চাকরির বাজারে কম্পিউটার গ্রাজুয়েট

ঢাবি, জাবি ও যবিপ্রবির অবস্থান ড্যাফোডিলের নিচে

কম্পিউটার গ্রাজুয়েটদের চাকরি প্রাপ্তির হার
কম্পিউটার গ্রাজুয়েটদের চাকরি প্রাপ্তির হার

কয়েক বছর ধরে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান নিয়ে ট্রেসার স্টাডি করে আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তার ধারাবাহিকতায় দেশের নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের ওপর সর্বশেষ জরিপটি চালিয়েছে সংস্থাটি। ট্রেসার স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী, জরিপে অংশ নেয়া দেশের নয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে চাকরির বাজারে সবচেয়ে এগিয়ে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আর তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।

এডিবি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ: কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন ইন ২০১৮’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবদেনে বলা হয়েছে, গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের পর দেশে চাকরিপ্রাপ্তির সার্বিক হার ৪০ শতাংশ হলেও কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে এ হার ৭৭ শতাংশ।

গবেষণার অংশ হিসেবে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ২১৬ জন গ্র্যাজুয়েটের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। পাশাপাশি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ এবং ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) প্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছে গবেষকরা। সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে চাকরিদাতাদেরও।

জরিপের ফল বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভেদে কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হারে পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন গাজীপুরের আইইউটির কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটরা। ফলাফলে দেখা গেছে, এ ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৯২ দশমিক ৪ শতাংশ। তাদের ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশই বেসরকারি খাতে কর্মরত। বাকি ১ দশমিক ২ শতাংশ উদ্যোক্তা।

চাকরিপ্রাপ্তির হারে এর পরই আছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটরা। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৯১ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৩ শতাংশই বেসরকারি খাতে কর্মরত। সরকারি চাকরিতে গেছেন ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট। 

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের ৮৭ দশমিক ১ শতাংশই চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ গেছেন বেসরকারি ও ১ দশমিক ৬ শতাংশ সরকারি চাকরিতে।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়টির কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৩ শতাংশই বেসরকারি খাতে কর্মরত। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট।

পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত বেসরকারি আরেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৭৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে ৯৬ দশমিক ৩ শতাংশই বেসরকারি খাতে কর্মরত। ১ দশমিক ৯ শতাংশ চাকরি করছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে।

ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের ৭২ দশমিক ৯ শতাংশই চাকরিতে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৩ শতাংশই গেছেন বেসরকারি খাতে। সরকারি চাকরিতে গেছেন ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

তালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ইনস্টিটিউটটির গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৬৬ দশমিক ৯ শতাংশ। তাদের ৮০ দশমিক ৩ শতাংশ গেছেন বেসরকারি চাকরিতে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছেন ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট।

দেশের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হারে অষ্টম স্থানে। এ ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৬৫ শতাংশ। চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে বেসরকারি খাতে গেছেন ৮৬ দশমিক ৩ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

জরিপের আওতায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সর্বশেষ অবস্থান যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এ ইনস্টিটিউটের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরিপ্রাপ্তির হার ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ। চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গেছেন ৭৩ দশমিক ৫ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মাসিক মোট ২৫ হাজার ৩৪২ থেকে ৫১ হাজার ৯৩৮ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করছেন এসব কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট। তবে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের পর অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্নের তিন মাসের মধ্যে চাকরি পাচ্ছেন মাত্র ২০ দশমিক ৬ শতাংশ কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট। চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে আবার পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে আছে নারীরা। কম্পিউটার গ্র্যাজুয়েট নারীদের ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ চাকরিতে প্রবেশ করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ