সংসদে রুমিন ফারহানা, বিদেশি শিক্ষক আনার ঘোর বিরোধিতা

  © ফাইল ফটো

শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট বক্তৃতায় এ কথা জানানোর পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। এবার বিএনপির একমাত্র মহিলা সাংসদ রুমিন ফারহানাও এর সমালোচনায় করেছেন।

তিনি বলেন, জাপানের উদাহরণ দিয়ে এই বাজেটে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি সরকার এক দশক ক্ষমতায় থাকার পরও মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি করতে পারে না। বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বলতে হয়। তখন সেই সরকার আর ক্ষমতা থাকার নৈতিক অধিকার রাখে না।

রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে প্রস্তাবিত দায়যুক্ত ব্যয় ব্যতিত অন্যান্য ব্যয় সম্পর্কিত মঞ্জুরি দাবির উপর আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেত্রী বলেন, টাইমস হায়ার অ্যাডুকেশনের জরিপ বলা হয়েছে, ভারতের ৪৯টি, নেপাল ও শ্রীলংকার একটি, পাকিস্তানের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে জায়গা করতে পারেনি।

জিপিএ-৫ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নকল ও প্রশ্নফাঁসের প্রবণতায় জিপিএ-৫ বেড়েছে সত্য। কিন্তু শিক্ষার সার্বিক মানের উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। জিপিএ-৫ এখন আমাদের শিক্ষার স্ট্যান্ডার্ড।

শিক্ষার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রয়োজনে বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার বিষয়টি তুলে আনেন। বাজেট বক্তৃতায় ১৮০০ শতকের (শাসন আমল ১৮৬৮ থেকে ১৯১২) জাপানের সম্রাট মেইজির উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সে সময় পাশ্চাত্যের শিক্ষক এনে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করা হয়, যা পরে জাপানকে জ্ঞান–বিজ্ঞানে একটি সফল রাজ্যে পরিণত করে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আঠারো শতকের শেষার্ধে মেইজি পুনর্গঠন শুরুর আগে জাপান ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানে একটি পশ্চাৎপদ দেশ। সম্রাট মেইজি জাপানিজদের, এমনকি রাজপুত্রকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় পাঠিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও প্রযুক্তিজ্ঞান আহরণ করার তাগিদ দেন। সম্রাট মেইজি বুঝতে পারলেন, জাপানে ছাত্রের অভাব নেই। অভাব আছে উপযুক্ত শিক্ষকের। তাই তিনি পাশ্চাত্য দেশসমূহ থেকে বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কয়েক হাজার শিক্ষককে জাপান নিয়ে এলেন জাপানের শিক্ষাব্যবস্থাকে সময় উপযোগী করে তোলার জন্য। এরূপ প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নীতির কারণে জাপান শুধু পশ্চিমাদের সমকক্ষ হয়েই থাকেনি, বরং সারা বিশ্বে সবার আগে শতভাগ শিক্ষিতের দেশ হওয়ার গৌরব লাভ করেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। দক্ষ জনশক্তি তৈরির উদ্দেশ্যে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, গুণগত উৎকর্ষ সাধন ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। আমরা মনে করি, সম্রাট মেইজিকে অনুসরণ করার সময় আমাদেরও এসেছে।’

এদিকে অর্থমন্ত্রী বিদেশ থেকে শিক্ষক আনার কথা বললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এটা শুধুই একটি উপমা। বিদেশ থেকে শিক্ষক এনে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে দেশীয় শিক্ষকদের কাজের সুযোগ তাঁরা নষ্ট করতে চান না।


সর্বশেষ সংবাদ