টিউশন ফি: মোবাইলে খুদে বার্তা পাঠিয়ে অভিভাবকদের হুমকি

রাজধানী ঢাকার বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে টিউশন ফি আদায়ের জন্য অভিভাবকদের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে আগাম বেতনও চাওয়া হয়েছে। ফি পরিশোধ না করলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল ও পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত না করার ঘোষণাও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে যেতে শুরু করেছে। সব প্রতিষ্ঠানই টিউশন ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের নোটিশ দিচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, বিকাশ অথবা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে ফি পরিশোধের জন্য তাগাদা দিচ্ছে। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে চরম নৈরাজ্য। টিউশন ফি আদায় করতে পরবর্তী শ্রেণির প্রমোশন ও পরীক্ষাকে ঢাল করেছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে সব বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হবে বলে মোবাইলে খুদেবার্তায় অভিভাবকদের জানানো হয়। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষও খুদেবার্তা পাঠিয়ে টিউশন ফি পরিশোধে অভিভাবকদের নোটিশ করেছে। আর নটর ডেম কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দিয়ে অর্থাৎ একাদশ শ্রেণির সবাইকেই দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ঘোষণা করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বার্ষিক ও টিউশন ফি পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, টিউশন ফি নিয়ে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের বচসা হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা অভিভাবকদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষকদের কাজে লাগাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকরা এ ইস্যুতে পরস্পর চরম বৈরী পরিস্থিতিতে জড়ালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা জারি করেনি। কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ গত ২৩ এপ্রিল 'টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের বাধ্য করা যাবে না' মর্মে নোটিশ জারি করলেও তাতে পাত্তা দিচ্ছেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

করোনার কারণে সারাদেশের বিপুলসংখ্যক অভিভাবক টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারেননি। তাদের বক্তব্য, অভিভাবকদের খুব কম সংখ্যকই সরকারি চাকরি করেন। করোনাকালে বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো চরম আর্থিক চাপে পড়েছে। তাদের সংসার চালিয়ে নেওয়াই দায়। এ অবস্থায় বন্ধ স্কুলের টিউশন ফি পরিশোধের জন্য বার বার চাপ সৃষ্টি করা অন্যায়।

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা বলছেন, বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই একমাত্র আয় টিউশন ফি। টানা চার মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বেতন-ভাতার ওপর নির্ভরশীল তারা। এ ছাড়া করোনাকালেও শিক্ষকরা কষ্ট করে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রেখেছেন। তাহলে কেন অভিভাবকরা টিউশন ফি পরিশোধ করবেন না?

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের উভয় পক্ষকেই আমরা সহনীয় আচরণ করার অনুরোধ করব। এ কথা ঠিক যে, টিউশন ফি দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হয়; কিন্তু এই সময়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি কাম্য নয়।’


সর্বশেষ সংবাদ