শেকৃবি গবেষণা

আম ফলবে বছরের যেকোন সময়

  © টিডিসি ফটো

ফলের রাজা আম। দেশে বিভিন্ন জাতের ফল থাকলেও দেশের বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের ফল এটি। তবে মৌসুমী ফল হওয়ায় সারা বছর চাহিদা থাকা সত্ত্বেও একটি নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বাজারে আম পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় পাওয়া গেলেও তা মানসম্মত কিনা তা নিয়ে থেকে যায় প্রশ্ন। তবে এবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) গবেষকদল একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে সারা বছরই আম উৎপাদন করা যাবে। শেকৃবি’র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক উদ্যানত্ত্ববিদ আ ফ ম জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরের যেকোনো সময় আম উৎপাদনে সক্ষম হয়েছেন। আম গাছে প্রয়োজন মত হরমোন প্রয়োগ করে কৃত্রিম উপায়ে আম উৎপাদনের এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে 'ফোর্সিং’ পদ্ধতি।

শেকৃবি'র কৃষি অনুষদ ভবনের ছাদে ছোট ছোট ড্রামে আম গাছ লাগানো রয়েছে। যেখানে 'ফোর্সিং' পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে আম উৎপাদন করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনুষদ ভবনের ছাদে সাদা রং করা ড্রামে নির্দিষ্ট দূরত্বে প্রায় ৩০টির মত মাঝারি আকৃতির আম গাছ রয়েছে। শীতকাল হলেও অধিকাংশ গাছেই এসেছে মুকুল। যার মধ্যে কিছু গাছে ধরেছে ছোট ছোট আম। কোন কোন গাছের আমগুলো আবার পরিপক্কও হয়ে গেছে।

গবেষক দলের সদস্য মারজিনা আক্তার রিমা বলেন, ‘আমরা প্রায় ২৪টি আম গাছে 'ফোর্সিং' পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। যেগুলো থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা ন্যামডকমাই জাতের। যাতে পরীক্ষামূলক ভাবে বিভিন্ন মাত্রায় কয়েক ধরনের হরমোন ব্যবহার করা হয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ৩ মাসের মাথায় গাছগুলোতে মুকুল আসে। ফলে মৌসুম ছাড়াই একই রকম মুকুল আনতে আমরা সক্ষম হই। '
চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যাপারে গবেষণা দলের অন্যান্য সদস্যরা জানান, এই পদ্ধতিতে আম ফলাতে গাছের বাড়তি পরিচর্যা দরকার নেই । তবে গাছের সঠিক বৃদ্ধি ও দ্রুত মুকুল ধরানোর জন্য হরমোন প্রয়োগের আগে গাছের মরা ডালপালা ছেঁটে দিতে হয়। এরপর ক্ষতিকর পোকামাকড় মেরে পানি স্প্রে করে পাতা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। গাছের পাতায় ও গোড়ার মাটিতে হরমোন গুলো প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত হরমোন প্রয়োগের তিন মাসের মাথায় গাছে মুকুল আসে।

গবেষক দলের প্রধান ড.জামাল বলেন, দেশে বারোমাসি ‘বারি১১’ জাতের আম অনেক আগে থেকে চাষ হয়। কিন্তু তা বছরে শুধু একবারই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফল দেয়। এছাড়া এ আমের স্বাদ মৌসুমি আমের তুলনায় আলাদা এবং ফলনও কম। কিন্তু ‘ফোর্সিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরের যেকোনো সময় ফল ধরানো যাবে। এতে আমের স্বাদ এবং ফলনে কোন তারতম্য হবে না। বরং স্বাদ ও ফলন হবে মৌসুমি আমের মতোই। আমাদের এই গবেষণার মূল লক্ষ্য হল,মৌসুম ছাড়া বছরের যে কোন সময় আম ফলাব। তাতে আম চাষিরাও বাড়তি দাম পাবে। ’

ড. জামাল আরো বলেন, কৃষক পর্যায়ে এই পদ্ধতি ছড়িয়ে দেবার জন্যও আমরা কাজ করছি। আমার তত্ত্বাবধানে সাভারের কাশিমপুরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) দেশীয় বিভিন্ন জাতের আম গাছে এ প্রযুক্তি নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা চলছে। আমরা আশা করি আগামী বছর এ গবেষণার ফলাফল কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ