জাপানে বাংলাদেশি গবেষকের যুগান্তকারী সাফল্য

সহজেই রক্তের আলঝেইমার নির্ণয়ের পদ্ধতির উদ্ভাবন

  © সংগৃহীত

জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য এনে দিয়েছেন বাংলাদেশি গবেষক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ও তার দল। রক্ত থেকে আলঝেইমার নির্ণয়ের একটি সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তারা। এ গবেষণা জীবন বাঁচাতে সহয়তা করবে লাখো মানুষের।

গবেষণাটি গুরুত্বের কারণে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে গোটা জাপানে। পত্রিকার পাতায় পাতায় শোভা পেয়েছে গবেষকদের ছবি। সর্বমহলের প্রশংসায় ভাসছেন গবেষকেরা। দিকে দিকে জয়গান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

ডা. আব্দুল্লাহ বর্তমানে রয়েছেন জাপানের নাগোয়া সিটি ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্সে। সেখানে অধ্যাপক মাকোতো মিচিকাওয়ার অধীনে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। এর আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করে নাগোয়া সিটি ইউনিভার্সিটি থেকেই পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

নাগোয়া সিটি ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্স

আলঝেইমার রোগটি মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত করে ফেলে। এতে করে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং একপর্যায়ে মানুষ মারা যায়। এখন পর্যন্ত আলঝেইমার রোগ নির্ণয়ের জন্য পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET) ও সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (CSF) এনালাইসিস করা হয়। যার একটি অনেক ব্যয়বহুল এবং আরেকটি ঝুঁকিপুর্ণ ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই এই গবেষণা যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত তাদের। যার মাধ্যমে এটি সনাক্তে ব্যয় যেমন কমবে তেমনি কমবে ঝুঁকিও। যার মাধ্যমে বাঁচিয়ে তুলতে পারবেন অনেক মানুষের জীবন।

গবেষণার বিষয়ে জানিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের শরীরে এক্সোজম আছে, একটি ছোট্ট বহির্মুখী ভেসিকেল (৩০-১০০ ন্যানো মিটার) এবং অ্যান্ডোসোমাল সিস্টেম থেকে প্রাপ্ত—যা নিউরোন, অ্যাস্ট্রোসাইট এবং অলিগোডেনড্রোসাইটের মতো বিভিন্ন ধরনের কোষের দ্বারা নিঃসৃত এবং রক্ত, প্রস্রাব, লালা এবং সেরিব্রোস্পাইনাল তরল হিসেবে অনেক দেহের তরল থেকে প্রাপ্ত। শরীরের কোষ থেকে কোষে বাহক হিসেবে যোগাযোগ রক্ষা করে এক্সোজম। ফ্লটিলিন (Flotillin) আমাদের শরীরের একটা প্রোটিন (Lipid raft) যা এই এক্সোজম মার্কার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’

গবেষক দল দেখেছেন, আলঝেইমার আক্রান্ত রোগীর রক্তে ফ্লটিলিনের উপস্থিতি অনেক কম। তারা মনে করেন, রক্তের এই ফ্লটিলিন পরিমাপ করে আগে ভাগেই শরীরের আলঝেইমারের উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

মানুষের ব্রেইনে আলঝেইমারের তুলনা

তাদের এই গবেষণাকর্মটি ‘জার্নাল অব আলঝেইমারস ডিজিজ’ নামক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে এবং আলঝেইমার নিরূপণের এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ডা. আব্দুল্লাহ ছাড়াও গবেষক অধ্যাপক মিচিকাওয়া এবং অন্য আরেক অধ্যাপকের নামে পেটেন্ট করা হয়েছে।

গবেষণাকর্মটি এর মধ্যে জাপানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। জাপানের অনেকগুলো জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেল এই আবিষ্কার নিয়ে খবর প্রকাশ ও প্রচার করেছে। বিজ্ঞানবিষয়ক অনেক ওয়েব সাইট ও ব্লগ ডা. আব্দুল্লাহ ও তার গবেষক দলের এ জীবন রক্ষাকারী আবিষ্কার নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে।

এ বিষয়ে মাকোতো মিচিকাওয়া বলেছেন, ‘শরীরের এক ফোঁটা রক্ত থেকেও ফ্লটিলিন পরিমাপ করে রোগের লক্ষণ প্রকাশের অনেক আগেই আলঝেইমারের উপস্থিতি নিরূপণ করা সম্ভব।’ তারা এখন জাপানের এক স্বনামধন্য কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কম খরচে আরো সহজে কীভাবে এটি ব্যবহার করা যায়, সেজন্য কাজ করছেন।

জানা গেছে যে ‘এমাইলোয়েড বেটা’ নামক এক অস্বাভাবিক প্রোটিন রোগের লক্ষণ প্রকাশের প্রায় বিশ বছর আগেই আলঝেইমার রোগীদের ব্রেইনের কোষে জমতে শুরু করে। ফ্লটিলিন পরিমাপ করে যদি অনেক আগেভাগেই, সহজে এবং কম খরচে আলঝেইমার রোগ নির্ণয় সম্ভব হয় তবে তা অবশ্যই রোগীদের জন্য অপরিসীম কল্যাণ বয়ে আনবে।

আরো পড়ুন:

সাদ্দামের সাত বার ফেল নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ভিপি নুরের (ভিডিও)

সাদ্দাম মানসিকভাবে অসুস্থ, ডাক্তার দেখাতে হবে: নুর


সর্বশেষ সংবাদ