দাবি আদায়ে এবার অনশনে বসছেন উপাচার্য!

  © এইসময়

এবার জবরদখল তুলতে অনশনে বসছেন খোদ উপাচার্য। রবীন্দ্রনাথই প্রথম তাঁকে ‘মহাত্মা’ সম্বোধন করেছিলেন। আর গান্ধীজীই প্রথম তাঁকে ‘গুরুদেব’ বলে ডেকেছিলেন। সেই ঐতিহ্যকে মনে রেখেই হয়তো দখল উচ্ছেদে এই অভিনব উদ্যোগ দেখা গেল শান্তিনিকেতনে।

অনশন নিয়ে বিশ্বভারতীর ব্যাখ্যা, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে সকল শান্তিনিকেতনপ্রিয় মানুষের সহযোগিতা প্রার্থনা করে অনশনে বসছে বিশ্বভারতী পরিবার। কিন্তু শান্তিনিকেতনে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, জবরদখল হয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে এ বার অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

সোমবার শান্তিনিকেতন রোডে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেটের পাশে ১২ ঘণ্টা অনশনে বসবেন উপাচার্য, অধ্যাপক-সহ কর্মকর্তা এবং কর্মীরা। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ কর্মকর্তা অনির্বাণ সরকার বলেন, ‘সোমবার ১২ ঘণ্টা অনশনে বসবেন উপাচার্য-সহ সমগ্র বিশ্বভারতী পরিবার। কারণ আমরা চাই, বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যায়ন। তার জন্য যাঁরা এই প্রতিষ্ঠানকে ভালোবাসেন, তাঁদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে এই অনশন পর্ব।’

শান্তিনিকেতন রোডের উপর বিশ্বভারতীর আশ্রম এলাকার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে কবিগুরু হস্তশিল্প মার্কেট। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে পৌষ মেলার মাঠ লাগোয়া রাস্তার পাশে সারি দিয়ে হস্তশিল্পী ব্যবসায়ীদের দোকান ও মার্কেট গড়ে উঠেছে গত ২০ বছরে। ওই এলাকা জুড়ে ৭০টির বেশি দোকান রয়েছে।

গত জুন মাসে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রথম লিখিত নোটিশ দেয় ওই দোকানদারদের। তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় মাইকিং করে কর্তৃপক্ষ। এর পর এখানেই না থেমে বিশ্বভারতীর তরফে সৌন্দর্যায়ন বার্তা দিয়ে মৌন মিছিল করা হয়, যাতে জবরদখলকারীরা তাঁদের জায়গা ছেড়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উপাচার্য একবারের জন্য দখলদারদের বলপ্রয়োগ করে উচ্ছেদের কথা ভাবেননি। কর্তৃপক্ষের তরফে এই মার্কেটের ব্যবসায়ীদের অন্যত্র পুনর্বাসন দেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও সায় মেলেনি ব্যবসায়ীদের। তবে হতাশ না হয়ে সেই গান্ধীগিরিকেই আশ্রয় করেই নয়া পদক্ষেপ করছেন উপাচার্য।

জবরদখলমুক্ত করতে ১২ঘণ্টা অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্য-সহ বিশ্বভারতী পরিবার। সোমবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত চলবে এই অনশন। থাকছেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক এবং কর্মকর্তাও। অনশনে বসার আগে নিয়ম মেনে ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন থানা এবং বিশ্বভারতী পিয়ারসন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লিখিতভাবে জানিয়েছে। শান্তিনিকেতন রোডের পাশে মেলার গেটের সামনে মঞ্চ বাঁধার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

তবে এই অনশনের বসার নেপথ্য কারণ নিয়েও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচ-কানাচে। ২০১৫ সালে ন্যাক টিম বিশ্বভারতী পরিদর্শন করেছিল। সেই সময় বিশ্বভারতী বি প্লাস গ্রেড পায়। যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, ক্যাম্পাস সৌন্দর্যায়নে যে নম্বর থাকে, তাতে বিশ্বভারতী শূন্য পেয়েছিল।

ফের ২০২০ সালে পরিদর্শনে আসবে ন্যাক। তার আগে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় দপ্তর লাগোয়া এই জবরদখল সরাতে না পারলে, বাকি সব ঠিক থাকলেও ফের সৌন্দর্যায়নে নম্বর কাটা যেতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের। জবরদখল তুলতে তাই উঠেপড়ে লেগেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অনশনের রাস্তা নিলে বিতর্ক থাকবে না। বরং ভাবমূর্তি ভালো হবে, তাই এই পন্থা।

এর আগে বিশ্বভারতীতে অনশনে বসেছিলেন উপাচার্য রজতকান্ত রায়। সে বার অবশ্য ঘরের দ্বন্দ্ব সামাল দিতে ছাতিমতলায় গীতবিতান নিয়ে অনশনে বসেছিলেন তিনি। কারণ সেই সময় বিশ্বভারতীর কর্মী-অধ্যাপক-আধিকারিকরা মিলে রজতকান্ত রায়ের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনে বসেছিলেন। তারই পাল্টা হিসেবে অনশনে বসেন তৎকালীন উপাচার্য।

কিন্ত সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে জবরদখল হটাতে খোদ উপাচার্যর অনশনে বসার ঘটনার এই প্রথম সাক্ষী থাকতে চলেছে শান্তিনিকেতন। এর আগেও বিশ্বভারতীর সীমানা প্রাচীর দেওয়ার সময় জবরদখল হটাতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছিল বিশ্বভারতীকে। বল প্রয়োগও করতে হয়। কিন্তু এভাবে অনশনে বসা নজিরবিহীনই বটে! খবর: এইসময়।


সর্বশেষ সংবাদ