উচ্চশিক্ষায় করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১৭ প্রস্তাব

  © সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাবর্ষ পুনরুদ্ধারে ১৭টি প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। এছাড়া করোনাকালে অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত ও বৈষম্যমূলক পন্থায় ‘অনলাইন ক্লাস’ চালু করতে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও চাপ প্রয়োগ আত্মঘাতী হবে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব তুল ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সামিনা লুৎফা এবং বখতিয়ার আহমেদ। এসময় উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়, করোনা মহামারীর বৈশ্বিক বিস্তারের ফলে চলতি বছরের মধ্য মার্চ থেকে সাড়ে তিন মাস ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আক্ষরিক অর্থে বন্ধ রয়েছে।

আরো বলা হয়, এপ্রিল মাস থেকে ইউজিসি থেকে ‘অনলাইন-ক্লাস’ চালুর জন্য কিছু জরিপ কার্যক্রম লক্ষ্য করা গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ খোলার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সমন্বিত নির্দেশনা এখনো আসেনি। অথচ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেহেতু সেশনজট ও নানা সংকটে পড়ার আশঙ্কায় পড়েছে সমগ্র শিক্ষাঙ্গন। তাই শিক্ষা-জীবন পুনরুদ্ধার করার জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বিশেষ অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম চালু করা একটি সম্ভাব্য উপায় হতে পারে।

এসময় ‘তবে অপরিকল্পিত, অপ্রস্তুত, ও বৈষম্যমূলক পন্থায় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তা চালুর চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আত্মঘাতী হবে। তাই এসব শুরুর আগে আমাদের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের বাস্তব অসুবিধার কথা বিবেচনা করতে হবে’ বলে লিখিত বক্তব্যে সতর্ক করা হয়।

এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত যেকোনো শিক্ষা কার্যক্রমের একটি অলঙ্ঘনীয় ও মৌলিক পূর্বশর্ত হচ্ছে সেখানে সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সমান সুযোগ থাকতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ন্যূনতম কোনো বৈষম্য তৈরি করে এমন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার নৈতিক অধিকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই নেই।

আরো বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রযুক্তিগত অবকাঠামো ও সক্ষমতা আজও অনলাইন কার্যক্রম চালানোর ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট, শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল ও লিস্ট-সার্ভ, ই-রিসোর্স বা ই-লাইব্রেরির তেমন কোনো অস্তিত্বই নেই।

অনেক এলাকায় বাসায় নেটওয়ার্ক দুর্বল হওয়ায় বাড়ি থেকে দূরে, রাস্তায় বা মাঠে, বা বাজার বা থানা সদরে গিয়ে সংযোগ পেতে হয় বলে তারা উল্লেখ করেন। বলেন, এরকম স্থানে শিক্ষার্থীর পক্ষে ক্লাসের পাঠে মনঃসংযোগ করার মত পরিবেশও থাকবে না যা বৈষম্য বাড়াবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট কোনো কোনো এলাকায় নিয়মিত এবং লম্বা সময় ধরে চলে যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ডিভাইস চার্জ দেওয়ার মতো বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগও করেছেন।

শিক্ষকরা বলেন, অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষকের আলাদা পাঠ-পরিচালনার দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের যেমন উপযুক্ত প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব রয়েছে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়েরও প্রয়োজনীয় আইটি অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।

এক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ পুনরুদ্ধারে আশু করণীয় হিসেবে ১৭টি প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের মহামারীকালিন বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য মাসিক তিন হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করা ও প্রয়োজনে এর মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তুতি রাখা।

এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ৫০ ভাগ শিক্ষার্থীকে তথ্য-প্রযুক্তি সক্ষমতা অর্জনের জন্য এককালীন ২০ হাজার টাকার বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থনৈতিক বিচারে দুঃসাধ্য হলে তা দীর্ঘ মেয়াদি সুদহীন ঋণ হিসেবে দিতে হবে; সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি কমপক্ষে ৫০ ভাগ কমাতে হবে। একই সঙ্গে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের চাকরি এবং পূর্ণ বেতন নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়া সব শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে হবে দেশের সকল অঞ্চলে প্রয়োজনীয় গতির ইন্টারনেট প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুরুতে শুধু স্নাতোকোত্তর ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইন শিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। প্রাযুক্তিক অবকাঠামো নির্মাণের আগে স্নাতক শ্রেণির ক্লাস শুরু করা অনুচিত হবে।

এছাড়া যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য-প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকটের সমাধান করার কথাও বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, কামরুল হাসান মামুন, কাজী এস ফরিদ, শর্মী হোসেন, অভ্যিনু কিবরিয়া ইসলাম, সিত্তুল মুনা হাসান, খাদিজা মিতু ও আরিফুজ্জামান রাজীব।


সর্বশেষ সংবাদ