বিয়ের দিনেও স্টুডিওতে ছুটে গিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর

  © ফাইল ফটো

সদ্য প্রয়াত কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর, যিনি বাংলা সংগীতজগতে রেখে গেলেন অসংখ্য গান। শুধু গানে গানেই কাটিয়ে দিলেন তার জীবন। রাজশাহী শহর থেকেই সাধারণ এন্ড্রু কিশোর হয়েছেন অসাধারণ এক গায়ক। গায়কিতে, মায়াবী কণ্ঠে। শ্মশ্রুমণ্ডিত এই প্লেব্যাক জাদুকরের গান গেয়ে দেশে নানা প্রজন্মের গায়ক জনপ্রিয় হয়েছেন। গান ছাড়া মানুষটি জীবনে আর তেমন কিছু করেননি। যেন শুধু গানেরই জন্য দুনিয়াতে এসেছিলেন তিনি। 

এন্ড্রু কিশোরের পেশা ও নেশা দুটোই ছিল গান। গান ছাড়া অন্য কোনো পেশায় এতো বেশি মনোযোগ দেননি তিনি। বাংলা চলচ্চিত্র, বিশেষ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প তাঁর কাছে ঋণী থাকবে। অবাক হলেও সত্যি, মানুষটা বিয়ের দিনেও চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন স্টুডিওতে গিয়ে। তিনি নিজেই গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে এই কথা বলেছিলেন।

সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে এন্ড্রু কিশোর বলেছিলেন, বিয়ের দিন যে গান করব, এমন ভাবনা ছিল না। সেদিন আমি নিজেই অভ্যর্থনাকারী। কারণ, বিয়েতে যারা আমন্ত্রিত, তাদের কাউকেই আমার মা–বাবা কিংবা একমাত্র বড় বোন চেনেন না। এ কারণে সবকিছু দেখভাল করতে করতে রাত একটা বেজে গেল। বিয়ের আসরেই সংগীত পরিচালক আলী হোসেন জানিয়ে গেলেন, পরদিন সকালে রেকর্ডিং। আমি ততটা আমল দিইনি। কিন্তু পরদিন সকালেই তিনি ফোন করে ডন স্টুডিওতে চলে আসতে বললেন। তখনো আমি বিছানা ছাড়িনি। কিন্তু ফোন পেয়েই চোখ ডলতে ডলতে ছুটলাম।’ গানের জন্য বাসা থেকে অসময়ে বেরিয়ে যাওয়া বা না থাকার ঘটনা জীবনে অনেকবার হয়েছে। ছেলের প্রথম জন্মদিনে তিনি ছিলেন আমেরিকায়। দ্বিতীয় জন্মদিনের দিন স্টুডিওতে। তাই বলে সংসারজীবনে যে মনোযোগী ছিলেন না, তা নয়। অবশ্য সংসার দেখভালের কাজটি মূলত তাঁর স্ত্রীই করতেন।

সংগীতজগতে পুরো পেশাদার মনোভাব নিয়ে চলতেন এন্ড্রু কিশোর। এ জগতের সঙ্গে পরিবারকে মেলাননি। আবার নিজেও গান গাওয়ার পাশাপাশি সমসাময়িক অনেকের মতো গান লেখা বা সুর করার দিকে কখনো মনোযোগ দেননি। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আসলে আমি নিজেকে এত জ্ঞানী মনে করি না। কথা কিংবা সুরের ওপর আমার এতটা জ্ঞান নেই। আমার জ্ঞান শুধু গায়কিতে। তাই আমি গীতিকার কিংবা সুরকারের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না। এটা পেশাদারির মধ্যেও পড়ে। আর আমি চাই, একটা অ্যালবামে সব ধরনের সুরকার বা গীতিকারের গান থাকা উচিত। তাহলে সব শ্রেণির শ্রোতার কাছে পৌঁছানো যাবে।

প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দেওয়া এই শিল্পী আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। টানা ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ মহিষবাথান থেকে নগরীর লক্ষ্মীপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে নেওয়া হয়।