মুহম্মদ বিন তুগলকের সভাতেও পরিবেশন করা হত সিঙ্গারা

  © সংগৃহীত

পর্যটক ইবন বতুতার বিবরণে পাওয়া যায়, মুহম্মদ বিন তুগলকের সভায় মাংস, পেস্তা, আখরোট, আমন্ডের পুর ভরা সিঙ্গারা পরিবেশন করা হত। কুতাব নামে একটি পদেরও উল্লেখ পাওয়া যায় আইন-ই-আকবরিতে, তৎকালীন হিন্দোস্তানে যা পরিচিত ছিল সানবোশাহ নামে। তবে আলুর পুরে নধরকান্তি চেহারাটি তার তখনও রপ্ত হয়নি।

চা, সিঙ্গারা... কোনওটাই বাঙালির নয়। তবুও বাঙালির আড্ডা জুড়ে এই জুটির সহাবস্থান আদি ও অকৃত্রিম। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে, সান্ধ্য চায়ের আড্ডা বা কলেজ ক্যান্টিনের হুল্লোড়ে অথবা দূরপাল্লার ট্রেনে জানালার ধারে বসে শালপাতায়। সিঙ্গারার জায়গা দখল করতে পারেনি কেউ।

জন্ম হোক যথাতথা

সিঙ্গারার জন্মসূত্র জানতে গেলে যেতে হবে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। পারসি শব্দ সানবুসাগ থেকেই সামোসার উৎপত্তি। ইরানী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সানবুসাগ বা সাম্বুসা এসে পৌঁছায় ভারতে। তাঁরা সারাদিন ব্যবসার কাজে রাস্তায় ঘুরতেন। রাতে আশ্রয় নিতেন সরাইখানায়। সেখানেই মাংসের পুর ভরে তৈরি হত সিঙ্গারা। পরের দিনের পাথেয় হিসেবে। মাংসের পুর ভরা এই ভাজা পদ অনেকক্ষণ ভাল থাকত। সেই জন্যই তা রাস্তার খাবার হিসেবে সঙ্গে নেওয়া হত। ইরানী ঐতিহাসিক আবুল ফজল বৈহাকির ‘তারিখ-এ-বৈহাগি’তেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এ দেশে পৌঁছে স্বাদে-গন্ধে তার রূপ আরও খোলতাই হল।

চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি মালওয়ার সুলতানের সভায় পরিবেশিত হত সিঙ্গারা। ফারসী ভাষায় লেখা মধ্যযুগের কুকবুক ‘নিমতনামা’য় উল্লেখ পাওয়া যায় প্রায় আট রকম সিঙ্গারার, যা পরিবেশিত হত সভায়। তাদের মধ্যে কোনওটায় থাকত পাঁঠার মাংসের পুর, কোনওটায় হরিণের মাংস। বাদাম, গোলাপজল, এলাচ, শুকনো দুধ দিয়েও মিষ্টি পুর ভরা সিঙ্গারার চল ছিল সে সময়ে।

সাম্বুসা থেকে সিঙ্গারা

এদিকে আমিষ-নিরামিষের ভাগও যে তখন বাড়িতে কড়া হাতে শাসন করে আসছে বাঙালি। নতুন সিঙ্গারার উদ্ভাবনে বাঙালিকে রসদ জোগাল পর্তুগিজ। ভারতে উপনিবেশ স্থাপন করল পর্তুগিজরা। তাদের সঙ্গেই এসে পড়ল বাটাটা বা বাতাতা। বাংলায় আলু। বাঙালির পাতে আলুই সিংহভাগ দখল করে বসল। আর হেঁশেলে নিরামিষ পদের বাহারে নতুন সংযোজন হল আলুর পুর ভরা সিঙ্গারা। তবে পুরও বদলাতে থাকল। উত্তরে বরাহনগর থেকে গঙ্গাকে ডান হাতে রেখে হাঁটতে হাঁটতে দক্ষিণের দিকে এগোলে সিঙ্গারার স্বাদ ও গন্ধ বদলাতে শুরু করবে। মিষ্টি পুরে নোনতা হাওয়া লাগবে ক্রমশ।

সিঙ্গারা তৈরির সহজপাঠ

উপকরণ: ময়দা ২ কাপ, বড় আলু সিদ্ধ ১ টি, কড়াইশুঁটি আধ কাপ, মৌরি আধ চা চামচ, গোটা জিরে আধ চা চামচ, ভাজা জিরে গুঁড়ো আধ চা চামচ, কাঁচা লঙ্কা ২টি, আদা বাটা ২ চা চামচ, দারচিনি গুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন-চিনি স্বাদ মতো।

প্রণালী: ময়দায় সামান্য নুন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল দিয়ে ময়ান দিন। ফুলকপি ছোট টুকরো করে ভাপিয়ে নিন। তেল গরম হলে গোটা জিরে, মৌরি ও আদা বাটা ফোড়ন দিন। এর মধ্যে সব মশলা, ফুলকপি, কড়াইশুঁটি ও আলু দিয়ে ভাল করে নেড়ে নিন। ময়দা থেকে লেচি কেটে বেলে নিন। মাঝখান থেকে দু’ভাগে কেটে তিনকোণা করে মুড়ে পুর ভরে মুখ বন্ধ করে দিন। মাঝারি আঁচে ডুবো তেলে প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট ধরে ভাজতে হবে সিঙ্গারা।

সূত্র: আনন্দবাজার


সর্বশেষ সংবাদ