জাপানি নামের ব্রান্ডে ঢাবির ছাত্র বাবা-ছেলের বাজিমাত

মিয়াকোর পণ্যসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ
মিয়াকোর পণ্যসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ  © সংগৃহীত

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ ইদ্রিস আহমেদ। ‘আহমেদ ট্রেডিং’ নামে ওই ব্যবসা শুরু হলেও পরে বৈদ্যুতিক পণ্যে নজর দেন তিনি। একপর্যায়ে ভিসিআর ও ক্যাসেট প্লেয়ার বিক্রির মাধ্যমে পা রাখেন বৈদ্যুতিক পণ্যের বাজারে। ১৯৯০ সালের দিকে গৃহস্থালি পণ্যের ব্যবসায় নামেন। সেটি ছিল মিয়াকো ব্র্যান্ডের একটি ব্লেন্ডার।

এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি মোহাম্মদ ইদ্রিস আহমেদকে। তিন দশক পর এখন ৩৬ ক্যাটাগরির অন্তত ৪৫০ পণ্য রয়েছে মিয়াকোর। আহমেদ ট্রেডিংয়ের নাম হয় মিয়াকো অ্যাপ্লায়েন্স লিমিটেড। ২০০৮ সালে ইদ্রিস আহমেদ মিয়াকোর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন বড় ছেলে ড. মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদকে।

মিয়াকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাভিদ জানান, কোনো ব্যবসার সুযোগ দেখলেই বাবা সেটি লুফে নিতেন। ছোটবেলায়ই পরিচিত হন তার বাবার ব্যবসার সঙ্গে। তখন হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজারের সিংহভাগই ব্লেন্ডার আর আয়রনের দখলে ছিল। সে সময় মিয়াকোকে ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড হিসাবে গড়ে তোলায় মন দেন।

মোহাম্মদ ইদ্রিস কি কারণে জাপানী শহরের নামে নিজ ব্র্যান্ডের নামকরণ করেছেন, সে বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. নাভিদ বলেন, ‘৮০-৯০-এর দশকে বাংলাদেশে জাপানি পণ্যের জনপ্রিয়তা ছিল। এ জন্য বাবা জাপানি নামে ব্র্যান্ড চালুর কথা ভাবেন। ইন্দোনেশিয়ান ড্যানিয়েল কুসমানের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন মোহাম্মদ ইদ্রিস। মিয়াকো নামে পণ্য আমদানি করেন।

আরো পড়ুন: উৎক্ষেপনের অপেক্ষায় দেশে তৈরী প্রথম রকেট

ড. নাভিদ বলেন, ‘তারা নতুন বাজার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছিলেন। ইন্দোনেশিয়ায়ও কোম্পানিটি টিকে আছে, উৎপাদনেও মনোযোগ দিচ্ছে। মিয়াকো প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকার পণ্য নিয়ে কাজ করে। তবে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয় না। বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য বাজেট নেই আমাদের। মিয়াকো সব অর্থ গুণমান বাড়ানোর জন্য ব্যয় করে।

পারিবারিক ব্যবসায় প্রবেশের আগে ড. নাভিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর আইবিএর ডক্টর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিবিএ) প্রোগ্রামে তিনি যোগ দেন। প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

২০১২ সালে মিয়াকো কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ব্যানারে দেশে গৃহস্থালি সরঞ্জামাদি সংযোজন শুরু করে। কিছু পণ্য উৎপাদনও শুরু করে। এখন প্রতিষ্ঠানের ৪৫০ পণ্যের মধ্যে প্রায় ৪০০টি আমদানি করা হয় চীন, তুরস্ক, ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। বাকি ৪৩টি সংযোজন করা হয়। বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় সাতটি পণ্য।

জানা গেছে, এখন মিয়াকোর আউটলেট ছয়টিই ঢাকায়। তবে সারা দেশে ৪০টি পার্টনার আউটলেট আছে। খুচরা বিক্রেতারাও বিক্রি করে।প্রথমদিকে ইদ্রিসের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পণ্য বাজারজাতকরণ। তবে পণ্যের গুণমান নিয়ে ব্যবহারকারীরা সন্তুষ্ট হওয়ায় ছড়িয়ে পড়ে মিয়াকোর নাম। গ্রাহকরাই বিপণন চ্যানেলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন নাভিদ।

আরো পড়ুন: উপবৃত্তির টাকায় মিনি বিমান তৈরি করল মানবিক বিভাগের এক ছাত্র

তিনি বলেন, করোনা মহামারি মিয়াকোর ওপর প্রভাব ফেলেছে। প্রথমে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল। তখন মানুষ ঘরবন্দি থাকায় বৈদ্যুতিক পণ্য কেনায় খরচ করতে শুরু করে। পরে প্রতিযোগিতা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সস্তা বা নকল ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি শুরু করে। তবে পরিস্থিতি তখন ভালোই ছিল। শেষদিকে বিক্রি কমে আগের অবস্থায় চলে যায়।

মোহাম্মদ ইদ্রিসের চার সন্তানই মিয়াকোর পরিচালক। তারা চার বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন তারা। বড় ছেলে মমতাজ আহমেদ তত্ত্বাবধান করেন প্যাকেজিং ও ডিজাইনের। পণ্য সোর্সিং, পরিকল্পনা, কারখানা, বিক্রয় ও উন্নয়ন পরিচালনা করেন নাভিদ। তার ছোট ভাই হাসিব আহমেদ দেখভাল করেন কর্পোরেট বিক্রয়ের। আর রিটেইল ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করেন সর্বকনিষ্ঠ জায়েদ আহমেদ।


সর্বশেষ সংবাদ