এজন্যই দেওয়া হয় যে, সেখানে যৌনতা উন্মুক্ত, আছে উন্মুক্ত পতিতালয়। কিন্তু আমাদের দেশে ওই রকম পরিবেশ ও সংকট নেই।

বিবৃতিতে তারা বলেন, যৌনবিষয়ে সচেতনতার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। কেননা, এটা জটিল কোনও বিষয় না। বয়স বাড়তে বাড়তে প্রাকৃতিকভাবেই তারা এই শিক্ষা পেয়ে যায় এবং অবশিষ্ট শিক্ষা ছেলে-মেয়েরা বয়সে কিছু সিনিয়রদের কাছ থেকেও পেয়ে থাকে। পশ্চিমাদেরকে যৌনশিক্ষা ও অবাধ যৌনাচার পরিবার ও সমাজ ভেঙে দেওয়াসহ অসংখ্য প্রাণঘাতী যৌনরোগে ডুবিয়েছে। আমরা চাই না তাদের মতো আমাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়ুক এবং অনাচার ও প্রাণঘাতী রোগে মানুষ ডুবে মরুক।

জমিয়ত শীর্ষ নেতৃদ্বয় হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, এই কুশিক্ষা বন্ধ করা না হলে সমাজ, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে পরিবার ও সমাজ রক্ষার দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

আরো দেখুন: স্কুলে যৌন শিক্ষা: কী পড়ানো হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে


সর্বশেষ সংবাদ