করোনাকাল

সময়টা পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করছি, তবে উঁকি দেয় অজানা আতঙ্ক

ফাহমিদা শান্তা, আবদুল জলিল, নুসরাত জাহান, মাইদুল ইসলাম ও মোমেনা আক্তার (উপরের বাম দিক থেকে)
ফাহমিদা শান্তা, আবদুল জলিল, নুসরাত জাহান, মাইদুল ইসলাম ও মোমেনা আক্তার (উপরের বাম দিক থেকে)  © টিডিসি ফটো

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্বে। এই ভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে নিষ্কৃতি পায়নি বাংলাদেশও। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখন নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। ঘরবন্দি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই দিনগুলো কেমন কাটছে- এ নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। লিখছেন আবদুর রহমান—

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলাম। ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে কেমন কাটছে, কি করছেন— জানতে চাইলে মাইদুল ইসলাম বলেন, এরকম দুর্যোগ পরিস্থিতির মুখোমুখি এই প্রথমই হয়েছি। যখন দীর্ঘ ব্যস্ততার পর হঠাৎ এমন ছুটি পেয়েছি তখন খুব খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু পৃথিবীর অসুখ যে মোটেও সারছে না! বৈচিত্রময় দিন গুলো খুবই মিস করছি। একঘেয়েমি লাগছে। সারাদিন ঘরে বসে থাকতে বিরক্ত অনুভব করছি। তাই বিভিন্ন ধরনের বই পড়ছি, অনলাইন কিছু কোর্স করছি, কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম শিখছি। যদিও মোবাইল গেমিংটা একটু বেশিই হচ্ছে। আমি বাসায় যেতে পারিনি তাই চেষ্টা করি প্রতি নিয়ত বাবা-মা ও পরিবারের অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখতে। প্রতিদিন এক বা একাধিক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করছি, অনলাইনে আড্ডা দিচ্ছি। সব সময় ঘরেই থাকছি আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। আর অপেক্ষায় আছি কখন পৃথিবী সুস্থ হয়ে আবার তার পূর্বের রূপ ফিরে পাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান। হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো সম্পর্কে নুসরাত বলেন, কোয়ারান্টাইনের সময়গুল অনেক বিষণ্ণ। এভাবে ঘরে বন্ধী থাকতে মন চায় না। তাই নিজেকে গৃহ বন্দী না ভাবে গৃহবাসী ভাবছি এই সময়টাকে নানা ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।এইচএসসি পাশের পর থেকে ঈদের ছুটি ছাড়া বাড়িতে আসার তেমন সুযোগ হয় না। তাই পরিবারের সাথে এই সময়টা উপভোগ করছি। মায়ের কাজে সাহায্য করছি। রান্না শিখছি। প্রতিনিয়ত বই পড়ছি। এখন পর্যন্ত ৪৫টা বই পড়েছি। ছোট ভাই বোনদেরকে পড়াচ্ছি এছাড়াও নিয়মিত নামাজ, রোজা আর ইবাদত করেই অনেকটা সময় কাটছে। নিয়মিত গাছগুলোর যত্ন নেওয়া এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসে ফিরে যেতে মন চায়।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী গোলাম রব্বানী মিজান জানান, পরিকল্পনা ছিল রমজানের ছুটিতে বেশি করে টিউশনি নিয়ে একটা ভালো পরিমাণ ইনকাম করে বাবা মাকে ঈদের পোশাক কিনে দিব। কিন্তু করোনা সব পরিকল্পনা নষ্ট করে দিল। দুই মাসের বাসা ভাড়া ফ্রি দিতে হয়েছে, সামনে কি হবে জানি না। বাড়িতে এসে সময় গুলো বোরিং কাটছে। আবার গ্রামে নেট কানেকশনও ভালো মত পায় না।মোবাইল চালিয়েও সময় কাটানোর উপায় নাই। পড়ালেখাও ঠিকমত হয় না। কারণ রিলেটেড টপিকগুলো ইন্টারনেটে খুঁজে বের করতে হয়। তাই অনেকটা প্রোডাক্টভলেস সময় যাচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল জলিল হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো সম্পর্কে তিনি জানান, দুর্যোগ মানেই দুর্গতি! কিন্তু এই দুর্গতি থেকেই নিজের প্রয়োজনে পথ খুজে নিচ্ছি। অনেকটা আকস্মিকভাবেই ক্যাম্পাস থেকে এসেছি। তাই পর্যাপ্ত বই আনতে পারি নি তাই বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ পড়েই বইয়ের ক্ষুধা মিটাচ্ছি। পরিবারের সাথে খুব একটা সময় আগে দিতে পারতাম না। তাই এই সয়মটা পরিবারকেই দিচ্ছি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোমেনা আক্তার জানান, প্রতিবারেই বাড়িতে আসার আগে হল থেকে বের হলেই অদ্ভূত ভালোলাগা জাগে। এবার যেন মনটা একদম নিরাশ; আবার কি আসতে পারবো এই প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসে? বাড়িতে পরিবারের সবার সাথে ভালো সময় কাটলেও কোথায় যেন আবার আতঙ্ক এসে উঁকি দেয়। আমরা কি আসলেই এ মহামারী থেকে রক্ষা পাবো? হয়তো দিনশেষে বলি, সচেতন থাকি, বাকীটা আল্লাহর ইচ্ছা। এভাবেই দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই কেটে যায় বাড়ির কাজে মাকে সহায়তা, টেলিভিশন, ফেসবুকিং আর টুকটাক লেখালেখিতে। এলাকায় একটা সংগঠন গরীবদের জন্যে কাজ করছে, সেখানে গরীবরা যেন খাদ্য সংকটে না ভোগে, সবাই সহযোগিতা করি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা হক শান্তা হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোয়ারিন্টিন জীবন অনেকটা উপভোগ করছি। হল থেকে বই নিয়ে আসি নি বললেই চলে। তাই পড়াশোনা হচ্ছে না মোটেও। তবে পরিবারে কাজে সহযোগিতা করছি। বাবা মায়ের সাথে ধান মাড়াইয়ের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখছি। কতদিন হয় বাবা মায়ের সাথে এভাবে সময় কাটাই না। পরিবারের সবার সাথে ভালোই সময় কাটছে। রান্না শিখছি, ভাই বোনদেরকে পড়াচ্ছি।


সর্বশেষ সংবাদ