করোনা: কাজে আসছেন না গবেষকরা, দায়সারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

করোনা নিয়ে গবেষণা করছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা
করোনা নিয়ে গবেষণা করছেন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা  © সংগৃহীত

কভিড-১৯ ও এর ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় উঠে পড়ে লেগেছে বিশ্বের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এজন্য সেখানাকার গবেষকরা ল্যাবে ব্যস্ত সময় পার করছেন। যদিও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্কুল-কলেজের মতো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফাঁকা পড়ে রয়েছে ল্যাব। ছুটি কাটাচ্ছেন গবেষকরা।

জানা যায়, উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পের (হেকেপ) অধীন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন মানসম্মত ল্যাব প্রতিষ্ঠা কেরা হয়। বিশেষ করে বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও মেডিসিন অনুষদের ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা নিয়ে গবেষণা ও এর সনাক্তকরণে এসব ল্যাব ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। উৎসাহ দেখাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। 

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ঢাকা ‍বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বিভিন্ন ক্রান্তিকালে জাতির পাশে দাঁড়ানোর ইতিহাস রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। যদিও করোনা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির বাইরে তেমন কোনো  উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মানসম্মত অনেক ল্যাব অলস পড়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ল্যাব ব্যবহার করে করোনা বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব করোনা বিষয়ক একটি নিবন্ধে লিখেছেন, আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই টেস্ট করার সক্ষমতা আছে। নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে আরটি-পিসিআর। এই পদ্ধতিতে ভাইরাসের আরএনএকে ডিএনএতে রূপান্তর করে তারপর সেই ডিএনএকে পিসিআর করা হয়। গবেষণার কাজে আমরা নিয়মিত এসব টেকনিক ব্যবহার করি। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছি। আমি জানি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারে একই কাজ করা হয় বা করার সামর্থ্য আছে। এখন জাতির প্রয়োজনে এগুলোকে ব্যবহার করতে হবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের সামর্থ্যগুলো এখনো সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য সমন্বয় করা হয়নি। আইইডিসিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস একা এই ভয়ংকর বিপদ সামলানোর দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে রেখেছে। অথচ চেষ্টা করলে দেশের এবং দেশের বাইরের বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের আমরা এই বিপদের সময় কাজে লাগাতে পারি। 

সেখানে তিনি আরো উল্লেখ করেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে মলিক্যুলার বায়োলজি বিষয়ে কাজ করার প্রায় সব রকমের যন্ত্রপাতি রয়েছে।  সেগুলো পৃথিবীর বড় বড় গবেষণাগারের সঙ্গে তুলনীয়। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য যে কেমিক্যাল ও রিএজেন্ট দরকার, তার একটা সংস্থান করতে পারলে আমরা এদের কাজে লাগাতে পারব।

অন্যদিকে শিক্ষকদের দাবি করোনা নিয়ে গবেষণা করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ও নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় গবেষণা সম্ভভ হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের এসএম আব্দুর রহমান বলেন, করোনা নিয়ে কাজ করার অনেক ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থার সক্ষমতা আমাদের ল্যাবগুলোতে নেই। তারপরও আমরা বেশকিছু চিন্তা করছি।

জিনপ্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, আমাদের করোনা নিয়ে গবেষণার জন্য দুটি বিষয়ের ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অর্থের। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এ বিষয়ে গবেষণা সম্ভভ হচ্ছে না। আর করোনার স্যাম্পল না থাকাটাও একটি সমস্যা।

তবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন হলে প্রস্তাবনার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় করোনা নিয়ে গবেষণা করার জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাবনা দেয়,  সে বিষয়ে তাদের সহায়তা দেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ