রাস্তায় পড়ে থাকা তিন ব্যক্তি করোনায় মারা যাননি

রাস্তায় পড়ে থাকা তিন ব্যক্তি করোনায় মারা যাননি
রাস্তায় পড়ে থাকা তিন ব্যক্তি করোনায় মারা যাননি

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মারা যাওয়া কয়েকজনের লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। রাস্তায় পড়ে থাকা ওইসব ব্যক্তিদের ভাইরাল হওয়া ছবি শেয়ার দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা সন্দেহে এসব লাশের কাছে কেউ ঘেঁষতে চায়নি। তাদের কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত করার পর জানা গেছে, মৃত্যুর পূর্বে তাদের মাঝে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ-উপসর্গ পাওয়া যায়নি। হিটস্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং অন্য কারণে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে পুলিশ ও মৃতদের আত্মীয় স্বজনরা জানান।

কিন্তু ফেসবুকে যে কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেগুলোতে দেখা যাচ্ছে একেকজন ব্যক্তির দেহ রাস্তায় পড়ে আছে। বেশিরভাগ পোস্টে পড়ে থাকা ব্যক্তির কোনো পরিচয় নেই। এসব পোস্টে দাবি করা হয়েছে, করোনা সন্দেহে এসব লাশের কাছে কেউ ঘেঁষতে চায়নি। এসব ছবির ব্যক্তিদের পরিচয় জানার চেষ্টার করে ৩ জন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছে। এজন্য কোনো ক্ষেত্রে নিহতদের স্বজন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছি আমরা। নিচে ৩ জনের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো-

এই তিনজন ব্যক্তির মধ্যে দুইজনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে হিটস্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের কথা চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। একইসাথে তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন, কভিড-১৯ এর যেসব প্রাথমিক উপসর্গ থাকে সেগুলোর কিছুই তাদের মধ্যে গত কয়েকদিনে ছিলো না। এবং একজনের লাশের ময়নাদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া যাওয়ায় কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি। তবেও প্রাথমিক ধারণা, তিনিও হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন।

যদিও কোনো নিহতেরই কভিড-১৯ এর পরীক্ষা করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন পুলিশ। তিনটি ক্ষেত্রেই পুলিশ জানিয়েছে, লাশ পড়ে থাকার সময় আশপাশে থাকা মানুষজন সেটির কাছে ঘেঁষতে চাননি আতঙ্কের কারণে।

রাস্তায় পড়ে থাকা কালো শার্ট/প্যান্ট পরিহিত ব্যক্তি সেলিম উদ্দিন। তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের রহমত আলীর ছেলে। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার জিরাত শার্ট লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার এসিস্টেন্ট সার্চেন্ডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

সেলিম তার ভাতিজা (স্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে) রায়হান মোস্তফার সাথে নগরীর ঈদগাহ কাঁচারাস্তা এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন। রায়হান জানান, সোমবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হন। জগিং করতে করতে যাচ্ছিলেন তিনি। টাইগার পাস পর্যন্ত গিয়ে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার সময় হঠাৎ তিনি রাস্তায় গেলে ওখানেই উপস্থিত থাকা তার একজন কলিগ রায়হানকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানান। এরপর রায়হান এবং ওই কলিগ মিলে তাকে পাশের একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান তিনি মারা গেছেন।

রায়হান বলেন, ডাক্তাররা জানিয়েছেন হিটস্ট্রোকে তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। একই সাথে তিনি জানিয়েছেন, দুই বছর আগে সেলিমের হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। তবে তা খুব গুরুত্বর ছিল না। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে তিনি পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন বলেও জানান রায়হান মোস্তফা।

হাসপাতাল থেকে লাশ নেয়ার আগে স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করেছিলেন রায়হান।

 

রাস্তায় পড়ে থাকা চেকের শার্ট ও লুঙ্গি পরিহিত ব্যক্তি প্রফুল্ল দাশ। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা চা বাগান এলাকায়। নগরের ষোলশহর এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। রিকশা নিয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে নগরের অলি খাঁ মসজিদ মোড়ে রাস্তায় পড়ে যান তিনি।

চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রিয়াজ চৌধুরী জানান, সোমবার সকালে খবর পেয়ে কয়েকজন লোক প্রফুল্লের লাশ থানায় নিয়ে আসেন। প্রথমে কেউ লাশের কাছে যেতে যাচ্ছিলো না ভয়ে। পরে কয়েকজন সাহস করে যান। পরে পরে পুলিশ তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। হৃদ্‌রোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও সাদা লুঙ্গি পরিহিত বৃদ্ধ ব্যক্তি নাসির উদ্দিন। ঢাকার জুরাইন এলাকায় রবিবার দিবাগত রাতে দেড়টার দিকে রাস্তায় তার লাশ পাওয়া যায়। তিনি ওই এলাকায় ফুটপাতে তরমুজ বিক্রি করতেন। রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় তার কাছে কেউ যাচ্ছিল না। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ জানতে ঢাকা মেডিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। যদিও ফলাফল জানা যায়নি মঙ্গলবার পর্যন্ত।

শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক জামাল হোসেন জানিয়েছেন, ফেসবুকে ছবি দেখে কুমিল্লা থেকে তার স্ত্রী শিউল বেগম ও স্বজনরা এসে লাশ বুঝে নিয়েছেন। নাসির জুরাইনের আলমবাগ পাকা মসজিদের পাশে থাকতেন। তার বাবার নাম আমির উদ্দিন। স্বজনদের বরাতে জামাল হোসেন জানিয়েছেন, নাসির আগে একবার স্ট্রোক করেছিলেন এবং এরপর থেকে শারিরীকভাবে খুবই দুর্বল ছিলেন। গতকাল সোমবার স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল থেকে লাশ নিয়ে জুরাইন কবরস্থানে দাফ করেছেন বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সূত্র: বিডি ফ্যাক্টচেক


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence