বুক রিভিউ: রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০৭:৫৫ PM , আপডেট: ২৯ মার্চ ২০১৯, ১০:০৫ PM
মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিনের অস্পষ্টতা আর ধোঁয়াশায় ভরপুর অসাধারণ থ্রিলার উপন্যাস ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেননি’ এর দ্বিতীয় পর্ব ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি’। ২০১০ সালে নাজিমুদ্দিনের প্রথম মৌলিক থ্রিলার ‘নেমেসিস’ প্রকাশিত হলে ধীরে ধীরে তিনি এদেশের পাঠক ও পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি’ উপন্যাসটি একযোগে ঢাকার বাতিঘর প্রকাশনী ও কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত হয়।
বইয়ের নাম থেকে ‘খেতে’ শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে যা থেকে ধারনা করে নেয়া যায় যে দ্বিতীয় পর্বে রেস্টুরেন্টের পাট চুকেছে। প্রথম পর্বে রহস্যময়তার পাশাপাশি খাবারের অদ্ভুত আকর্ষণ থাকলেও দ্বিতীয় পর্বের বইয়ের প্রচ্ছদেই চোখ আটকে যেতে বাধ্য। প্রচ্ছদের দুই নারীমূর্তি শুরুতেই মনে ধাঁধার সৃষ্টি করে। সুন্দরপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ তিন বছর পরও নুরে ছফা খুঁজে যাচ্ছেন রহস্যময়ী ‘মুশকান জুবেরীকে’। তার ক্যারিয়ারের এই একটি অমীমাংসিত কেসের কারণেই যেনো তার পুরো ক্যারিয়ার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। ডিবির এই জাঁদরেল ইনভেস্টিগেটর তাই নাজেহাল। এমন পরিস্থিতিতে উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ক্ষমতাধর এক ব্যক্তি, যিনি প্রধানমন্ত্রীর পিএস- আশেক মাহমুদ। বোনের ছেলের নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনে নিখোঁজের সাথে জড়িত মুশকানকে খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেন তিনি। সত্যিই কি বোনের ছেলের নিখোঁজ রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা? নাকি আরো কোনো উদ্দেশ্য ছিলো তার?
এদিকে ডিবির রিটায়ার্ড সিনিয়র খোদাদাদ শাহবাজ খান নুরে ছফাকে পরামর্শ দেন সুন্দরপুর থেকেই নতুন করে তদন্ত শুরু করার জন্য। তারপরই শুরু হয় চরম উত্তেজনার মুহূর্তগুলো। বই থেকে চোখ সরানোর উপায় ছিলো না। নুরে ছফা একে একে জেনে যায় আরো কিছু রহস্যময় তথ্য। ডাক্তার আসকারের দেওয়া তথ্যসমূহ সাময়িক দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় তাকে। সুন্দরপুরের অদ্ভুত কিছু পরিবর্তনও পাঠককে অতি উৎসাহী করে তুলবে। তবে এবারের কাহিনী সুন্দরপুর কিংবা ঢাকায় থেমে থাকেনি। কলকাতায় ছুটে যেতে হয়েছে নুরে ছফাকে। সেখানে নিখোঁজ ডাক্তার দয়াল প্রসাদ মল্লিকের সাথে মুশকান জুবেরীর অদ্ভুত যোগসূত্র মেলে। সেখানে রহস্য আরো জট পাকিয়ে যায়। কে সত্য? মুশকান জুবেরী? রোখসান? নাকি সুষ্মিতা সমাদ্দার? উপন্যাসে আরো একটি চরিত্র কিছু জায়গায় অনেকটা প্রভাব বিস্তার করে- প্রধানমন্ত্রীর পিএসের গানম্যান আসলাম। উপন্যাসের প্যাঁচগুলো শুরুতে যেমন হাজারো প্রশ্নের অবতারণা করে, হঠাৎই একে একে সব প্যাঁচ খুলতে শুরু করে।
বইটি পড়ার সময় এতোটাই উত্তেজনা কাজ করছিলো যে এক লাইন শেষ না করেই পরবর্তী লাইনে চলে যাচ্ছিলাম। প্রথম পর্বের তুলনায় কাহিনী আরো বিস্তৃত, কাহিনীর গতি ছিলো অত্যাধিক দ্রুত। মাঝে গা শিরশির করা দুটি খুনের বর্ণনা কাহিনীতে বৈচিত্র আনে। মাষ্টার রমাকান্ত কামারকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ভেবেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তার কোনো ভূমিকা পাওয়া যায়নি। প্রথম পর্বে মুশকান জুবেরীর চরিত্রটি অত্যন্ত দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলায় সব আকষর্ণ এবার তার দিকে ছিলো, কিন্তু কাহিনীর দ্রুততায় চরিত্রটি শেষ পর্যন্ত ততটা আকর্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। ডাক্তার আসকারের চরিত্রটি ছিলো অনেক দ্বিধান্বিত। তাছাড়া পিএসের বোনের সাথে মুশকানের পূর্বপরিচয়ের বিষয়টি অত্যাধিক কাকতালীয় বলে মনে হয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে লেখক উত্তেজনার চরম সীমায় পৌঁছে দিতে পেরেছেন। পাঠকের প্রধান আকর্ষণ নুরে ছফার সাথে মুশকান জুবেরীর সাক্ষাৎ। তা কি হয়েছিলো? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি। রোমহর্ষক এক উত্তেজনাকর অনুভূতির সম্মুখীন হতে ও ভাবনার সাগরে ডুবে যেতে পড়ে ফেলুন- ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেননি’।
লেখক: আনিকা তাসনিম (সুপ্তি)
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।