অনলাইনে ক্লাস: এগিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাড়া নেই পাবলিকে

অনলাইন ক্লাস বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন আইএসইউ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
অনলাইন ক্লাস বিষয়ে মতামত দিচ্ছেন আইএসইউ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা  © সংগৃহীত

করোনার ছুটিতে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে সারা দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ইউজিসির এ আহ্বানে সাড়া নেই বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

জানা যায়, গত ২৩ মার্চ করোনার বন্ধের সময়টাতে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। একইভাবে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লাইভ ক্লাস অথবা ভিডিও টিউটোরিয়াল পাঠানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতিও।

ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নির্দেশনার আলোকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনার বন্ধে অনলাইনে পাঠদান দেয়া হচ্ছে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে নেয়া এ ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হারও প্রায় শতভাগ। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য অনলাইনে প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুই অনলাইনে সচল রয়েছে। প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে পাঠ নিচ্ছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে একাডেমিক ও প্রশাসনিক সভা করা হচ্ছে। এমনকি আমরা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দিয়েছি।

অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে আরেক শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। অনলাইনে ক্লাসে ৮০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে বলে জানান ইউআইইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এই আপৎকালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে সীমিত পর্যায়ে ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করেছি। এটা মূলত বসে না থেকে সময়কে কিছুটা কাজে লাগানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেটের বেহাল অবস্থার কেউ কেউ অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিতে পারছে না। তাদের ভিডিও ও অডিও ফাইলগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করার অনুরোধ করছি। তাও না পারলে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইউনিভার্সিটি খোলার পরে যথেষ্ট পরিমাণ সময় হাতে নিয়ে ক্লাস করে সিলেবাস শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে আমরা পরবর্তী সেমিস্টার শুরু করব।

আজ থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে যাচ্ছে রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)। এ বিষয়ে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইউজিসি ঘোষণা অনুযায়ী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে তা মোকাবেলার লক্ষ্যে ৪ এপ্রিল শনিবার থেকে ডুয়াল সেমিস্টার শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। বিজ্ঞপ্তিতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনুরোধ করা হয়েছে।

রাজধানীর আরেক বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশও তাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান জানান, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করছি। এছাড়া ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়ে সেটি শিক্ষার্থীদের পাঠাচ্ছি। ফলে তারা বাড়িতে থেকেও পরিপূর্ণ শিক্ষা পাচ্ছে।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করছেন

অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে নতুন গড়ে ওঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি (আইএসইউ)। ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৯ সালে গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয়টিও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিভাগের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ বিভাগের প্রধান দীপ্তি সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপাচার্যের নির্দেশনায় গত ২৪ মার্চ বিবিএর শিক্ষার্থীদের প্রথম অনলাইনের মা্ধ্যমে ক্লাস নেয়া শুরু হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্য প্রোগ্রামগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ক্লাসে অংশ নিচ্ছে। 

অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে ঢাকার বাইরের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। ইউজিসির নির্দেশ অনুযায়ী গত ২৩ মার্চ থেকে অনলাইনে পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) বনমালী ভৌমিক জানান, অনলাইনে পাঠদানের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখভাল করছেন। একইভাবে স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আইআইইউসি)।

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিলেও এক্ষেত্রে তেমন কোনো সাড়া নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। হাতেগোনা দুএকটি বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত পরিসরে ক্লাস নিলেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দেশের সুপ্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে না নেয়ায় সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থীদের শঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। তখন অতিরিক্ত সময় দিয়ে ঘাটতি পূরণ করা হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা করোনার কারণে সমস্যায় পড়ে গেল। যেহেতু এটা একটি জাতীয় সমস্যা তাই একে যেকোনোভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এ সমস্যা যখন শেষ হয়ে আসবে তখন আমাদের শিক্ষকরা বিষয়টির দিকে সদয় দৃষ্টি দেবেন। তারা অতিরিক্ত সময় দিলে এ ঘাটতি পূরণ করা যাবে। করোনার কারণে আমরা যদি এক-দুই মাস পিছিয়ে যাই, তাহলে হয়তো সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমাদের বিশেষ ড্রাইভ লাগবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয়, সেজন্যই আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সহায়তা চেয়েছে, আমরা সাপোর্ট করেছি। আসলে সবার তো প্রস্তুতি এক নয়। আবার শিক্ষার্থী সংখ্যাও এক নয়। তাই সবাই তো পারবে না। তবে আমাদের পরামর্শ থাকবে, ভবিষ্যতের জন্য যেন সবাই প্রস্তুতি নেয়।


সর্বশেষ সংবাদ