আইন কেড়ে নিল রোহিঙ্গা তরুণীর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন!

সময়টা ১৯৯২ সাল। প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল রহিমা আক্তারের পরিবার। জন্ম-বেড়ে উঠা সবই হয়েছে বাংলাদেশে। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে মেয়েটি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তবে আইন তার পিছু ছাড়েনি। নিয়মের বেড়াজালে পড়ে সে এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তার ছাত্রত্ব স্থগিত করেছে। যেহেতু নিয়ম অনুসারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সন্তানরা বৈধভাবে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের পড়তে পারে না, তাই তার বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যপক হৈচৈ চলছে।

সূত্রের তথ্য, ইন্টারনেটে আন্তর্জাতিক একটি বার্তা সংস্থায় প্রচারিত দেড় মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী ওরফে খুশির উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে একটি এনজিওর কর্মী হিসেবে তার স্বদেশী রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নিচ্ছে। ভিডিওটিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশির পরিবার একইভাবে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে।

সেখানে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সন্তানরা বৈধভাবে বাংলাদেশের কোন স্কুলে পড়তে পারে না। তাই রোহিঙ্গা পরিচয় লুকিয়ে কক্সবাজারের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল রোহিঙ্গা মেয়ে খুশি।

সূত্রে প্রকাশ, রোহিঙ্গা নারী খুশি কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি ও কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। কক্সবাজারের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এলএলবি অনার্স পড়ছেন তিনি। এই রোহিঙ্গা তরুণী রহিমা আকতার ওরফে রাহী খুশি, বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সংগঠন বন্ধুসভার জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক। এছাড়াও উইমেন লার্নিং সেন্টার, মার্কিন ফাউন্ডেশন কক্সবাজার সরকারী কলেজের স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সম্প্রতি বার্তা সংস্থা ডয়চে ভেলে খুশির দেড় মিনিটের ভিডিওটি ইন্টারনেটে প্রচার করলে তার রোহিঙ্গা পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। তার সহপাঠীরাও রীতিমতো বিস্মিত খুশি একজন রোহিঙ্গা এবং সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। স্থানীয় রোহিঙ্গা হয়েও খুশির মা মিনারা বেগমসহ তার পরিবারের সবাই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও আশ্রিত রোহিঙ্গা হিসেবে ত্রাণ সুবিধা ভোগ করছে বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করলে তাদের অবস্থাদি দেখে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও প্রত্যাবাসন না হয়ে এদেশে থেকে যাবার বিভিন্ন পরিকল্পনা করে থাকে বলে জানা গেছে। তারা শহরে আসলে বাংলাদেশী পোশাক তথা শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ আর ক্যাম্পে গেলে থামিসহ ওপারের (বার্মা) পোশাক পরিধান করে থাকে রোহিঙ্গা নারী মিনারা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

ফেসবুকে সুজন নামে একজন লিখেছেন, আমি আজ জানতে পেরেছি যে খুশি একজন রোহিঙ্গা। এতদিন জানতাম না বিষয়টি। তাহমিদুল লিখেছেন, ও মাই গড! এই মেয়েটা রোহিঙ্গা! সে বিবিসি মিডিয়া নামে একটা এনজিওতে চাকরি করে সম্ভবত। কয়দিন আগে ছিনতাইকারী পিটিয়ে পেপারে হেডলাইন হয়েছিল। আরিফ শিকদার বাপ্পী লিখেছেন, তথ্যবহুল আলোচিত এটি, আশা করি এর গুণে প্রশংশিত না হয়ে এখনি প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। কক্সবাজারসহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যে লিপ্ত না হয়ে দেশের স্বার্থে কঠোর হওয়া দরকার।

অভিযোগ রয়েছে, কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রামের হালি শহরে শত শত রোহিঙ্গা নিজেদের বাংলাদেশী দাবি করে বসবাস করে যাচ্ছে। এ ধরনের রোহিঙ্গা এক নারীর ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সুরক্ষিত সার্ভারে থাকার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি আরও ৪৬টি ভুয়া এনআইডির তথ্য ইসির সার্ভারে পেয়েছে বলে জানা গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ