পরিশ্রম করলে যেকোন প্রতিবন্ধকতাই দূর করা সম্ভব

  © টিডিসি ফটো

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) প্রভাষক মিঠুন দত্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে রাবিপ্রবির কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জানান, রাবিপ্রবিতে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পেরে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ছাত্র জীবন নানান স্মরণীয় ঘটনা, শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে মিঠুন দত্ত কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস’র সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাবিপ্রবি প্রতিনিধি আহ্সান হাবীব-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। আগ্রহ থেকে এই পেশায় আসা?
মিঠুন দত্ত: শিক্ষকতা পেশাকে আমি খুব উপভোগ করি। আমি এসএসসি পরীক্ষা শেষে প্রায় ৩ মাস ৯ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে রসায়ন পড়াতাম। রসায়ন আমার প্রিয় বিষয় ছিলো যা আমি উপভোগ করতাম। এর পর এইচএসসির ১ম বর্ষে একটি টিউশনি পড়াতাম। এর পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রস্তুতির ক্লাস নিতাম। এরপরও একাডেমিক ক্লাস নিয়েছি। এতে শিক্ষার্থীদের কছে থেকে বেশ ইতিবাচক সাড়া পেতাম। আর তাদের ক্লাস নিয়ে যে প্রশান্তির ছায়া ওদের চোখে-মুখে দেখতাম তা আমাকে বিমোহিত করতো। তখন আমি সত্যিই মুগ্ধ হতাম। এই পেশাকে অনুভব করতে শুরু করি। আর তখন থেকেই শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক না হতে পারলে কোন পেশা চয়েজ করতেন ?
মিঠুন দত্ত: শিক্ষকই হতাম! স্বপ্ন ছিলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক হওয়ার। সময়ের সাথে সাথে তা পূরণ হয়েছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হতে না পারতাম তাহলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে কলেজে শিক্ষকতা করতাম। যদি তাও না হতো তবে স্কুলের শিক্ষকতা করতাম। তবে শিক্ষকই আমি হতাম। আমার মনে-প্রাণে-মস্তিষ্কে শুধু শিক্ষকতা লুকিয়ে ছিলো। শ্রেণিকক্ষ আমার প্রিয়। শ্রেণিকক্ষকে আমি খুব ভালোবাসি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্র জীবনের স্মৃতিময় দিনগুলো আজও স্বরণ হয়?
মিঠুন দত্ত: ছাত্র জীবনের প্রতিটি দিন স্মৃতিময়। তবে এরমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য স্মৃতিময় দিন হচ্ছে ৫ম শ্রেণির একটি ঘটনা। সেদিন ফায়ার সর্ভিসের তত্ত্বাবধানে আগুন নেভানোর একটি কার্যক্রম হয়েছিলো। সেখানে আগুন নিভানোর জন্য ফোয়ারা ছিলো আর আমরা সবাই মিলে সেই পানির ফোয়ারার নিচে ভিজেছিলাম। সেদিন অনেক উপভোগ করেছিলাম। শিক্ষার্থীদের ভেজার কারণে স্কুল আগেই ছুটি হয়েছিলো আর বাসায় এসে পড়লাম। আরও একটি ঘটনা ছিল, আমাদের স্কুলে একটি সিঁড়ি ছিল আর সেটি ডিএনএর মতো প্যাঁচানো ছিল। টিফিন হলেই আমরা সেখাতে খেলতাম। টিফিনের পর ক্লাসে মনোযোগ দেয়া কঠিন হয়ে পড়তো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে স্মরণীয় কিছু ঘটনা?
মিঠুন দত্ত: বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন মানে স্মরণীয় সব মূহুর্ত্ব। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, ঘোরাঘুরি, মুক্তমঞ্চে নাটক দেখা ইত্যাদি। একদিন ক্যাম্পাসে ঘুরতে বেরিয়ে শুনি শিক্ষকদের ক্লাবে এক স্যারের বিয়ে হচ্ছে। তখন বন্ধু-বান্ধব মিলে বিনা নিমন্ত্রনে চলে গেলাম বিয়ে খেতে। গিয়ে দেখি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিসি-প্রক্টর সহ সব গণ্যমাণ্য শিক্ষক। সেদিন আমরাই বিনা নিমন্ত্রনে সেখানে উপস্থিত ছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বৈশ্বিক র‌্যাংকিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে কেন?
মিঠুন দত্ত: বিশ্ববিদ্যালয় মানে যেখানে বৈশিক জ্ঞান থাকবে যেখান থেকে সব জ্ঞান আরোহন করা যাবে। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রয়োজন সহযোগিতা, অর্থায়ন, অনুপ্রেরণা, প্রশাসনিক সহায়তা দরকার। যেখানে শিক্ষকগণের সাথে শিক্ষার্থীরাও প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্ত হতে পারবে। আর সকল শিক্ষকদের জন্য সুষম ও নিরপেক্ষ সুযোগও প্রয়োজন। স্বজনপ্রীতি মনোভাব দূর করে যোগ্যতার বিচারের মাধ্যমে সবাইকে মূল্যয়ন করা হলেই কেবল ভবিষৎ জাতি গঠন ও মান উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। গবেষণা, শিক্ষা ও উন্নয়নের ভূমিকায় পারে বিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনা মহামারীর দিনগুলো কিভাবে পার করছেন? এই সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি কি পরামর্শ থাকবে?
মিঠুন দত্ত: বাসায় থেকে বই পড়ে, সিনেমা দেখে করোনার এই দিনগুলো পার করছি। শিক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে ঘরে অবস্থান করবে এবং সময়কে কাজে লাগাবে আর সময় উপভোগ করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রিয় লেখক কে? কোন কোন লেখা অনেক ভালো লাগে?
মিঠুন দত্ত: প্রিয় লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প বেশি প্রিয়। এছাড়াও বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যাযয়ের ‘আরণ্যক’ আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগে। মনে হয় এটা আমার অবস্থান। পাশাপাশি সমরেশ মজুমদার, নজরুলও অন্যতম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসঃ প্রিয় ব্যক্তিত্ব ও খেলোয়াড়কে? আর  প্রিয় খাবার, প্রিয় ফুল, প্রিয় খেলা কি কি?
মিঠুন দত্ত: প্রথমতো প্রিয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মা। এরপর প্রিয় ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওনার নেতৃত্ব আমাকে বিমোহিত করে। যখন থেকে আমার বোধদ্বয় হয়েছে তখন থেকেই আমি আমার চোখের সামনে একজন নেতা একজন নেত্রীকেই দেখতে পাই। আর প্রিয় খাবার মিষ্টি, ফুল রজনীগন্ধা, খেলা দাবা, ক্রিকেট, বাস্কেটবল। প্রিয় খেলোয়াড় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তূজা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একটি স্বনির্ভর জাতি তৈরীতে তরুণদের প্রতি আপনার পরামর্শ বা উপদেশ থাকবে? 
মিঠুন দত্ত: স্বনির্ভর জাতি তৈরীতে তরুণদের যোগ্য, সৎ ও পরিশ্রমী হয়ে উঠতে হবে। যে ব্যক্তি সৎ ও পরিশ্রমী হয় তার সামনে কোন কিছু বাঁধা হয়ে উঠতে পারেনা। স্বনির্ভর জাতি গড়তে হলে ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে গিয়ে বৃহৎ স্বর্থের কথা চিন্তা করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলে আপনার অপূরণীয় কোন ৩টি ইচ্ছে পূরণ করতে চাইবেন?
মিঠুন দত্ত: ভালো প্রশ্ন। আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলে; প্রথমত- আবারও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে চাইবো, দ্বিতীয়ত- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাইবো এবং তৃতীয়ত-সরকারের শিক্ষামন্ত্রী হতে চাইবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার কাছে জীবনের মানে কি?
মিঠুন দত্ত: আমার কাছে জীবনের মানে হচ্ছে ঈশ্বর প্রদত্ত সামান্য সময় যা সঠিক ও পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগানো উচিত। কেবলমাত্র মানব কল্যাণে অন্যের উপকারে জীবনকে ব্যায় করা উচিত। অন্যের উপকারে আসে না এমন জীবন অর্থহীন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: রাবিপ্রবিকে নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
মিঠুন দত্ত: রাবিপ্রবিকে আমি অনেক ভালোবাসি। আমার কর্মস্থল। আমি চাই রাবিপ্রবির সকল স্তরের মানুষের মনোভাব হবে উদার। যেখানে গণতান্ত্রিক ধারায় সবার বিশ্বাস স্থাপিত হবে। কোন স্বজনপ্রীতি পক্ষপাতমূলক আচরণ থাকবেনা। যোগ্যতার বিচার, রাজতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার্য থাকবে। সকলকে সমান নজরে দেখা হবে। প্রশাসন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিবে। রাবিপ্রবির প্রতিটি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সুউচ্চ অবস্থানে পৌঁছাবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে নিয়োজিত থেকে তারা দেশকে পরিচালিত করবে। আমি যেখানে যাবো সেখানেই রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের খুঁজে পাব।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনাকালে অনলাইন ক্লাস এবং শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে আপনার পরামর্শ কি?
মিঠুন দত্ত: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইন ক্লাশ বেশ কঠিন। দেশে অনলাইন ক্লাশের এখনো উপযোগী নয়। গুণগত মানের ইন্টারনেট ব্যবস্থা, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাশের দক্ষতা সব মিলিয়ে বেশ কঠিন। অনেক শিক্ষার্থীদের সুযোগ নেই। অনেক শিক্ষকদের প্রস্তুতি নেই। এসব দিক বিবেচনা করে কার্যকরের দিক কঠিন। তবে প্রশাসনের নেয়া উদ্দ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই ও উদ্দ্যোগ কার্যকরী হোক সেই প্রত্যাশা করি। তবে সেশনজট নিরসনে তেমন কোন কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে না বলে আমি মনে করি। কেননা সব ক্লাশ নেয়া হয়ে গেলে বাকী থাকবে পরীক্ষা। পরীক্ষার জন্য অল্প সময় দিলে শিক্ষার্থীরা তা মানবে না। আর যদি বেশি সময় দেয়া হয় তাহলে সেটা আগের অবস্থানে গিয়ে পৌঁছায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
মিঠুন দত্ত: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ