শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট: নানা সংকট তুলে ধরছে অপারেটররা

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বা কম দামে মোবাইল ইন্টারনেট চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। সচেতন নাগরিক সমাজ থেকেও একই আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা এখনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তারা ইন্টারনেটের ওপর বহাল ভ্যাট-ট্যাক্স, স্পেকট্রাম সংকটসহ নানা প্রতিকূলতার কথা বলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে প্রশাসনিকভাবে মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা রাখার সুযোগ নেই। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বা সুলভে ইন্টারনেট দিতে প্রয়োজনে কোম্পানিগুলোর সিএসআর ফান্ড ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনাসভায়ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতে মোবাইল অপারেটরদের প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

তবে বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউজিসির পাওয়া একটি চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুলভে ইন্টারনেট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মোবাইল অপারেটররা এ বিষয়ে নিজেদের সংগঠন এমটবের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে।’ তবে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তিনি। এর কারণ হিসেবে সাহাব উদ্দিন বলেন, ব্যান্ডউইডথ কেনাসহ গ্রাহকের কাছে পৌঁছনোর পথে বেশ কিছু খাতে ব্যয় রয়েছে। রাজস্বও দিতে হয়।

এ বিষয়ে মোবাইল অপারেটরগুলোর কোনো উদ্যোগ দেখছেন না বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন। তিনি জানান, ‘শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিস্তারিত তথ্য নিয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনও করেছে তারা।’ শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বা কম দামে ইন্টারনেট দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও মোবাইল অপারেটরগুলোর কোনো উদ্যোগ তাঁরা দেখছেন না বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি ইউজিসি পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে। ল্যাপটপ আছে ৫৫ শতাংশের। অন্যদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেওয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার উপযোগী ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমকে চালিয়ে নিতে আমরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্বারোপ করছি। ইতোমধ্যে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট প্রদান অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানি সমূহের সাথে আলোচনা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ