পাবলিকের আট লাখ শিক্ষার্থীর ভাগ্যে কী আছে?

করোনা সংকট বাড়লে নেই আগাম প্রস্তুতি

বর্তমানে সারা দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় সোয়া আট লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। করোনার কারণে সবাই ঘরবন্দি। দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে রয়েছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে ইউজিসি নির্দেশনা দিলেও এখনই অনলাইন ক্লাসে আসছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এমনকি করোনা সংকট বাড়লে সামনের সময়ে তাদের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে কী রয়েছে এর সুনির্দিষ্ট সদোত্তর জানাতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তারা।

এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কয়েক মাসের সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বন্ধের ক্ষতি পোষাতে সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্যান্য ছুটি কমিয়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু করোনার সংকট বাড়লে এর প্রস্তুতি কী নেয়া হয়েছে সেটি বলছেন না।

এছাড়া বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পড়াশোনার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই বলে জানাচ্ছেন ইউজিসির চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, বাস্তবতা হলো, বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পড়াশোনার মতো সুযোগ-সুবিধা নেই। সেশনজট কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, সেটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতায় অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হয়তো একটি সেমিস্টারের (ছয় মাস) সেশনজট মোকাবিলা করতে পারবে। তবে ছুটি দীর্ঘ হলে সমস্যা হবে।

গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অন্য শিক্ষার্থীদের মতো এই শিক্ষার্থীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে সংসদ টিভিতে ক্লাস হচ্ছে। কলেজেও বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়েছে।

তবুও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামনের সারির কয়েকটি ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা এখনই অনলাইনে ক্লাসে যাচ্ছে না। কারণ হিসেবে কর্তারা বলছেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থী পড়ছেন। তাঁদের অনেকের যেমন অনলাইনে ক্লাস করার মতো সুযোগ নেই, আবার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্ভবও নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে গত সোমবার অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তিগত অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় অনলাইন ক্লাসে তাঁদের অংশগ্রহণের সক্ষমতা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রায় একই ধরনের অবস্থানে আছে জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, তাঁরাও অনলাইনে ক্লাসের কথা ভাবছেন না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিন ও বিভাগীয় প্রধানদের মতামতের জন্য অপেক্ষা করছে। মতামত পেলে বিকল্প বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইনের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে জরিপ হিসেবে ডিন ও বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পেলে বলা যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডির কার্যক্রম অনলাইনে হলেও নিয়মিত ক্লাস অনলাইনে হবে না। বিকল্প কী করা যায়, সেটিও ঈদের পর বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য শিরীণ আখতার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা অনলাইনে ক্লাস নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সব শিক্ষার্থীর পক্ষে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকে আপত্তি জানিয়েছে। অনেকের ক্লাসে অংশ নেয়ার মতো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নাই।

চবির প্রথম নারী উপাচার্য আরও বলেন, অনলাইনে আমাদের সমস্যা হচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব ছাত্রছাত্রীরা আছে তারা অনলাইনে আসতে পারছে না। তাছাড়া আমাদের কোনো কোনো বিভাগে এক শ্রেণীতেই শতাধিক শিক্ষার্থী, ফলে একটু সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এদিকে সেশন জট নিরসনে বন্ধের পর বিশ্ববিদ্যালয় চালু হলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবারও ক্লাস নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এ ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এখন অনলাইনে ক্লাসের পরিবেশ ও প্রস্তুতি, কোনোটাই তাদের নেই। তারা ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে রয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ