মানুষের ভালোবাসার জোরেই জীবনের ঝুঁকি নেয়ার সাহস পাই

  © টিডিসি ফটো

দেশে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবুও মানুষের মাঝে যেন সচেতনতার বালাই নেই। সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই রাস্তা-ঘাটে ঘোরাঘোরি করে অনেক মানুষ। তবুও মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে পুলিশ। ফলে করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে নেয়া থেকে শুরু করে লাশ দাফন পর্যন্ত সবকিছুতেই পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শকের দায়িত্বে আছেন শাকিল মাহমুদ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছিলেন। করোনার সময় মানুষের সচেতনতা এবং কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন শাহাদাত বিপ্লব....

ডেইলি ক্যাম্পাস: উৎকন্ঠা কাটিয়ে করোনার সময় কীভাবে কাজ করছেন?

শাকিল মাহমুদ: একটু যদি শুরুর ঘটনা বলি যখন প্রথম করোনা শনাক্ত হয়, প্রথম দিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরতদের তালিকা আমাদের কাছে দেয়া হয়। তখন থেকেই আসলে তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, কেউ আক্রান্ত হলে তাকে হসপিটালে পাঠানো, বাড়ি লকডাউন, সাসপেক্টদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো এসব কাজ করেছি। সবচেয়ে বেগ পেতে হচ্ছে মানুষকে মানানো। ঈদে ব্যাক্তিগত গাড়ির নামে রেন্ট এ কারে করে মানুষ গাদিাগাদি করে বাড়ি ফিরছে। নিজের থেকে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছি যেন করোনা আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় যেন না ছড়ায়। আমরা জনতার পুলিশ হিসেবে করোনা মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষের ভালোবাসার জন্যেই জীবনের ঝুঁকি নেয়ার সাহস পাই।

ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবারকে কিভাবে ম্যানেজ করছেন? ঈদ কোথায় করেছেন?

শাকিল মাহমুদ: আমার পরিবার কুমিল্লা থাকে। তবে এবারই প্রথমবারের মতো পরিবার ছাড়া ঈদ করেছি। খারাপ লাগা কাজ করেছে। তবুও নিজের নিরাপত্তা, পরিবারের নিরাপত্তা এবং মানুষের কথা ভেবে এবার কর্মস্থলেই ঈদ করেছি। বাবা মা টেনশন করে খুব। তবে উনারা বুঝেন। তাছাড়া পরিবারকে সবসময় ইতিবাচক খবর দেই। খারাপ কিছু পরিবারকে জানানো হয় না।

ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রশাসন থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?

শাকিল মাহমুদ: আমাদের এসপি স্যার থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। নজিরবিহীন সহযোগিতা করা হচ্ছে আমাদের পুলিশ প্রশাসন থেকে। ঔষধ থেকে শুরু করে সার্বিক খোঁজ-খবর নেয়া সবকিছুই করেন।

ডেইলি ক্যাম্পাস: কাজ করার ক্ষেত্রে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করছেন?

শাকিল মাহমুদ: আমাদের কাজে ঝুঁকি খুব বেশি। আমদেরকে আসামী গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা, জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। এখন আসামীর করোনা আছে কিনা- সেটা তো আমরা জানি না। এছাড়া আমার এলাকায় প্রতিদিনই চেকপোস্টে মাদক ধরা পড়ে। সেক্ষেত্রে চেক আপ করাটাও খুব ঝুঁকি নিয়ে করতে হয়। যতটুকু পারা যায় সতর্ক থাকার চেষ্টা করি।

ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় করোনা নিয়ে মানুষের মনোভাব কেমন দেখছেন?

শাকিল মাহমুদ: সাধারণ মানুষের মধ্যে আসলে সচেতনতা কম। নিম্ন আয়ের মানুষরা বাধ্য হয়েই খাবারের জন্য বের হচ্ছে। তাদেরকেও আসলে কিছু বলা যায় না। তাদের মধ্যে একটা বিষয় কাজ করে যে, ‘মরলে মরবো কিন্তু না খেয়ে মরা যাবে না’।

ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনার ভবিষ্যত নিয়ে কি ভাবছেন?

শাকিল মাহমুদ: আমার কাছে মনে হয় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে যেহেতু লকডাউন শিথিল করা হচ্ছে তাহলে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি হবে। এটা মোকাবেলা করতে হলে সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে।

শাকিল মাহমুদ: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ