বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে এসএসসি-এইচএসসি রেজাল্ট কোন দেশ চায়?

উন্নত দেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য কি কি চায় আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে কি কি চায় তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দিলাম। এই তুলনা চিত্র দেখলেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি চায় এইটা মোটামুটি ইউনিভার্সাল; কারণ চীন ভারত থেকে শুরু করে ইউরোপ আমেরিকায় সব জায়গায় দরখাস্তের সাথে যা যা থাকতে হবে বলে সেগুলো নিম্নরূপ:

১. প্রার্থীর অবশ্যই পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে এবং ন্যূনতম একটি পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা কাঙ্ক্ষিত।

২. কোন prescribed বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কোন নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করার বাধ্যবাধকতা নেই। এর পরিবর্তে একটি কভার লেটার দিতে বলে।

৩. একটি সংক্ষিপ্ত রচনা যেখানে থাকবে একাডেমিক ও প্রফেশনাল অভিজ্ঞতার বিবরণ, কিভাবে প্রার্থী প্রতিষ্ঠানের মান বাড়াতে সাহায্য করতে পারেন তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ, এবং কিভাবে প্রার্থী বিভাগের বিদ্যমান গবেষণার উন্নতি ঘটাবেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ। এছাড়া প্রার্থী ভবিষ্যতে কি ধরণের গবেষণা করতে ইচ্ছুক তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

৪. শিক্ষকতার একটি সংক্ষিপ্ত স্টেটমেন্ট যেখানে থাকবে প্রার্থীর নিজস্ব টিচিং এপ্রোচ এবং শিক্ষকতার নিজস্ব দর্শনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ।

৫. এই পর্যন্ত যতগুলো গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ লিস্ট।

৬. ন্যূনতম তিনজন রেফারির নাম ও ইমেইল এড্রেস।

এইবার দেখা যাক আমাদের বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহকারী অধ্যাপক হওয়ার জন্য কি কি চায়:

১. বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রণীত একটি prescribed ফর্ম পূরণ করতে হবে।

২. প্রার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বা সমমানের পরীক্ষার উভয়টিতে ১ম বিভাগ/জিপিএ ৪ (৫ স্কেলে), স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কমপক্ষে একটিতে ১ম শ্রেণী থাকতে হবে। তবে সিজিপিএ এর ক্ষেত্রে উভয়টিতে কমপক্ষ কমপক্ষে ৩.৫ থাকতে হবে।

৩. প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অথবা সমমানের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কম পক্ষে ৩ বছরের শিক্ষকতা বা গবেষণার।

৪. স্বীকৃত জার্নালে কমপক্ষে ১টি মৌলিক প্রকাশনা থাকতে হবে। (সেটা দেশীয় গার্বেজ হলেও হবে)!

৫. পিএইচডি থাকলে অন্যান্য যোগ্যতার যেকোন একটি শিথিল করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজের প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির পার্থক্য প্রায় নেই বললেই চলে। আর বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সাথে পার্থক্য আকাশ আর পাতাল। তাহলে আমরা কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্যি সত্যি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারি? এইভাবেই আমরা দেশের আনাচে-কানাচে কলেজ খুলে বিশ্ববিদ্যালয় নামে চালিয়ে দিচ্ছি।

বিশ্বের কোথাও দেখছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে এসএসসি-এইচএসসি রেজাল্ট জানতে চায়। এসএসসি এইচএসসি কেন, অনার্স মাস্টার্সের রেজাল্টই জানতে চায় না। তারা দেখে পিএইচডি, গবেষণা পত্রের সংখ্যা, পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা আছে কিনা ইত্যাদি। [ফেসবুক থেকে]

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ সংবাদ