ডিএনএ অবতার (সায়েন্স ফিকশন সমগ্র) পর্ব-০৩

প্রথীকী ছবি
প্রথীকী ছবি  © ফাইল ফটো

পুনরায় লোকজন জড়ো হতে হচ্ছে। আগ্রহ আর সংশয় মিশ্রিত কৌতুহল নিয়ে সবাই জামাল সাহেবকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। একে একে পাড়ার সবাই আসল। জামাল সাহেব গুনে দেখলেন পাড়ার আর কেউ বাঁকি নেই। সবাই চলে এসেছে। তবে আসলোনা শুধু অদ্ভূত দু’টি লোক যাদের কথা আইনুল আর ফজলু বলে গেল ভয়ে ভয়ে।

সবাই সবার সাথে কথা বলছে। যে কথা কেউ কোনদিন কারও সাথে বলেনি। যে কথা কারও কল্পনাতেও আসেনি, সে কথা বলছে সবাই। এলিয়েনদের কথা বলছে সবাই। অদ্ভূত লোক দু’টোর কথা বলছে সবাই। তবে এর মাঝে কেউ কেউ প্রশ্ন করছে যে তারা কি আসলেই এলিয়েন? নাকি পৃথিবীরই বাসিন্দা? মাটির নিচ থেকে উঠে আসলোনা তো? সবার উপর দিয়ে একটা আতঙ্ক কেমন জানি ধীর বাতাসের ন্যয় বয়ে যেতে লাগল।

জামাল সাহেবকে সবাই ঘিরে রেখেছে। তার সারা গা বেয়ে ঘাম ঝরছে ফোঁটায় ফোঁটায়। এর মাঝেও উনি চিনতা করছেন অন্য কিছু। যদিও তিনি এলিয়েনদের প্রচুর স্বপ্ন দেখেন, ঘুমের মধ্যে এলিয়েনদের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে দাওয়াত খান। তবুও বাস্তবতাকে তিনি পাশ কাটাতে চাননা। সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলতে লাগলেন-- ভাই সব! আমার প্রিয় এলাকাবাসী। তোমরা কেউ ডরাইয়্যনা কইলাম। আইনুল আর ফজুল মাঝে মধ্যেই নেশা করে। মদ গাঁজা খাইয়্যা মাতলামী করে। হেগোর কথা তোমরা বিশ্বাস করিওনা। সবাই সবার বাড়িত যাও। আল্লাহ ভরসা।

আইনুল আর ফজুল লোকজনের ভিড়ের মাঝেই ছিল। তারা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করে বলল-- ভাইজান আফনের কথা ঠিক আছে, আমরা নেশা করি। তয় আজ সকালে যা দেখলাম তার প্রমাণ করার লাইগ্গেয়া বেশি কিছু করন লাগদোনা। আফনি চলেন আমাদের সাথে।

এবার জামাল সাহেব কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। গম্ভীর হয়ে গেলেন। হঠাৎ কি মনে করে প্রশ্ন করলেন—

যা বেডা! বে আনতাইজ্জেয়া কথা কইলেই অইবো? তরা কি কোন ‘ইউ এফ ও’ দেখছছ?

আইনুল আর ফজলু ভ্রু কুচকে উত্তর দিল-- ‘উফু’ আবার কী?

-- চুপ কর বদমাইশের দল! ‘উফু’ না। এইডা অইল ‘UFO(ইউ এফ ও)’। মানে “ Undefined Flying Object (আনডিফাইনড ফ্লাইয়িং অবজেক্ট)”। এইডা হলো আকাশে অচেনা নভোযান যা এলিয়েনদের যান বইল্লেয়া মনে করা অয়।

-- জে। এইবার বুঝছি। তবে এরহম যান দেহিনাই গো ভাইজান। কিন্তু এলিন কী?

-- এলিন না রে গাধা। এলিয়েন, এরা অন্য গ্রহের বাসিন্দা!

-- অন্য গ্রহ আবার কী? এইডা কী আমাগো দুনিয়ার মইধ্যে?

-- না। আমাদের পৃথিবীর মত আরেক পৃথিবী। আমাদের পৃথিবী থাইক্যেয়া লক্ষ-কোটি কিলোমিটার দূরে।

-- ওয়াল্লাগো! কী কন? লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!

এমন সময় ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে ওঠল- আমার ভাতিজির নামও এলিন। এবার দশম শ্রেণিতে উঠল।

জামাল সাহেব আরও একবার রাগান্বিত হয়ে বল্লেন- চুপ কর মূর্খের দল। খালি না বুইজেয়া কথা কয়। এলিন না। এলিয়েন।

সমবেত কন্ঠ এবার আরও কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন তুলল- এরা কী ভুত? নাকি জ্বিন? নাকি শয়তান?

জামাল সাহেবের উচ্চস্বরে রাগ মিশ্রিত জবাব- জ্বীন-ভুত-শয়তান কিনা জানিনাগো জনগন। তবে ভালো খারাপ দুইডাই অইতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য কেউ জানেনা। ব্যাপারটা নিয়ে এত আলোচনা না করে আসলে তারা কারা হেইডা খুঁইজ্যেয়া বাইর করন দরকার।

পুনরায় প্রশ্ন- এরা কী আল্লাহর সৃষ্টি?

জামাল সাহেব কী ভেবে শান্ত গলায় জবাব দিলেন- ‘হ্যাঁ’ বা ’না’ দুইটাই হতে পারে। তবে আমার মনে অয় তারা আল্লারই সৃষ্টি। কেন? তোমরা নামাজের সময় সুরা ফাতিহার প্রথম লাইনে কী বল? বল যে- আলহামদুলিল্লা-হি রাব্বিল আ-লামীন অর্থাৎ যাবতীয় প্রশসংসা আল্লাহ তা’লার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা। তাইলে বুঝ এবার তোমরা, এলিয়েনরা যদি অন্য সৃষ্টি জগতের থাইক্কেয়া আসলেও আল্লাহর সৃষ্টি। এবার তোমরা চাইলে আমার কথা বিশ্বাস করতেও পার। নাও পার।

উপস্থিত সবাই সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল। এমন সময় উঠতি বয়সের দুষ্টু প্রকৃতির এক ছেলে, বয়স তেরো কী চৌদ্দ হবে, জামাল সাহেব কে প্রশ্ন করল-

- আঙ্কেল আপনি কী ডরাইতাছেন?

বেয়াদবের মতো এমন প্রশ্ন শুনে জামাল সাহেবের তিরিক্ষি মেজাজ লাফ দিয়ে উঠল। সুর্যের তেজের মত তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। শেষ রাতে প্রকৃতির যে ভূমিকম্প সবাই দেখল তার খানিকটা হয়তো জামাল সাহেবের শরীরে রয়ে গেছে, যেটা এখন সবাই দেখছে। এমনিতেই বেচারা রাগী মানুষ। তার উপর উদ্ভট এক ঝামেলার সম্মুখীন এই মুহূর্তে। এরকম একের পর এক প্রশ্ন শুনে তিনি যেন বোমার মত ফেটে যাবেন। যে ছেলেটা এ প্রশ্ন করেছিল সেও ভিড়ের মধ্যে কোথায় যে লুকলো তার আর হদিস নেই। কেউ কেউ মুখে হাত দিয়ে অল্পস্মরে হাঁসছে। কেউ কেউ অজানা আতঙ্কে ডুব গিলছে। কেউ কেউ অনমনা। জামাল সাহেবকে চেতাতে অনেক ছেলে-পেলেই এসব কাজ করে থাকে তা অবশ্য সবারই জানা।

জামাল সাহেব জোরে চিৎকার দিয়ে তিনি কিছু একটা বলে ছেলেটাকে গালি দিবেন, এমন সময় বৃদ্ধমত একজন হাতের ইশারা করে দূরে কিছু একটা দেখাতে চাইলেন। আঁতকে উঠল সবাই। এতক্ষণ যাদের নিয়ে কথা-বার্তা চলছিল তাদের অস্তিত্ব এবার সবার চোখে ধরা দিল। কেউ যেন নিজের চোখে ব্শ্বিাস করতে চাইছেনা। এক পাও নড়ছেনা। যে একটি মাত্র রাস্তা এই এলাকাটিকে অনন্তপুর বাজারের সাথে সংযুক্ত করেছে সেই রাস্তার পাশের নিচু জমিতে থেকে দু’টো লোক উঠে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ ডানে বামে তাকিয়ে সোজা হাঁটা দিল জামাল সাহেবদের এলাকার দিকে। দূর থেকে কিছুটা অস্পষ্ট হলেও সন্দেহের ঢেউ আইনুল আর ফজলুর বর্ণনাকে স্পষ্ট করে তুলছে ক্রমাগত। প্রথমে তাদের অস্পষ্ট ধুমকেতুর মত দেখালেও মুহূর্তের ব্যবধানে তা দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার হয়ে গেলো।

সবাই জামাল সাহেবকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। লোক দু’টোকে মোকাবেলা করার একটা মানসিক প্রস্তুতি সারছে তারা। যুবক বয়সের ছেলেরা হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই এগিয়ে গেল। যেন একটা ছোট খাটো রণাঙ্গন। আতঙ্ক নামক বিমূর্ত বিষয়টা বাতাসের সাথে মিশে সকলের নাক-মুখ ‍দিয়ে ঢুকছে। একারণে সকলের দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে। দম ভারি হয়ে আসছে। জামাল সাহেবের শরীর থেকেও ঘাম ঝরছে অনবরত। আগন্তুক দু’জন লোক যতই কাছে আসছে, জামাল সাহেবকে ঘিরে লোকজনের স্থিতিবস্থা ততই নড়বড়ে হচ্ছে। দেখতে দেখতে অদ্ভূত লোক দু’টো সকলের নিকটে আসল। যে সব যুবক ছেলে তাদের মোকাবেলা করার জন্য সামানে এগিয়ে গিয়েছিল তারাও ঘাবরে গেল। পূর্বে তারা কখনও মারামারি করেনি। সকলেই জীবিকার তাগিদে দূরে অনন্তপুর বাজারে কাজ করে। ভয়ে তারাও পালানোর সিদ্ধান্ত নিল। এমন সময় জামাল সাহেব চেঁচিয়ে বলে উঠলেন-

- মিয়ারা! কেউ যাবেন না আফনারা। হেরারে আওনের দেন। আমরার সবারই একসাথে থাহন লাগবো।

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল। আগন্তুক দু’জন সবার সামনে দাঁড়াল। গায়ে জামা নেই। বস্তা পড়ে আছে তারা। বস্তাগুলো জমিতেই ‍কুড়িয়ে পেয়েছে। টিকটিকির মত গায়ের রং। মনে হয় শরীরে রক্ত নেই। শারীরিক অবয়ক স্বাভাবিক। মানুষের মতই। তবে একটু লম্বা আর চিকন। প্রতি হাতে আর পয়ে পাঁচটা করে আঙ্গুল। আয়তাকার নাক। চোখগুলো সাদা-শুভ্র। ব্যতিক্রম শুধু এখানেই। চোখের মাঝখানে মনি নেই। দেখতে ধূসর। টানা টানা। অদ্ভূত চোখগুলো দিয়ে তারা কাকে যেন খুঁজছে। এদিক সেদিক দেখছে। হাতে বাঁশের ফালি। স্থানীয় ভাষায় একটাকে বলে ‘কইনচা’। সেটায় ভর দিয়েই তারা এসেছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছেনা তারা।

বিব্রতকর পরিস্থিতি। সকলের বুকের ধুক ধুকানীতে মনে হচ্ছে আরেকবার মাটির কাঁপন শুরু হবে। সকলের ভিড়ে একটুকরো গামছা পড়ে দাঁড়ানো অমল বাবু অতি দূর্বল প্রকৃতির লোক। কেউ কিছু বলার আগেই সে লোক দু’টোর পায়ের কাছে গিয়ে ভয়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল। কাঁদু কাঁদু হয়ে বলতে লাগল-

- রাম! রাম! রাম! এ দেখি কল্কি অবতার! আমরারে মাফ কইরা দেন। আমরার যাওনের কোন বাড়ি-ঘর নাই। খেমা দেন। খেমা দেন। হায় ভগবান! হায় ভগবান।

লোক দু’টোর অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই। তারা কী যেন খুঁজেই চলছে। তারা কিছু একটা খুঁজে যেদিকে যায়, লোকজন সেদিক থেকে সরে যায়। দৌড় দেয়। কারও মুখে কোন কথা নেই। শুধুমাত্র অমল বাবুর চিৎকার শুনা ‍যাচ্ছে। সেদিকে কারই মনযোগ নেই। সব মনযোগ শুধু এই দু’টো লোককে ঘিরে। অমল বাবু হয়তো ভুলে গেছে যে হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কল্কি অবতার দু’জনে হয়না। একজনে হয়। তাও আবার যার অবতার হয় তাঁর বাহন হবে ঘোড়া। হাতে সাদা তলোয়ার। কলি যুগের শেষে তিনি পৃথিবীতে আসবেন। সকল অনাচার দূর করবেন। ধরণীকে পাপাচারের হাত থেকে মুক্ত করবেন। তিনি মহান দেবতা বিষ্ণুর আরেক রূপ।

যা ঘটার তাই ঘটে চলছে। মানুষজনের হৃদপিন্ড কাঁপছে। ধুক ধুক আওয়াজ করছে। সবাই চুপ। আগন্তুক লোক দুটো হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। সবার হৃদপিন্ডও কেমন থমকে গেল। আগন্তুক লোক দুটোর মধ্যে হঠাৎ একজন বলে উঠল- আপনাদের বুকের আওয়াজ এত কম হচ্ছে কেন? পানি কম খান বুঝি?

একেবারে শুদ্ধ বাংলয় বল্ল লোকটি। বলার ধরনটাও ছিল চমৎকার। টিভির উপস্থাপকের মত। কে এরা? সবার মনে তখন একই প্রশ্ন।

লোকটি আবার বল্ল- আপনাদের মধ্যে জনাব জামাল আহমেদ কে?

কেউ কিছু বুঝছেনা ঠিক কী উত্তর দেবে। সবাই জামাল সাহেবকে খুব পছন্দ করে। তিনি সবার কোননা কোনভাবে উপকার করেছেন। সবাই তাকে যেমন পছন্দ করেন, তেমন ভয়ও পান। আবার তার ক্ষতি হোক এটা কেউ চাননা। লোক দু’টো উনার কোন ক্ষতি করবেনাতো? কারও মুখে কোন কথা নেই। এটা দেখে আগন্তুক লোক দু’টো কেমন জানি গম্ভীর হয়ে গেল। তাদের চেহারায় ভয়ংকর একটা ভাব ফুটে ওঠল। সবাই আবার ভয়ে দমে গেল। মনে হল বাতাস বন্ধ। গাছের পাতাও নড়ছেনা। পাখিরাও ঠাঁই বসে রইল ডালে। উড়ছেনা। জমাট বেঁধে যাচ্ছে সকলের নিঃশ্বাস।

জামাল সাহেব ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসলেন। নিজের জন্য সকলকে বিপদে তিনি ফেলতে রাজি নন। ভয়ে এতক্ষণ তিনি জটলার মধ্যেই ছিলেন। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বল্লেন- আমিই জামাল আহমেদ। তোমরা কী চাও।

জামাল সাহেবের কথা শুনে আগন্তুক লোক দু’টো কেমন জানি চমকে উঠল। চেহারা থেকে ভয়ংকর ছায়া সরে গেল। তৃপ্তি আর পরিশ্রান্ত একটা হাঁসি দিল লোক দু’জন। হাঁসিতে ভয়ের কোন চিহ্ন নেই। আশ্চর্য সুন্দর হাঁসি।

সবাই অবাক। লোকগুলো অদ্ভূত, তবে চমৎকার করে হাঁসে। সবাই উপরে ভর করা আতঙ্কের চাদর সরে যেতে লাগল। এতক্ষণে তারা আবিষ্কার করল যে আগন্তুক লোক দু’টোর শরীর থেকে ভোটকা পঁচা গন্ধ বের হচ্ছে। একেবারেই বিশ্রী। অসহ্যনীয়। ইতোমধ্যে ছোট ছোট বাচ্চা ছেলেদের একটা দলও এসে গেল সেখানে। ভয়ে এতক্ষন তারা ঘর থেকে বের হচ্ছিলনা। মানুষজন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে লাগল। এলাকার মহিলারা তখন একসাথে জড়ো হয়েছে, কোন একটা বাড়ির আড়ালে। ঠোঁটের মধ্যে কাপড়ের একটা অংশ গুঁজে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা। তাদের সাথে কিছু অল্প বয়সী মেয়েও আছে যারা কিছুক্ষণ পর পর আগন্তুক লোক দু’টোকে দেখে আর কি যেন ভেবে হেঁসে কুটি কুটি হচ্ছে। সামান্য বয়স্ক মহিলারা তখন দু’টো লোকের চেহারার সাথে তাদের কোন কোন আত্বীয়ের চেহারার মিল রয়েছে নেই আলাপনে ব্যস্ত। একটা বাচ্চা ছেলে কিছুক্ষণ পর দৌড়ে এসে মহিলাদের বলতে লাগল- শইলের কাফর ছেড়াবেড়া। কি গন্ধ! ওফ! চামড়া আড়লের লাগান।

‘আড়ল’ স্থানীয় ভাষা। এর মানে অর্থ হল টিকটিকি।

সবার ভয় অনেকাংশে দূর হল। আগন্তুক লোক দু’টো জামাল সাহেবের যত নিকটে যায়, জামাল সাহেব ততই পেছন দিকে সরে যান। লোক দু’টো বাঁশের ফালিতে ভর দিয়ে হাঁটছে। তা দেখে জামাল সাহেব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আবার বল্লেন-

- তোমরা বাঁশের ফালিতে ভর দিয়ে হাঁটছ কেন?

একজন উত্তর দিল- আমরা দীর্ঘ সময় মহাকাশে ছিলাম। এতদিন মহাকাশে থাকলে পৃথিবীতে স্বাভাবিক হাঁটা-চলা করা যায়না। এখন বলেন পাসপোর্ট অফিসটা কোন দিকে?

জামাল সাহেবের শরীরে যেন কেউ জোরে ধাক্কা মারল। এরকম কথা শুনে উনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। তারা আবার প্রশ্ন করল- পোসপোর্ট অফিসটা কোন দিকে জনাব?

জামাল সাহেবের গলা দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছেনা। কন্ঠস্মর ক্রমেই ক্ষীণে হয়ে আসছে তার। আস্তে করে বল্লেন-

- পাসপোর্ট অফিসতো কিশোরগঞ্জ শহরে।

- কিশোরগঞ্জ শহর কোন দিকে?

- সোজ পূর্বে, নরসুন্দা নদীর তীরে।

একথা শুনার পর লোক দু’টো বাঁশের ফালিতে ভর দিয়ে দ্রুত বেগে পূর্ব দিবে ধাবিত হল এবং চোখের পলকে মিলিয়ে গেল।

উপস্থিত সবাই বোবার মত দাঁড়িয়ে সেই ঘটনা দেখল। জামাল সাহেবও নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তিনিও বোবা বনে গিয়েছেন মুহূর্তের জন্য। লোক দু’টো কে? কে দেবে এই উত্তর? (চলবে)

 

লেখক: প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নোয়াখালী সরকারি কলেজ।


সর্বশেষ সংবাদ