পুলিশের করোনাকাল: পর্ব-১

মানুষকে ভালো রাখাই আমাদের ঈদ

করোনা নিয়ন্ত্রণে সম্মুখভাগে যুদ্ধ করছে পুলিশ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে করোনা রোগীর বাড়ি লকডাউন, হাসপাতালে প্রেরণ, মনিটরিং করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং লাশ দাফনসহ বহুমুখী দায়িত্ব এখন পুলিশের কাঁধে। তারা তা পালন করছেন দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে। চট্টগ্রামের মিরসরাই থানায় পুলিশের উপ-পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন কাউসার মাহমুদ। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। করোনারকালে দায়িত্ব এবং মানুষের সচেতনতা নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন শাহাদাত বিপ্লব

ডেইলি ক্যাম্পাস: করোনা পরিস্থিতির কাজের অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করতে চাই....

কাউসার মাহমুদ: বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশের মনোবল ও সততা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা যে ইউনিটে আছি আমাদের মনে হচ্ছে অন্তত আমার এলাকাকে আমার ঠিক রাখতে হবে। এখন বহুমুখী কাজ করতে হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ করতে হচ্ছে, করোনা রোগী শনাক্ত হলে তার বাড়ি লকডাউন এবং হাসপাতালে প্রেরণ, মনিটরিং করা, বাজার নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক দুরুত্ব নিশ্চিতকরণ এবং কেউ মারা গেলে লাশ দাফনের কাজও করতে হচ্ছে। পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বাভাবিক কাজ তো করতে হচ্ছেই।  অতিরিক্ত সময় ও শ্রম দিতে হচ্ছে, দেশের প্রতি ভালোবাসা ও বিবেকের তাড়না থেকেই মূলত এটা সম্ভব হচ্ছে। এটা আমরা সবাই স্বতস্ফুর্ত ভাবেই করছি। 

ডেইলি ক্যাম্পাস: পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাদের কীভাবে ম্যানেজ করছেন?
কাউসার মাহমুদ: আমার বাড়ি নারায়নগঞ্জে। পরিবারের সদস্যরা সেখানেই আছেন। আসলে আমরা যারা পুলিশে আছি বর্তমান সময়ে আমরা পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি। সারাক্ষণ তারা টেনশন করেন। বাড়িতে গিয়ে যে দেখা করে আসবো সে সুযোগও নেই। কারণ আমার কারণে হয়ত পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে। অনলাইনে যোগাযোগ রাখছি পরিবারের সাথে।

ডেইলি ক্যাম্পাস: ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করতে হয়, নিজেদের সতর্কতা আসলে কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে?

কাউসার মাহমুদ: আসলে প্রতিদিনই কাজে যাওয়ার আগে ভাবি, আজকে গতদিনের চেয়ে আরেকটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে পরিস্থিতির কারণে আমরা সবসময় সতর্কভাবে কাজ করতে পারি না। হয়তো পিপিই পরে কোন একজন রোগীর বাড়িতে যদি যাই তাহলে পিপিই সেখানেই ফেলে আসি। আবার কখনও ফোন আসে বাজারে মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সেখানেও ছুটে যেতে হয়। অথবা কোন একজন রোগী বাজারে চলে আসছে শুনে সাথে সাথে ছুটে যেতে হয়। তখন আসলে নিজের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার সময়-সুযোগ থাকে না। কারণ যত দ্রুত আমরা কাজ করতে পারবো ততো বেশি ঐ এলাকার নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করতে পারবো।

ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ কোথায় কাটাচ্ছেন? এবারের ঈদ নিয়ে নিশ্চয় অনুভূতিও ভিন্ন?
কাউসার মাহমুদ: কর্মস্থলেই ঈদ কাটাতে হচ্ছে। আসলে কখনো বাড়ি ছাড়া ঈদ করা হয়নি। এবারই প্রথম। ঈদের দিন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। এবারের ঈদটা সবার জন্যই একটু ভিন্নরকম। একটাই লক্ষ্য, যে কর্মস্থলে আছি এখানের মানুষকে ভালো রাখাতে হবে। এটাই আমাদের সুখ। এটাই এবার আমাদের ঈদ।

ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় করোনা নিয়ে মানুষের মনোভাব কেমন দেখছেন?

কাউসার মাহমুদ: আমার এলাকায় এখন পর্যন্ত ১০ বাড়িতে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবুও মানুষ খুব বেশি অসচেতন। তারা মনে করে করোনায় তাদের কিছু হবে না, করোনা শুধু পঞ্চাশোর্ধ বয়স যাদের তাদেরই হবে। মানুষের মধ্যে আরেকটা বিষয় ঢুকে গেছে যে রসুন খেলে বা গরম পানি খেলে করোনা সেরে যাবে। কিন্তু আসলে বাস্তবতা তো ভিন্ন। করোনা হওয়ার তো কোন বয়স নাই। আর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলেই কিন্তু বিপদ। তবুও মানুষকে যতটা পারছি সতর্ক করছি।

ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কাউসার মাহমুদ: ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ