আবরারের মতো আর কেউ যেন সাহস করে কথা না বলে!

বুয়েট কর্তৃপক্ষ নতুন সব নীতিমালা জারি করেছেন তাতে বলা হয়েছে যে, ‘বুয়েটে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করলে সর্বোচ্চ সাজা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার। এতে আরও বলা হয়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত থাকলে, রাজনৈতিক পদে থাকলে, রাজনীতি করতে কাউকে উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করলে অপরাধ সাপেক্ষে শাস্তি সতর্কতা, জরিমানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো মেয়াদে বহিষ্কার’। এই নীতিমালা ঘোষণার প্রেক্ষাপট আমাদের সকলের জানা আছে তবুও স্মরণ করা দরকার।

গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। তাকে হত্যা করার পেছনে একমাত্র না হলেও অন্যতম কারণ ছিলো ফেসবুকে দেয়া তাঁর পোস্ট, এই পোস্টকে আর যাই হোক অরাজনৈতিক বলা যাবেনা।

গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) যে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে তার আওতায় আবরারের মতো কেউ আগামীতে যদি এই ধরণের পোস্ট দেয় তাঁকে কী “পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িত” থাকা বলেই বিবেচনা করা হবে? তার মানে কি তাহলে এই দাঁড়ালো যে আবরারের মতো আর কেউ কোনও দিন যেন সাহস করে কথা না বলে সেই ব্যবস্থাই প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই প্রতিষ্ঠা করা হল? বলতে পারেন বুয়েটে তো রাজনীতি করা তো আগে থেকেই নিষিদ্ধ।

২০০২ সালের ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীদের গোলাগুলিতে সাবেকুন নাহার সনির মৃত্যুর পরে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলো ক্যাম্পাসে। সেই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়নি। তারপরেও ছাত্র রাজনীতি হয়েছে। কিন্ত তাঁর চেয়েও ভয়াবহ যা হয়েছে তা হল হলে হলে টর্চার সেল হয়েছে।

কিন্ত আবরার হত্যাকান্ড ছাত্রলীগের যে ভয়াবহ দিককে তুলে ধরেছিল-কেবল বুয়েটে নয়, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হল না; বুয়েট প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতার দায় কাউকে নিতে হলোনা।

file (2)উপাচার্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের থেকে হল কর্তৃপক্ষ নিলেন না – সবাই থাকলেন বহাল তবিয়তে। কিন্ত খড়গটা নামলো ‘ছাত্র রাজনীতির’ ওপরে। এই পদক্ষেপে চমতকারিত্ব আছে, এর পক্ষে-বিপক্ষে অক্টোবর মাস থেকেই অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্ত এই নীতিমালার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করা যাতে পারে ১৯৬২ সালের বুয়েট অধ্যাদেশের ১৬ নং ধারা কি তাহলে থাকলো না? ১৯৬২ সালের বুয়েট অধ্যাদেশের ১৬ নং ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ, হল ছাত্রসংসদ ছাড়া ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের লিখিত অনুমোদন না নিয়ে কোনো ধরনের ছাত্রসংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলা হয়েছে।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের হাতে এই অনুমোদনের কোনও সুযোগ থাকলো কী? আগামীতে যদি কোনোদিন বুয়েটের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয় তখন এই ধারা প্রয়োগের নামে কেবল পছন্দের সংগঠনগুলোকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার পথ তৈরি করা হয়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবেনা; অন্যদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ না হলেও ‘পরোক্ষ রাজনীতির’ অভিযোগ তো আনা যাবেই। আগামীর কথা না আগামীতে হবে কিন্ত এখন যে বিরাজনীতিকরণের পথে একটা বড় ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হল তার কী করবেন?

আজ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় আগে কিছু প্রশ্ন তুলেছিলাম – “বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বা হচ্ছে? তারা রাজনীতিতে অংশ না নিক, সেটাই কি কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে? তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কি এখন অপরাধ বলে গণ্য করা হচ্ছে?” (‘তরুণদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা কি অপরাধ?’ বুয়েটে এখন তা আইন করেই ‘অপরাধ’ ঘোষনা করা হল। এর পরে কোথায়?


সর্বশেষ সংবাদ