ফসলের রোগ দমনের কাজ করবে ছত্রাক

কীটনাশকের ব্যবহার কমবে ৪০-৬০ শতাংশ

  © ফাইল ফটো

ট্রাইকোডার্মা হচ্ছে মাটিতে মুক্তভাবে বসবাসকারি উপকারী ছত্রাক। মাটিতে বসবাসকারী উদ্ভিদের ক্ষতিকর জীবাণু যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও নেমাটোড ধ্বংসকারী এই জৈব বালাইনাশক পাওয়া যায় উদ্ভিদের শিকড়স্থ মাটি, পঁচা আবর্জনা ও কম্পোস্ট ইত্যাদিতে। ট্রাইকোডার্মা প্রকৃতি থেকে আহরিত এমনই একটি অণুজীব যা জৈবিক পদ্ধতিতে উদ্ভিদের রোগ দমনের জন্য ব্যবহার করা যায়। ফলে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমবে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। এটি ট্রাইকো-সাসপেনশন, পাউডার এবং পেস্ট আকারে উৎপাদন সম্ভব। নিয়মানুযায়ী স্প্রে করলে এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক ও মাটিতে বসবাসকারী হওয়ায় একবার ব্যহারের ফলে সেটি মাটিতে ২ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ীভাবে থেকে যায়। পঁচা আবর্জনায় ‘ট্রাইকো-সাসপেনশন’- এর জলীয় দ্রবণ মিশিয়ে দ্রুত সময়ে ট্রাইকো-কম্পোস্ট উৎপাদন করা সম্ভব।

ট্রাইকোডার্মার সক্রিয়তার ব্যাপারে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.আ ফ ম জামাল উদ্দীন বলেন, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক কীটনাশক যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছে অনুরূপ ক্ষতি করছে মানব দেহের। এই ক্ষতির হাত থেকে জীবন রক্ষায় কেবল গবেষক নয় সাধারণ কৃষকও বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছে। ট্রাইকোডার্মা মাটির গঠন ও বুনট উন্নত করে পানিধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পানির অপচয় রোধ ও সেচ খরচ কম হওয়ার ফলে কৃষকের আর্থিক সাশ্রয় হয়। এছাড়া ট্রাইকো-জৈব সার মাটিতে বসবাসকারী ট্রাইকোডার্মা ও অন্যান্য উপকারী অনুজীবের সংখ্যা বাড়িয়ে অনুর্বর মাটিকে দ্রুত উর্বরতা দান করে এবং ক্ষতিকর ছত্রাককে ধংস করে। এটি মাটির অম্লতা, লবনাক্ততা, বিষক্রিয়া প্রভৃতি রাসায়নিক বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের গবেষণা মাঠে টমেটো উৎপাদনে ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করেছিলাম, এতে টমেটোর উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১.৫গুন বৃদ্ধি পয়েছে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও কমেছে ৪০ শতাংশ। আমি মনে করি ট্রাইকোডার্মার ব্যবহার জৈব কৃষির বিস্তারকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। তবে এর ব্যবহারকে কৃষক পর্যায়ে আরো বিস্তার ঘটাতে হবে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে উর্বরা জমির পরিমাণ। বর্ধনশীল জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে আমদের নজর দিতে হচ্ছে উৎপাদন বৃদ্ধি ওপর। একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন ও অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জমির জৈব বস্তুর পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। কমে যাচ্ছে ফসলের গুনত মান। তাই রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা এখন সময়ের দাবি। আবাদি জমিতে জৈব বস্তুর পরিমাণ শতকরা ৫ ভাগ থাকার কথা থাকলেও তা নেমে গেছে শতকরা ১ ভাগে। ফলে শুধুমাত্র জমির মুখ্য উপাদান নয় এমনকি গৌণ খাদ্য উপাদান বিশেষ করে জিংক, বোরন এসবের জন্য ক্রমে একটি সংকটময় অবস্থায় চলে যাচ্ছে আমাদের অনেক আবাদি জমি। বলা বাহুল্য, এখন আমাদের দেশে ফসলের নিবিড়তা হলো শতকরা ১৯২ ভাগ। সব কিছু মিলে জমির গুণাগুণই যাচ্ছে পাল্টে। টেকসই কৃষির জন্য তা এখন এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাসায়নিক সারের বিপরীতে জৈব বালাইনাশক ট্রাইকোডার্মার ব্যবহারের টেকসই কৃষিকে আরো একধাপ এগিয়ে দেবে বলে আশা করেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা ।


সর্বশেষ সংবাদ