চরম আর্থিক সংকটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

  © লোগো

চলমান করোনাভাইরাস মহামারীতে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এ সংকট উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গচ্ছিত স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ভাঙতে চাচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) লিখিত ও মৌখিক আবেদন করেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেতে ৫ কোটি টাকার এফডিআর করতে হয়। আর ঢাকার বাইরের মেট্রোপলিটন শহরে ৩ কোটি এবং মফস্বল বা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেড় কোটি টাকার এফডিআর থাকতে হয়।

করোনায় সংকটে পড়ে ইতোমধ্যে এ এফডিআর ভাঙতে ইউজিসিতে যোগাযোগ করেছে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে রয়েছে- রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি এবং জামালপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আর ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এফডিআর সংক্রান্ত আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে ফাইলও উঠেছে। এ আবেদন করার আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউজিসিতে যোগাযোগও করা হয়। সবমিলে ২১টি বিশ্ববিদ্যালয় এফডিআর ভেঙে গোটা ধার কিংবা ঋণ হিসেবে নিতে চান। এফডিআর থেকে প্রাপ্ত সুদও উঠানোর আবেদন করার ব্যাপারে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। করোনার এই অবস্থায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের। তাই তারা স্থায়ী আমানত ভাঙতে চাচ্ছে। আমরা লিখিত আবেদন দিতে বলেছি।

সূত্র জানায়, করোনাকালে মধ্যম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আর নতুন এবং কম সুনামধারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় শতভাগ পর্যন্ত কমেছে। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ও বেশ কমেছে।

রাজধানীর সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আবদুল আজিজ বলেন, জুলাইয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সামার ও ফল সেমিস্টারে বড়সংখ্যক শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষাই হয়নি। এ কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি নেই বললেই চলে। আর আগে পাস করা শিক্ষার্থীরাও ভর্তিতে আগ্রহী নয়। কেননা, অনেকের বাবা-মায়ের চাকরি নেই। কারও ব্যবসা খারাপ।  সবমিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। 

বর্তমানে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৬টি। তবে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে ৯৬টিতে। করোনায় আয় কমে যাওয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের জনবল কমাচ্ছে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কারণ মাস শেষে বড় অঙ্কের ভবন ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নানা ধরনের সংকটে আছে।

এমন সংকটের কারণে রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে একটি ভবন ছেড়ে দিয়েছে। সিদ্ধেশ্বরী ও ধানমণ্ডিতে ক্যাম্পাস থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয় বড় ধরনের জনবল কমিয়েছে। আর শুক্রাবাদে পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় কায়দা করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছ থেকে লিখিত নিয়ে বেতন কম দিচ্ছে। বনানীতে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় জনবলকে ৭০ শতাংশ বেতন দিচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা সংকটাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। শিক্ষার্থী ভর্তি হলে বা বিদ্যমান শিক্ষার্থীরা পাওনা পরিশোধ করলে এ সমস্যা থাকত না।

তিনি জানান, আর্থিক সংকটে পড়েই এখন কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের এফডিআর ভাঙার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ব্যাপারটি ইউজিসি বা মন্ত্রণালয়ের ভেবে দেখা উচিত। পাশাপাশি এ সংকটময় মুহূর্তে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রণোদনা হিসেবে সুদবিহীন ঋণ দিতে পারে। 

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, এফডিআর ভেঙে টাকা তুলে খরচ নির্বাহের জন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ করেছে। তবে আইনে এ ধরনের কোনো সুযোগ আছে কিনা সেটা দেখা প্রয়োজন। আইনি দিক পর্যালোচনা করে করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হবে।


সর্বশেষ সংবাদ