নোয়াখালীর কলেজগুলোতে আবাসন সংকট, মেসে দুর্ভোগ

  © টিডিসি ফটো

একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও নোয়াখালী জেলার শিক্ষার্থীরা আরও ৮-৯টি কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ নিতে পারে। শুধু এই জেলার শিক্ষার্থীরা নয়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে আসে।

জানা যায়, জেলায় ৮টি সরকারি কলেজের মধ্যে ২টি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে। এছাড়া ডিগ্রি মানের ৬টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসন সমস্যা খুবই প্রকট। যাও আছে তাতে এক রুমে একাধিককে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। বেশির ভাগকেই বাইরে মেস করে থাকতে হয়। এ কারণে বাড়তি খরচ তো হয়ই, এর ওপর অনেক শিক্ষার্থীকেই অনিরাপদ পরিবেশে এবং নানা যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে থাকতে হয়। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে লেখাপড়ার পরিবেশ।

এর মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চৌমুহনী সরকারী এস. এ কলেজ। এটি বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার প্রাচীন বিদ্যাপিঠ। ১৯৪৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে বর্তমানে কলেজটি ১৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার ছাত্র-ছাত্রী এ বিদ্যাপীঠে অধ্যয়নরত। এটি উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় কুমিল্লা বোর্ডের অন্যতম একটি সেরা কলেজ।

এ কলেজে ২টি হোস্টেল (শেরে বাংলা হোস্টেল ও ডিগ্রি হোস্টেল) বহু আগে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু মেয়ের একটি ৪০ সিটের হোস্টেল চালু আছে। এটি অনার্স কলেজ হওয়ায় দূর থেকে আগত ও অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের খুবই দুর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়াও বড় সমস্যা হচ্ছে শৌচাগারের অভাব। পুরাতন ছাত্র শৌচাগারটি অবস্থা একদমই নাজেহাল।

এই বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাশার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পুরাতন একটি ছাত্রী হোস্টেলে কোনভাবে থাকছে ছাত্রীরা। তবে উপজেলা পর্যায়ের কলেজ হিসাবে যে আবাসন থাকার কথা তা আমাদের আছে। আর ক্রুটিপূর্ণ সমস্যাগুলো আমরা অতিদ্রুত সমাধান করবো।

অন্যদিকে, ২১ একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত নোয়াখালীর বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের চিত্র অন্যরকম। যেখানে প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। অথচ এখানে ছাত্রীদের ৮৬ সিটের ১টি হোস্টেল আছে। যাতে আবাসনের জায়গা রয়েছে ২০০ জন ছাত্রীর। নেই ছাত্রদের মানসম্মত হোস্টেল। এছাড়াও নেই পরিবহণের কোন ব্যবস্থা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভাড়ায় এসে ক্লাস করতে হয় নিয়মিত। বর্তমানে কলেজটিতে ১৫টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল মোশারফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের আবাসন সংকট রয়েছে। এখানে ছাত্রদের ৫০০ সিটের এবং ছাত্রীদের ২০০ সিটের ২টি হোস্টেল জরুরি।

নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজ। এটিও অনার্স কলেজ এবং জেলার একমাত্র মহিলা কলেজ। লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, রামগতি, কোম্পানীগঞ্জ বিভিন্ন এলাকার ছাত্রীরা এখানে অধ্যয়ন করে। এ কলেজে ১৮৬ সিটের ১টি হোস্টেল রয়েছে, যাতে ৩০০ শিক্ষার্থীর আবাসন হয়।

এছাড়াও জেলার একমাত্র আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থীর বেশি পড়ালেখা করে। শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, কমনরুম, অডিটোরিয়াম, লাইব্রেরি, আধুনিক ল্যাব ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ক্লাসরুম সঙ্কটের কারণে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে না, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের একটি মাত্র হল যেখানে ৫০ জন ছাত্র থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানে প্রায় ২০০ জন ছাত্র থাকে। আর ছাত্রীদের জন্য একটি মাত্র হল আছে যাতে ৪০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। বাকি শিক্ষার্থীদের বাইরে মেসে থাকতে হয়। নোয়াখালীর এসব শিক্ষার্থীদের বাইরে থাকতে গিয়ে তাদের লেখাপড়ার খরচ বেশি হয়, পড়ালেখা বিঘ্নিত হয়, আর রাজনৈতিক চাপে থাকতে হয়। তাছাড়া মেসে নিয়মিত চুরি হওয়াকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে তারা।

নোয়াখালী কলেজের ছাত্রী নাফিছা। তিনি রামগতির বাসিন্দা। কলেজের হোস্টেলে সিট না পেয়ে বাহিরে মেস করে থাকতে হয়। তিনি জানান, তার বাবা স্কুল শিক্ষক। তিন বোনও পড়াশুনা করছে। মেসে থেকে পড়াশুনা করাতে পরিবারের জন্য আর্থিক চাপটি বাড়তি হয়ে যাচ্ছে। তাই তাদের মতো মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের দাবি, কলেজে আবাসন সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা। এতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ