অনলাইন ক্লাস: ইন্টারনেটের চড়া মূল্য বড় সমস্যা

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে মার্চের মাঝামঝি থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টেলিভিশন ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসের শুরু থেকে অধিকাংশ পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। 

এ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ইন্টারনেট ডাটার চড়া মূল্য আর নেটওয়ার্কের দুর্বলতাকেই বড় বাধা বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, করোনার কারণে যখন সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে, তখন ইন্টারনেট ডাটার চড়া মূল্য একটা বোঝা হিসেবে তাদের কাঁধে চেপেছে। তাই সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজের পাশাপাশি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত গতির ইন্টারনেট নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।

তবে খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীরা সুখবর পাবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

জানা যায়, করোনা মহামারির মধ্যে গত ১৮ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকছে। এমন অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটের কবলে পড়ে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে। এ সমস্যার সমাধানে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি জোর দিতে নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। এ অবস্থায় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও ইন্টারনেটের ধীর গতি ও সহজলভ্যতা সবচেয়ে বড় বাঁধা হিসেবে দেখা দেয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ দুই বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি দিতে হবে, তা না হলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সফলতার মুখ দেখবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম জানান, করোনা মহামারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিন্তু ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি এবং ধীর গতির ফলে সেই শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। করোনার মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার যখন সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে, তখন এটা একটা বোঝা হিসেবে আমাদের কাঁধে চেপেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের ছাত্রী শ্যামা মহন্ত বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এর প্রধান কারণ দুটি: আর্থিক অসচ্ছলতা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধীর গতির ইন্টারনেট।

তিনি বলেন, যেহেতু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাই তাদের পক্ষে ইন্টারনেট খরচ যোগানো কষ্টকর।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) ছাত্র মোঃ জোবায়ের হোসেন তুহিন বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’তো রয়েছে। এখন অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে আর্থিক চাপটা আরও বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইন্টারনেটের চড়া মূল্যতো আছে, তার পাশাপাশি আরও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামঅঞ্চলের বলে পর্যাপ্ত মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবে ক্লাস করা অসম্ভব বলা চলে। তাই ইন্টারনেট স্পীড এবং মূল্য কমানো প্রয়োজন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে নেয়াখালী সরকারি কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমি বাসায় ব্রডব্যান্ড লাইন থেকে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। অনলাইন ক্লাসের জন্য উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট ডাটা কিনতে হচ্ছে। এটা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আমাদের ওপরও অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উম্মে হাবিবা জানান, কোভিড-১৯ মহামারী শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী গ্রামীণ এলাকার। এই লকডাউন এবং সোসাল ডিসটেন্স বজায় রাখার জন্য অনেকে গ্রামে ফিরে গেছেন এবং সেখানে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হওয়া এবং শিক্ষকদের পাঠদানে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যায় অনেক বেশি এবং একজন সাধারণ শিক্ষার্থী বা তার পরিবারে পক্ষে এই ব্যয় বহন করা অনেক সময় কষ্ট সাধ্য বিষয়। এ অবস্থায় সরকারের এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেয়া দরকার।

শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট চার্জ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন স্বল্পমূল্যে স্পেসিফিক কতগুলো ডোমেইনের মাধ্যমে ক্লাসগুলো করাচ্ছি এবং করাবো। সেক্ষেত্রে বিনামূল্যে করতে পারলে খুবই ভালো। তা না হলে সেগুলো তারা যেন স্বল্পমূল্যে একসেস করতে পারে সেটির জন্য আমরা টেলিফোন কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা করছি। আমি আশা করছি, খুব শিগগিরই একটা সুখবর পাব। ২৭ জুলাই চাঁদপুরে করোনাভাইরাস পরীক্ষাগার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।


সর্বশেষ সংবাদ