অটল অধ্যাপক ফারুক, বললেন- ঢাবি দায়বদ্ধতা অনুভব করে বলেই দুধ গবেষণা

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধসহ ৭২টি খাদ্যপণ্য নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই গবেষণায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রতিবেদনটির দায় নিচ্ছে না খোদ ফার্মেসি বিভাগই। এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যও ঢাবি শিক্ষকদের ওই রিপোর্টকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। এছাড়া গবেষণা প্রটোকল না মানার অভিযোগ তুলে এর বিরুদ্ধে লিগ্যাল অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানান মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন।

ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বায়োমেডিকেল সেন্টারের পরিচালক এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। এ বিষয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি রায়হান আহমেদ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গবেষণার ফলাফলের পক্ষে এখনো অটল আছেন কিনা?
অধ্যাপক আ ব ম ফারুক: অবশ্যই, আমরা কোনো ভুল করিনি। কোনো অপরাধও করিনি। মানুষকে সচেতন করাই তো আমাদের দায়িত্ব এবং সেটা আমরা করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাদের গবেষণার ফলাফল জার্নালে প্রকাশের ব্যাপারে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
আ ব ম ফারুক: ১৯৫২ সালে ওষুধনীতি হওয়ার পরেও কোম্পানিগুলো এ ধরণের কথা বলেছিলো যে, জার্নালে ছাপানো হয়েছে কিনা। জনস্বাস্থ্যের জন্য কোনো ঝুঁকি বা বিপদ যখন দেখা দেয় তাৎক্ষণিকভাবে সেটা জনগণকে জানানোই হচ্ছে জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের দায়িত্ব। সেখানে জার্নালে ছাপা হলো কি হলো না সেটা দেখার বিষয় না। এটা না জানালেই বরং আমাদের অপরাধ হতো। সেক্ষেত্রে আমি আমাদের নীতিতে ঠিক আছি। এটাই আমাদের দায়িত্ব এবং এটাই আমরা করবো।

দুধ নিয়ে দ্বিতীয় দফা গবেষণা অধ্যাপক ফারুকের, ফলাফল আরও ভয়াবহ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফার্মেসী বিভাগের চেয়ারম্যান আপনাদের গবেষণার দায় অস্বীকার করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলার আছে?
আ ব ম ফারুক: চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব নিতে হয় না। আমরা যারা গবেষণা করি আমাদের দায়িত্ব আমরাই নিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে গবেষণা করে ফলাফল প্রকাশ করা। বিশ্ববিদ্যালয় শুধু অ আ ক খ মুখস্থ করাবে তা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি করে। গবেষণা করবো, রিপোর্ট বের হবে এবং জনগণ সতর্ক হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় জনগনের কাছে দায়বদ্ধতা অনুভব করে। আমরা যেটা প্রকাশ করেছি সেটা সম্পূর্ণ দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রকাশ করেছি। এটা কোনো কোম্পানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে করা নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট টাকা নিয়েই এটা করেছি এবং সরকারের যে ভেজালবিরোধী কর্মকাণ্ড, সেটাকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী এবং মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের বক্তব্যের ব্যাপারে কী বলবেন?
আ ব ম ফারুক: পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সাথে একটা চ্যানেলের টকশোতে এ ব্যাপারে কথা হয়েছিল। আমি উনাকে সেখানে প্রশ্ন করেছিলাম আপনি এভাবে আমাকে সংসদে একিউজড কেন করলেন। আমি তো কখনো বলিনি যে দুধে আর্সেনিক পাওয়া গেছে। উনার উত্তরে যেটা মনে হলো, আসলে তিনি সঠিক তথ্যগুলো পাননি। আমি ভেবেছিলাম বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এরপর দেখলাম মন্ত্রণালয়ের একজন এডিশনাল সেক্রেটারি উনি কি মন্ত্রীর কথায় বলেছেন, নাকি নিজে থেকেই বলেছেন আমি নিশ্চিত না। উনি যে কথাটা বলেছেন সেটা সঠিক না।

দুধ নিয়ে দ্বিতীয় দফা গবেষণা অধ্যাপক ফারুকের, ফলাফল আরও ভয়াবহ

আমাদের নিজস্ব গবেষণাগুলো পিআর রিভিউ জার্নালে ছাপা হতে গেলে কমপক্ষে এক বছর থেকে দেড় বছর লেগে যাবে। আমার নিজের কয়েকটা পেপারও এখনো ছাপা হয়নি। সেখানে এটা দিলেও ছাপাতে ছাপাতে আরো এক বছর লেগে যাবে। তো এক বছর না ছাপানো পর্যন্ত আমরা কি বসে থাকবো? এর ফলে জনস্বাস্থ্যের তো ক্ষতি হতেই থাকবে। এটা তো ঠিক না। আমরা ভালোভাবেই জানি কোনটা পিআর রিভিউতে দেয়া দরকার আর কোনটা দরকার না।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে সতর্ক করা যাতে তারা দুধ সিদ্ধ করে খায়। প্যাকেট কেটে স্ট্র দিয়ে বিজ্ঞাপনের মত যেভাবে ঢকঢক করে করে খাওয়া হয় সেটা উচিত না। দুধ সিদ্ধ করে খেতে হবে। কেননা সেখানে জীবাণু পাওয়া গেছে। আমারও ধারণা ছিল যে পাস্তুরিত দুধে কোনো ভেজাল থাকবে না, কিন্তু দেখা গেল সেটা হচ্ছে। তাই এটা জনগণকে জানাতে হবে। এটাই ছিল জনগণকে জানানোর উদ্দেশ্য যাতে তারা রোগাক্রান্ত না হয়।

আর সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন বিএসটিআইকে জানানোর উদ্দেশ্য ছিল তারা যেন এগুলো মনিটর করে। আমরা তো দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ না। সরকার এবং জনগণ আপনাদের দায়িত্ব দিয়েছে আপনারা যেন এসব মনিটর করেন। মানবদেহের চিকিৎসার এন্টিবায়োটিক যখন দুধে পাওয়া যাচ্ছে সেটা মনিটর অবশ্যই করতে হবে। কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্যে বলবো, এখানে যে এন্টিবায়েটিক পাওয়া যাচ্ছে সেটা আপনাদের দোষ না। আপনারা যেখান থেকে দুধ সংগ্রহ করেন সেটা ভালোভাবে ম্যানেজ করুন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আ ব ম ফারুক: ধন্যবাদ।

দুধ নিয়ে দ্বিতীয় দফা গবেষণা অধ্যাপক ফারুকের, ফলাফল আরও ভয়াবহ


সর্বশেষ সংবাদ