আটকে গেল শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা

শিক্ষকদের আপত্তির মুখে আটকে গেল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে অভিন্ন নীতিমালা। মন্ত্রণালয়ের কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধি না রাখায় আপত্তি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে অভিন্ন নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরবর্তী বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি রাখা হবে এমন সিদ্ধান্ত হলেও তা মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আগে প্রবীণ শিক্ষকদের দিয়ে খসড়া নীতিমালা যাচাই-বাছাই করা হোক। তারপর মন্ত্রণালয়ে সেটি নিয়ে বৈঠক হবে। 

জানা গেছে, রবিবার মন্ত্রণালয়ের সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি না রাখায় বিভিন্ন শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়ে আরেকটি সভা করে সিদ্ধান্ত হয়। সেখানেই এ অভিন্ন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন যুগ্ম সচিব জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন খসড়া নীতিমালায় প্রবীণ শিক্ষক, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, শিক্ষক সমিতি ও ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দের মতামত নিয়েই তৈরি করেছেন। এখন এ খসড়া যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। কিন্তু শিক্ষক সমিতির নেতারা অভিযোগ করেছেন, চূড়ান্ত কমিটিতে তাদের রাখা হয়নি। তাদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে শিক্ষক প্রতিনিধি রেখেই আগামী বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ের ওই কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের পাঠানো এ বিবৃতির পক্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার একজন শিক্ষক স্বাক্ষর করেছেন বলে দাবি করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত অভিন্ন নীতিমালা সম্পর্কিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বরেণ্য শিক্ষকদের নিয়ে প্রথমে একটি সাব-কমিটি করে বৃহত্তর আঙ্গিকে সুপারিশ গ্রহণ করা। সেই কমিটির সুপারিশমালা নিয়ে পুনরায় শিক্ষকদের প্রতিনিধি নিয়েই মন্ত্রীকে সমন্বয়কের ভূমিকায় রেখে সিদ্ধান্তে আসা। 

এ ব্যাপারে কামরুল হাসান মামুন বলেন, শুধু কমিটিতে রাখলেই হবে না। তারা বলেছেন, বরণ্যে শিক্ষকদের দিয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করান। যারা খসড়া নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি সুপারিশ দেবে। সেই সুপারিশগুলো নিয়ে পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষক প্রতিনিধি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে এ ব্যাপারে অধ্যাপক মামুন বলেন, আগে সাব-কমিটি গঠন হোক। তারপর দেখা যাবে কী হয়। 

জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অভিন্ন এ নীতিমালা করার উদ্যোগ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ নীতিমালা চূড়ান্ত করতে রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সভা হয়। সেখানে অভিন্ন শিক্ষক নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও তা আবার আটকে যায়। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও ভিসিদের আপত্তির মুখেই দীর্ঘদিন আটকে ছিল নীতিমালাটি। এটি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দৌরাত্ম্য কমবে। একই সঙ্গে পদোন্নতিতে জটিলতা কমার পাশাপাশি লেজুড়ভিত্তিক শিক্ষক রাজনীতিতেও লাগাম টানা যাবে। ইউজিসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের সমন্বিত কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানও সমান নয় এবং ডিগ্রিধারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৈষম্য রয়েছে। এ বৈষম্য দূর করতেই এ নীতিমালা করা হয়েছে। ইউজিসি উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং বিভিন্ন মহলের মতামত নিয়েই এ খসড়া নীতিমালা তৈরি করে।


সর্বশেষ সংবাদ