সেই বৃদ্ধের ছেলে ঢাবি ছাত্র নয়, দোকানকর্মী

শাহেব আলী মাদবর
শাহেব আলী মাদবর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেকে খুঁজতে আসা সেই বৃদ্ধের ছেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চার বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বলে বাড়ি ছেড়ে আসা বৃদ্ধের ছেলেটি ঢাকার জুরাইনে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করছেন। আজ বুধবার স্বয়ং বৃদ্ধের ছেলে মুহাম্মদ রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে তাকে খুঁজতে বাবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার খবর জানেনই না দাবি তার।

বুধবার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে ‘ঢাবিতে পড়তে ঘর ছাড়েন ছেলে, খুঁজতে এসে নিঃস্ব বাবা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বরিশালের হিজলা উপজেলার বৃদ্ধ শাহেব আলী মাদবার ডাকসু নেতা ও ঢাবি প্রক্টরের কাছে দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা বলে চার বছর আগে ঘর ছাড়েন ছেলে। মূলত তাকে (ছেলে) খুঁজতেই ঢাকায় আসেন তিনি। আসার সময় সঙ্গে আনেন ছেলে রাসেলের ছবি এবং দুই হাজার টাকা। কিন্তু এসে তিনি নিজেই সর্বস্বান্ত হলেন। 

এরপর ওই বৃদ্ধের ছেলের খোঁজে অনুসন্ধান চালাতে থাকেন ঢাবি প্রতিবেদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিজলা উপজেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল হোসাইনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে উনার সাথে পরিচিত নয় কিন্তু উনি আমার পাশের ইউনিয়নের আমি এতটুকু জানি। আপনি যদি আরো তথ্য জানতে চান তাহলে এলাকার মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করুন।

হিজলা ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার চুন্নু মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে কথা যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, শাহেব আলী মাদবর হলো আমার এলাকার মেহমান, উনি আমার এলাকার ভোটার নয়, মেয়ের সাথে থাকে। এতটুকু আমি জানি। আপনি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে তার শ্যালকের কাছ থেকে আরো তথ্য জানতে পারবেন।

এরপর যোগাযোগ করা হয় বৃদ্ধের শ্যালক জাকির হোসাইনের সঙ্গে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার দুলাভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রী হলো আমার বোন। এর আগেও তিনি একটি বিয়ে করেছিলেন এবং ওই স্ত্রী এখনো বেঁচে আছে। তবে গত দুই বছর আগে আমার বোন (দ্বিতীয় স্ত্রী) মারা গেছেন। আমার দুলাভাইয়ের অভ্যাস খারাপ। তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় এরকম আচরণ করেন; যা আমাদের সমাজিক মর্যাদাকে ভুলুণ্ঠিত করে।

তার সঙ্গে ছেলে রাসেলের কোন যোগাযোগ হয় কি-না জানতে চাইলে জাকির বলেন, আমার সঙ্গে তার তেমন যোগাযোগ নাই। আপনি চাইলে আমার ভাগনির (দ্বিতীয় স্ত্রীর মেয়ে শাহিনুর) সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

এরপর শাহিনুরের সাথে যোগাযোগ করে হলে তিনি জানান, আমার আব্বার প্রথম স্ত্রীর দুটি সন্তান। একটি হলো মেয়ে আরেকটি হলো ছেলে। মেয়ে নারায়ণগঞ্জ থাকে, ছেলে কোন পড়ালেখা করে না। সে জুরাইনে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে। তার নাম হলো ‍মুহাম্মদ রাসেল।

রাসেলর সাথে বাবার বা বোনের কোন যোগাযোগ হয় হয় কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসেলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় এবং আব্বাও কথা বলেন।

এ সময় বাবার দাবি ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা বলে চার বছর আগে ঘর ছেড়ে আসেন ছেলে’- সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহিনুর বলেন, এটা আমার বাবার চিরাচরিত অভ্যাস। তিনি দারোয়ান হিসাবে একটি বাড়িতে কাজ করেন। নারায়ণগঞ্জে তার ১ম স্ত্রীর মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবেন বলে ওই কাজ থেকে তিন দিনের ছুটি নেন এবং আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকাও নেন। পরবর্তীতে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে বাবার এ খবর শুনে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি।

এছাড়া বাবা শাহেব আলী মাদবর বিভিন্ন সময় নেশা করেন বলে প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন মেয়ে শাহিনুর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছেলে রাসেল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, মঙ্গলবার বাবা শাহেব আলী মাদবার তার খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার খবরটি তিনি জানেন না। আজ বুধবার প্রতিবেদক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি প্রতিবেদককে জানান, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না। ঢাকার জুরাইনের একটি কাপড়ের দোকানে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। গত কয়েক মাস ধরে ব্যস্ততার কারণে বাবার সঙ্গে তার যোগাযোগ হচ্ছে না। তবে এই সময় কোন মতে ৪ বা ৫ বছর নয়।

তিনি আরও জানান, বাবার সঙ্গে যোগাযোগ না করা আমার ভুল হয়েছে। আমি এখন তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলব এবং নিয়মিত তার খোঁজখবর রাখব।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ছেলের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শাহেব আলী মাদবর। খুঁজতে খুঁজতে শামসুন্নাহার হলের সামনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় ওই এলাকয় থাকা শহীদুল্লাহ হল সংসদের বহিরাঙ্গণ ক্রীড়া সম্পাদক ইমরান বৃদ্ধকে উদ্ধার করে ডাকসু ভবনে নিয়ে যান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বরিশালের হিজলা উপজেলার রাসেল নামে কোন সন্তান পড়ে কিনা তা যাচাই করে দেখেন প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। কিন্তু এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে বরিশালে পাঠানো হয়।

পড়ুন: ঢাবিতে পড়তে ঘর ছাড়েন ছেলে, খুঁজতে এসে নিঃস্ব বাবা


সর্বশেষ সংবাদ