একাদশে ভর্তি: শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপ মাথায় রেখে কলেজ নির্বাচন করতে হবে

‘অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক আলোচনা ও পরামর্শ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান
‘অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক আলোচনা ও পরামর্শ’ শীর্ষক অনুষ্ঠান

শিক্ষা চলমান, সবকিছু থমকে গেলে এটা থামতে পারে না। থেমে নেই-ও। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে অনলাইন ক্লাস তো বটেই, শুরু হতে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণীর ভর্তি প্রক্রিয়াও। ইতোমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে তারিখ। শিক্ষাবিদরা বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিকের দুই বছর শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে যেন, সেই প্রতিষ্ঠানই তার পরবর্তী শিক্ষাজীবনের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করে।

‘অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক আলোচনা ও পরামর্শ’ শীর্ষক একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে এমন আহ্বানই জানিয়েছেন তারা। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটে অবস্থিত ‘আইডিয়াল কমার্স কলেজ’ রোববার রাতে উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মো. সাইদুর রহমান।

তথ্যমতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ৯ আগস্ট থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে। চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। মূলত এই ভর্তিসংক্রান্ত নানা দিক নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পরামর্শ দিতেই উন্মুক্ত এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে আইডিয়াল কমার্স কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. এম এ হালিম পাটওয়ারী বলেন, দেশে মহামারি করোনাভাইরাস এবং বন্যা পরিস্থিতির কারণে সবকিছু বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর আগামী ৯ আগস্ট থেকে একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে অভিভাবকদের দিক-নির্দেশনামূলক বার্তা দেয়ার জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করে হালিম পাটওয়ারী বলেন, এসএসসি পাশ করা একজন শিক্ষার্থীর একাদশে ভর্তি হওয়া শিক্ষাজীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিক্ষা জীবনের এ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে যায় শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারণে। এজন্য অভিভাবকদের উচিত— শিক্ষার্থীবান্ধব কলেজ নির্বাচন করে তাদের সন্তানদের সঠিক পথ দেখানো।  শুধু তাই নয়, এইচএসসি পড়ার পর একজন শিক্ষার্থী যেন তার পরবর্তী স্টেপ তথা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজ কিংবা পছন্দের অন্য প্রতিষ্ঠানে চান্স পায়, সেই দিকটি মাথায় রেখেও কলেজ নির্বাচন করতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. সামছুল হুদা বলেন, প্রতিষ্ঠাকালের চাহিদা অনুযায়ী আইডিয়াল কমার্স কলেজ একটি রুচিশীল প্রতিষ্ঠান হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। যা এখন উত্তোরত্তর এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে যখন কোনটি গার্মেন্টস আর কোনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এটা বোঝার উপায় ছিল না তখন হালিম পাটওয়ারী নিজ উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তিনি  আরো বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিবেশটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেটা শিক্ষার্থীদের ধরে রাখবে এবং সেটা অভিভাবকদের জন্যও সন্তুষ্টির জায়গা। অভিভাবকরা যেন বলতে পারেন, আমার সন্তানটা ভালো পরিবেশে পড়াশোনা করছে। এজন্য ভর্তির বিষয়ে অভিভাকদেরকেই আগে সচেতন হতে হবে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন,  এখনকার জ্ঞান চর্চায় আমাদের শিক্ষার্থীরা আনন্দ খুঁজে পায় না। আমাদের অভিভাবকরাও সন্তানদের থেকে শুধুমাত্র ভালো রেজাল্ট আশা করে। আজকাল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর অভাব নেই। কিন্তু এদের অনেকে আছে, যারা পরবর্তীতে ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে টেকে না। কারণ, এসব শিক্ষার্থী শুধু কিছু বিষয় মুখস্ত করে জিপিএ-৫ পেয়েছে, ভালো পড়ালেখা করেনি।

আবার দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি; মোটামুটি পেয়ে পাস করেছে। অথচ সে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে চান্স পেয়েছে। কারণ সে তার লেখাপড়া জীবনে একটা ভিত্তি তৈরি করতে পেরেছে। কলেজ তার এই ভিত্তি তৈরিতে সহায়তা করেছে। এজন্য ক্যারিয়ারের বিষয়টি খেয়াল রেখে শিক্ষার্থীদের ভালো কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে।

আইডিয়াল কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, মহামারি করোনাকালে একাদশ শ্রেণীতে ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা খুবই দু:শ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির যে তারিখ দিয়েছেন সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার কথা বলা হয়েছে। করোনাকালে যে শিক্ষার্থী যে জায়গায় অবস্থান করছে, তারা তাদের স্থানীয় পছন্দের কলেজে ভর্তি হলেই সুবিধা। তা না হলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করলে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যবিধি ব্যহত হবে।

তিনি বলেন, ‘ঢাকার স্থানীয় ভর্তিচ্ছুদের ও অভিভাবকদের আহবান জানাব— আপনারা আমাদের ক্যাম্পাস দেখে যাবেন। আমি যখন প্রথম এই কলেজে যোগদান করি তখনও কিন্তু এর এত সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারিনি। একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে আমাদের কলেজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।

তথ্যমতে, দেশে করোনা সংক্রমণের মধ্যে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দুই মাস লকডাউনের পর অফিস-কারখানা-যানবাহন চালু করে কিছু বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ানো হয়েছে আগামী ৬ অগাস্ট পর্যন্ত।

এদিকে গত মে মাসে এসএসসি ও সমমানের ফল ঘোষণা হলে ৬ জুন থেকে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি শুরুর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। এরপর ৩১ মে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল দেওয়া হলেও করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় একাদশে ভর্তি পিছিয়ে যায়। এবার ২০ লাখ ৪০ হাজার ২৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন পাস করেছে। তারাই এবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন করবে। গত বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকাবোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ